শ্রীলংকায় সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করা হলো যে কারণে

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১৬:৪২

সাহস ডেস্ক

শ্রীলংকায় বোমা হামলা হওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া শুরু করে হামলা সম্পর্কিত বিভিন্ন মনগড়া গল্প। ফলে দ্রুত সামাজিক মাধ্যম ব্লক করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার।

‘ভুয়া খবর’ ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করতে ফেসবুক, ফেসবুকের মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপ আর ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, ভাইবার ও স্ন্যাপচ্যাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সামাজিক মাধ্যমের ওপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কবে বা কখন উঠিয়ে নেওয়া হবে সে বিষয়ে কোনও বক্তব্য দেয়নি শ্রীলংকার সরকার।

প্রসঙ্গত, শ্রীলংকায় গত রোববারের সিরিজ হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫৯ জনে। রোববার শ্রীলংকার একাধিক গির্জায় এবং হোটেলে সিরিজ বোমা হামলা হওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী রানিল বিক্রমাসিংহে জনগণকে আহ্বান জানিয়েছিলেন ‘ভিত্তিহীন খবর এবং জল্পনা প্রচার থেকে বিরত’ থাকতে। এর পরপরই সামাজিক মাধ্যমের সাইটগুলো ব্লক করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা সাময়িক, তবে ‘তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত’ এটি কার্যকর থাকবে।

সামাজিক মাধ্যমে টুইটার এই নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রীলংকার মানুষের মধ্যে টুইটার তেমন জনপ্রিয় নয়।

গতবছর মুসলিম বিরোধী সহিংসতা উস্কে দেওয়ার অভিযোগে কিছুদিনের জন্য ফেসবুক বন্ধ ছিল শ্রীলংকায়। শ্রীলংকায় সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত খুব একটা বিস্ময়কর নয়। গত বছর নভেম্বরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছিল যে মিয়ানমারে সহিংসতা ছড়ানোর লক্ষ্যে ফেসবুক ব্যবহার করা হয়েছিল।

এরপর এ বছরের মার্চে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে বন্দুকধারীর হামলার ভিডিও লাইভ স্ট্রিমিং করার পর সেই ভিডিও সরিয়ে নেওয়ার জন্যও যথেষ্ট বেগ পেতে হয় ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবের মত জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমগুলোকে।

নিউজিল্যান্ডের ঘটনার সময় সামাজিক মাধ্যম বন্ধ না করা হলেও হামলার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পেছনে সামাজিক মাধ্যমগুলোকেই দায়ী করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন।

সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করা কি ভাল উদ্যোগ? অনেকের মতে, এ রকম নিষেধাজ্ঞার বিকল্প কোনও পথ ছিল না। কারণ ভুল খবর ছড়িয়ে পড়া রোধের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর যথেষ্ট সক্ষমতা নেই।

কিন্তু অনেকেই সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করার এই সিদ্ধান্তকে অনলাইনে তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতার পথে বাধা হিসেবে মনে করছেন- বিশেষ করে শ্রীলংকার মত দেশে, যেখানে এর আগেও গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার নজির রয়েছে।

গবেষক ইয়ুধাঞ্জায়া বিজরত্নে বাজফিডকে বলেন যে এটি একটি জটিল সমস্যা। ‘তথ্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের চেষ্টার বিরুদ্ধে এবং তথ্যের গণতন্ত্রায়নের পথে সামাজিক মাধ্যম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এর অর্থ এই না যে এটি (সামাজিক মাধ্যম) শুধুই কল্যাণ বয়ে আনে। সামাজিক মাধ্যমে ঘৃণা অনেক দ্রুত ছড়ায়, আর ফেসবুক ঘৃণা ছড়ানো কন্টেন্ট বন্ধ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।’

নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক দিকগুলো কী?

সামাজিক মাধ্যম যে ভুল তথ্য বা ভুয়া খবর ছড়িয়ে পড়ার পেছনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে তা প্রশ্নাতীত, কিন্তু দুর্ঘটনার সময় পরিবার এবং প্রিয়জনদের খোঁজ নেওয়ার ক্ষেত্রেও সামাজিক মাধ্যমের গুরুত্বের বিষয়টি বর্তমান বিশ্বের বাস্তবতায় অনস্বীকার্য।

ফেসবুক তাদের এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমাদের সেবার ওপর নির্ভরশীল মানুষ এবং এই বিপর্যয়ের সময় দেশটির সব সম্প্রদায়ের মানুষের সহায়তার উদ্দেশ্যে আমাদের সেবা অব্যাহত থাকবে।’

শ্রীলংকায় হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার ব্যাপক, আর অনেক মানুষের কাছে ইন্টারনেট মানেই ফেসবুক। কাজেই এ রকম বিপর্যয়ের সময় এই সুবিধাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে যোগাযোগের মূল মাধ্যমই বন্ধ হয়ে যাওয়া- এমন এক সময় যখন এটি তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

নিষেধাজ্ঞা কি কাজ করছে?

নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও অনেকেই ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করছেন। ভিপিএন এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারীর ঠিকানা গোপন করে অন্য দেশের সার্ভারের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্যবহার করা যায়।

ভুয়া খবর নিয়ে গবেষণা করা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ফার্স্ট ড্রাফ্ট’ এর প্রতিষ্ঠাতা ক্লেয়ার ওয়ার্ডল বিবিসিকে বলেন, এ রকম একটি ঘটনার পর এই ধরণের পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ সহজে অনুধাবন করা যায়।

‘কিন্তু যখন মানসম্পন্ন তথ্যের অন্য কোনও নির্ভরশীল এবং বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থাকে না, তখন এমন সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সামাজিক মাধ্যমের আর কোনও বিকল্প থাকে না।’

সূত্র: বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত