পশ্চিমাদের অন্ধকার জগত এবং একটি পর্যালোচনা

প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৫০

ড. মো: কামরুজ্জামান
ড. মো: কামরুজ্জামান

দ্বিতীয় পর্ব
যৌনতার রুচিতে পশ্চিমারা পশুত্বকেও হার মানিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা একটি শিয়াল বা কুকুরের রুচিকেও ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ যে কাজটি একটি কুকুর করে না, সেই কাজটি এখন পশ্চিমারা করে! পশুর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাকে তারা সুসভ্যতা মনে করে। কুকুর, গাঁধা, ঘোড়া ইত্যাদির সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা তাদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। ইউরোপ-আমেরিকায় এটি রাষ্ট্রীয় আইনে স্বীকৃত বৈধতার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। শুধু তাই নয়, সেগুলো নিয়ে পর্ণোগ্রাফি তৈরি করে সেগুলো বাজারজাতকরণও বৈধ। যুক্তরাষ্ট্র, ফিনলান্ড, জার্মানি, মেক্সিকো, রোমানিয়া ও ডেনমার্কে এ জাতীয় সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। (সূত্র: যঃঃঢ়ং:/িি.িমড়ড়মষব.পড়স, ২০২০) এছাড়া লাশের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করাটাও পশ্চিমা বিশ্বের অন্যতম একটি নোংরা সভ্যতা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানাসহ চারটি রাজ্যে লাশের সাথে সেক্স করা আইনত বৈধ। (সূত্র: যঃঃঢ়ং://িি.িমড়ড়মষব.পড়স, ২০২০) পশ্চিমাবিশ্ব অবৈধ সন্তানের এক অবাধ মার্কেট।

আমেরিকার জৈনিক বিশেষজ্ঞ মুহানি বিশ্বকে চমকে দেয়ার মত এক তথ্য প্রকাশ করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন, শ্বেতাঙ্গ লোকদের মধ্যে অবৈধ সন্তানের ব্যাপকতা অনেক। তিনি বলেছেন, এই অবৈধ নোংরামি বন্ধ করা না হলে দ্রæতই আমেরিকার পরিবার প্রথা ধ্বংস হয়ে যাবে। টাইমস এর একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক অবৈধ সন্তানের সংখ্যা ২৫ লাখ। 


আমেরিকায় পারিবারিক প্রথা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। সেখানে প্রতি ১৮ সেকেন্ডে একজন স্ত্রী বা মহিলা মারা যায় স্বামীর হাতে। আমেরিকায় প্রায় ৮৫% বিবাহিত ব্যক্তি শারীরিক দিক থেকে সন্তান প্রজননে অক্ষম। (টাইমস ২০০০) আমেরিকান নারীরা মাতৃত্ব এবং ঘর সামলানোর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে বহু বছর আগেই। প্রতিবছর আমেরিকায় ২৫ লাখ অবিবাহিত মেয়ে মা হয়। আমেরিকাতে দৈনিক চার হাজার গর্ভপাত ঘটানো হয়। তার মধ্যে ৬৫ ভাগ মহিলাই অবিবাহিত। আমেরিকাকে এখন বিশে^ তালাকের রাজধানী বলা হয়ে থাকে। আমেরিকায় প্রতি এক মিনিটে গড়ে দুইটি করে তালাক সংঘটিত হয়। শুধু লস এঞ্জেলসেই প্রতিবছর প্রায় ৫০ হাজার তালাক সরকারিভাবে নথিভুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ১৮টি বিয়ের মধ্যে একটি তালাক কার্যকর হতো। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে এই হার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। একটি পরিসংখ্যানে জানা যায়, আমেরিকায় বার্ষিক তালাকপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি। 
পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ আমেরিকা। অথচ সেখানে সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হয়। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, প্রতি ১২ সেকেন্ডে আমেরিকাতে একটি অপরাধ সংগঠিত হয়। প্রতি ঘন্টায় একজন লোক খুন হয়। প্রতি ২৫ মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। প্রতি এক মিনিটে সেখানে একটি চুরির ঘটনা ঘটে। প্রতি ৫ মিনিটে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। প্রতি মিনিটে একটি হত্যাকাÐ ও আটটি চুরির ঘটনা ঘটে। মাসে ২৫ হাজার প্্রাইভেট কার চুরি হয়। 


আমেরিকার প্রতি পাঁচজনেই একজন পাগল। আমেরিকার সাড়ে চার কোটি মানুষ মস্তিষ্কের ব্যাধিতে আক্রান্ত। লেজকাটা ঘৃণিত ইউরোপ ও আমেরিকায় পরিবার প্রথা একেবারেই ভেঙে গেছে। শুধু জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে হাজার বছর এগিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাদের উন্নত এ প্রযুক্তি তাদেরকে ধ্বংসোন্মূখ সভ্যতায় পরিণত করতে চলেছে।  ধ্বংসন্মুখ এ সভ্যতা ভেঙ্গে দিয়েছে মা-সন্তানের শ্রদ্ধার দেয়াল। পিতাকে কাছে না পাওয়ায় সন্তানের শয্যাসঙ্গী হচ্ছে মা।

অসৎ পিতার যৌন লালসা পূরণে আপন কন্যা হচ্ছে সহ্যসঙ্গিনী! যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে যৌন অপরাধ বাড়ছে মহামারী আকারে। এ ব্যাধি নিয়ন্ত্রণের নানা উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসেনি। যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ লাখ সামরিক বাহিনীর ৭ শতাংশ হচ্ছে নারী। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। এ সমস্ত ঘাঁটিতে পুরুষ সৈন্যের সাথে নারী সৈন্যরাও রয়েছে। এ সমস্ত ঘাঁটিতে নারী নির্যাতন এবং যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এ অনৈতিকতার ছোবলে আজ ক্ষতবিক্ষত পশ্চিমা জগত। সেখানকার নির্যাতিত ও ক্ষত-বিক্ষত মানুষগুলো শান্তির জন্য ঘুরছে হন্য হয়ে! সাপ্তাহিক টাইমস এর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমেরিকা এখন আত্মহত্যাপ্রবণ একটি দেশ। সেদেশে ১০ থেকে ২০ বছর বয়সি যুবকদের আত্মহত্যার হার দ্রæত বেড়ে চলেছে। গত শতকে সেদেশে প্রতি লাখে ৬০ জন যুবক আত্মহত্যা করেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে। উক্ত রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে,  প্রতি বছর সেখানে ১৩ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৫ হাজার যুবক আত্মহত্যা করে। বিগত ১০ বছরে ইচ্ছাকৃত আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা ৩৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।


জাতিগতভাবে পশ্চিমারা উপনিবেশবাদে বিশ^াসী। উপনিবেশবাদ হলো, অবৈধভাবে অন্য দেশের উপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশ্যই হলো, অন্য দেশ ও জাতিকে দাস-দাসিতে পরিণত করা। অন্যদেরকে অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিকভাবে গোলাম বানানোই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। বিগত দশকে এই পশ্চিমারা বিভিন্নদেশ ও মহাদেশে উপনেবিশবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। উদাহরণস্বরুপ এখানে তাদের কতিপয় ঔপনিবেশক শোষণের ইতিহাস এখানে উল্লেখ করা হলো: 


পঞ্চদশ শতকে তারা স্পেনে ঔপনিবেশক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। তারা এখানে দীর্ঘ ৪০০ বছর ধরে সা¤্রাজ্যবাদী শাসন পরিচালনা করে। এ শাসন প্রতিষ্টা করতে তারা প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে হত্যা করে। স্পেনের রাজা এ সময় ইহুদী ও মুসলিমদেরকে খ্রিস্টান বানাতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে খ্রিস্টান হতে অথবা দেশ ত্যাগের ফরমান জারি করে। এ ঘোষণার পর লাখ লাখ মুসলিম ও ইহুদী স্পেন ত্যাগ করে। এ দেশ ত্যাগের সময় অনেকের সলিল সমাধি ঘটে। অনেকে নিরুপায় হয়ে বাহ্যত খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে। কিন্তু তাতে তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। ধর্ম পালনে সামান্য ব্যত্যয় ঘটলে নওমুসলিমদের চরম শাস্তি দেয়া হতো। শাস্তি হিসেবে তাদের মাথা চূর্ণ বিচূর্ণ করা হতো। তাদের হাটু ও পায়ের হাড় ভেঙ্গে দেয়া হতো। 


১৫৩৪ থেকে ১৯৮০ সালের কথা। ফরাসিরা এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকায় তাদের ঔপনিবেশন শাসন প্রতিষ্ঠা করে। নেপোলিয়নের নেতৃত্বে তারা হাইতিতে এক পৈশাচিক দৃশ্যের অবতারণা ঘটায়। তারা দাসত্বপ্রথার জন্ম দেয়। তারা আফ্রিকা থেকে অসংখ্য বনি আদমকে দাস বানিয়ে আমেরিকা পাচার করে। তাদের সাথে অমানবিক আচরণ করা হয়। তাদেরকে অনাহারে থাকতে বাধ্য করা হয়। তারা যাতে কোনো কিছু না খেতে পারে সেজন্য তাদের মুখে লাগাম পরিয়ে দেয়া হয়। তাদের কেউ পালাবার চেষ্টা করলে ধরে এনে কড়াইয়ের টগবগে ফুটন্ত আগুনে সিদ্ধ করে কাবাব বানানো হয়। ফরাসীরা তাদের ৪০০ বছরের শাসনামলে এক কোটির বেশী মানুষকে নানা ধরনের নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে। 


১৮৬৫ সালে পশ্চিমা রাজা লিওপল্ড আফ্রিকার একটি বিশাল এলাকা দখল করে। এ ঔপনিবেশনকালের সময়সীমা ছিল মাত্র ৭৭ বছর। রাজা কর্তৃক সে সময়ের নৃশংসতার কাহিনি গা শিউরে উঠার মত। বেলজিয় রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড এ সময় কঙ্গ দখল করে। গোটা কঙ্গবাসীকে লিওপোল্ড দাস-দাসিতে রুপান্তর করে। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত কঙ্গের প্রত্যেকটি গ্রামের প্রত্যেকটি মানুষকে কৃষিকাজে বাধ্য করে। কাজে সামান্য সময় বিশ্রাম নিতে চাইলে তাদের হাত-পা কেটে দেয়া হয়। নারীদেরকে অত্যন্ত নিকৃষ্টভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়। সর্বশেষ ৫০ বছরে পশ্চিমার এ অসভ্য রাজা প্রায় ১ কোটি নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে। 


উপরোক্ত আলোচনা এটাই প্রমাণ করে যে, পশ্চিমাদের দেখতে মানুষ হলেও তাদের ভিতরের মানুষটা এখনও অমানুষ। পশুত্বের স্বভাবে ভরা তাদের সার্বিক আচরণ। তাদের চোখ ধাধানো আবিস্কার সাময়িক কৃতিত্বের দাবি রাখলেও মানবিক ও টেকসই দৃষ্টিকোণে সেটি অতিশয় ক্ষয়িষ্ণু। তাদের সামগ্রিক জীবন এক অনৈতিক ও দুর্বল ফ্রেমে বন্দি। একটি দমকা হাওয়াতে তা ভেঙ্গে যেতে পারে যে কোনো সময়।   


লেখক: অধ্যাপক, দা'ওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া ও নির্বাহী সদস্য (জাশিপ)
ঊসধরষ: ফৎ.শহুধসধহ@মসধরষ.পড়স

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত