আইন সংস্কার আন্দোলন: ইন্দোনেশিয়ায় আটক ৫০০

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:১২

ডয়চে ভেলে

বিয়ের আগে যৌনতা নিষিদ্ধ করে একটি আইনের খসড়া বাতিলের দাবিতে ইন্দোনেশিয়া ব্যাপী বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের পর পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ৷

জাকার্তায় রাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দাঙ্গা পুলিশের সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার তাদের আটক করা হয় বলে জাকার্তা পুলিশের মুখপাত্র আরগো ইউউনো জানিয়েছেন৷

মঙ্গলবার এএফপিকে তিনি বলেন, ‘‘গতকালের বিক্ষোভ থেকে এ পর্যন্ত আমরা ৫১৯ জন দাঙ্গাকারীকে আটক করেছি৷ তারা শিক্ষার্থী কিনা, এটা নিশ্চিত হতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷''

তবে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জাতীয় পুলিশের মুখপাত্র দেদি প্রসেতিওর বরাতে জানিয়েছে, সংঘর্ষের পর পুলিশ ৬৪৯ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে৷

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ায় বিয়ের আগে যৌনতা নিষিদ্ধ করাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে নতুন বিধিবিধান যুক্ত করে একটি আইনের খসড়া তৈরি করে দেশটির সরকার৷ এই খসড়া বাতিলের দাবিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটির বিভিন্ন শহরে আন্দোলন শুরু হয়েছে৷

এই আন্দোলনের সময় সংঘর্ষে দুইজন শিক্ষার্থী নিহত এবং কয়েকশ' মানুষ আহত হয়েছে৷ সুলাওসি দ্বীপে গত সপ্তাহে দাঙ্গায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ১৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, যদিও এর আগে পুলিশ এই ঘটনার দায় অস্বীকার করেছিল৷

১৯৯৮ সালে সুহার্তোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর এবারের এই বিক্ষোভকে অন্যতম বড় আন্দোলন হিসেবে দেখা হচ্ছে৷

ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে শরিয়া আইন চালু থাকলেও অন্যান্য অঞ্চলে স্বাধীনতার পর থেকেই চালু রয়েছে সেক্যুলার আইন৷ তবে বেশ কিছুদিন ধরে দেশটির কট্টর ইসলামি দলগুলোর চাপের মুখে রয়েছে সরকার৷ ইসলামি দলগুলো দেশটির আইনে ধর্মের প্রভাব বাড়াতে চায়৷

নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্ক পরস্পরের সম্মতিতে হলেও সেটা দণ্ডনীয় হবে৷ এজন্য দেয়া হতে পারে এক বছরের কারাদণ্ড৷ এছাড়া বিয়ে না করে একসঙ্গে বসবাসের অপরাধেও দেয়া যাবে ছয় মাসের জেল৷ মেডিকেল ইমার্জেন্সি, অর্থাৎ শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাধ্য না হলে বা ধর্ষণের ফলে গর্ভধারণ না করলে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার কথাও রয়েছে প্রস্তাবিত আইনে৷

প্রস্তাবিত আইনে দেশটির দুর্নীতি প্রতিরোধ সংস্থাকে ইচ্ছে করে দুর্বল করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন বিক্ষোভকারীরা৷ এছাড়া প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, ধর্ম, রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের মতো প্রতীককে অসম্মান, কটূক্তি বা অপমানসূচক যে-কোনো কর্মকাণ্ডের জন্যও রাখা হয়েছে শাস্তির বিধান৷

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এসব আইন পাস হলে ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হবে৷ যৌনতার অধিকার নিয়েও সোচ্চার হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা৷ তাঁরা বলছেন, নাগরিকদের যৌন সম্পর্ক কেমন হবে, তা রাষ্ট্র বা সরকার নির্ধারণ করে দিতে পারে না৷ এই আইন পাস হলে নাগরিকদের ওপর খবরদারি করা আরো সহজ হবে বলেও আশঙ্কা তাঁদের৷

দেশটির আইনপ্রণেতারা অক্টোবরের শেষ দিকে আইনটি পাস করতে চাইলেও তীব্র আন্দোলনের ফলে এ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে৷

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত