বরিশাল অঞ্চলে হঠাৎ ডায়রিয়ার প্রকোপ

প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২১, ২১:১৪

সাহস ডেস্ক

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে প্রায় এক মাস জুড়ে ভয়াবহ ডায়রিয়ার প্রকোপ চলছিল। তবে পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

কর্মকর্তারা বলছেন পানিতে লবনাক্ততা বেড়ে যাওয়া, খালে ও নদীর পানিতে জীবাণু ছড়িয়ে পড়া এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের কারণে এ বছর হঠাৎ করে বেশ কয়েকটি জেলায় ডায়রিয়া ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং এ অঞ্চলের ছোট বড় হাসপাতালগুলো রোগীতে সয়লাব হয়ে যায়।

কর্মকর্তারা বলছিলেন বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলায় তুলনামূলক বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ডায়রিয়ায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা: বাসুদেব কুমার দাস জানিয়েছেন যে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৩৮ হাজার ২১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং মারা গেছেন দশ জন।

তিনি বলেন, প্রতিবছর এ সময়ে বিশেষ করে এপ্রিল মে মাসের দিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে কিন্তু এবার তুলনামূলক অনেক বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলেই আইইডিসিআর ও আইসিডিডিআরবি থেকে টিম এসে পরিস্থিতি দেখে কিছু কারণ উদঘাটন করেছে।

তিনি আরো বলেন, এখনও আইইডিসিআরের একটি দল বরিশাল অঞ্চলে এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গত ৮ মার্চ থেকে পরবর্তী এক মাসে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের প্রায় অর্ধেক।

আবার এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে আক্রান্তের গতি আরো বেড়েছে। অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিনে বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ৫৭৭ জন।

তবে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেছেন, বেশ কিছুদিন পর এখন রোগীর চাপ কিছুটা কমে আসতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, আইইডিসিআরের বিশ্লেষকরা অনেকদিন ধরে সবকিছু দেখেছেন এবং তারা তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করছেন।

তিনি আরো বলেন, তবে এটা পরিষ্কার যে লবণাক্ত পানিতে জীবাণু বেশি সময় ধরে টিকে থাকে। আর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ খাবারের জন্য গভীর নলকূপ আর গৃহস্থালি কাজের জন্য পুকুর, খাল কিংবা নদীর পানির উপর নির্ভরশীল।

বাসুদেব কুমার দাস বলেছেন, এসব পানিতে জীবাণু পেয়েছেন ঢাকা থেকে আসা গবেষকরা, তবে তারা এখনো এসব নিয়ে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, রোগীদের মধ্যে ৭১ ভাগ এসব পানি ব্যবহারের তথ্য দিয়েছেন আইইডিসিআরের গবেষকদের।

ডায়রিয়া পরিস্থিতি স্যালাইন সংকট মোকাবেলা অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বরিশাল, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার জন্য বৃহস্পতিবার ৬০০ ব্যাগ আইভি স্যালাইন দেয়া হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর জন্য ৩৫ হাজার স্যালাইন যাবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ জাহাংগীর আলম বলেছেন, জেলায় গত চব্বিশ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৭৯ জন ও সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ২৫৭ জন।

তিনি বলেন, গত সাত দিনে ২০১৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর গত এক মাসে মোট ৪৬৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে আজ থেকে পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো। এর আগে প্রতিদিন তিনশোর মতো রোগী হাসপাতালে আসতো। সেখানে আজ ১৭৯ জন এসেছে।

তিনি আরো বলেন, জেলাজুড়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরাপদ পানির ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে প্রশাসনের সহায়তায়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত