বিটা-ক্যারোটিনে ভরপুর তেলাকুচ

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:৪২

তেলাকুচ একপ্রকারের ভেষজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে একে ‘কুচিলা’, তেলা, তেলাকচু, তেলাহচি, তেলাচোরা কেলাকচু, তেলাকুচা বিম্বী ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। অনেক অঞ্চলে এটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। গাছটির ভেষজ ব্যবহারের জন্য এর পাতা, লতা, মূল ও ফল ব্যবহৃত হয়। এটি লতানো উদ্ভিদ। এটি গাঢ় সবুজ রঙের নরম পাতা ও কাণ্ডবিশিষ্ট একটি লতাজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। পঞ্চভুজ আকারের পাতা গজায়, পাতা ও লতার রং সবুজ। এর ফল ও কচি ডগা খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেখানে। তেলাকুচে প্রচুর বিটা-ক্যারোটিন আছে।

তেলাকচু, তেলাকুচা বা বিম্বি দেশের প্রায় সব অঞ্চলে বসত বাড়ির আশে পাশে, রাস্তার পাশে বন-জঙ্গলে জন্মায় এবং বংশ বিস্তার করে। সাধারণত চৈত্র বৈশাখ মাসে তেলাকুচ রোপণ করতে হয়। পুরাতন মূল শুকিয়ে যায় না বলে গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বৃষ্টি হলে নতুন করে পাতা গজায় এবং কয়েক বছর ধরে পুরানো মূল থেকে গাছ হয়ে থাকে। অবহেলিত এ লতা জাতীয় গাছটি অত্যন্ত উপকারী। শীতকাল ছাড়া সব মৌসুমেই তেলাকচুর ফুল ও ফল হয়ে থাকে। ফল ধরার ৪ মাস পর পাকে এবং পাকলে টুকটুকে লাল রঙ ধারণ করে।

তেলাকুচ লতা জাতীয় উদ্ভদ। সাধারণত ফসলের ক্ষেতের বেড়ার গায়ে জমাট ঝোপঝাড়ে এদের দেখা গেলেও সজনে ও ভেটুল গাছও এদের প্রিয় আশ্রয়স্থল। এই লতা ঠিক কতটুকু লম্বা হয় আন্দাজ করা মুশকিল। তেলাকুচের লতা নরম। খুব সহজেই ছেঁড়া যায়। লতার বেড় আধা ইঞ্চিরও কম। তেলাকুচের পাতার রং গাঢ় সবুজ। পাতা পুরু, নরম। দেখতে অনেকটা হৃদপিণ্ডের আকৃতির। বোঁটা থেকে পাতার অগ্রভাগ পর্যন্ত পাতার দৈর্ঘ্য ৩ ইঞ্চি। প্রস্থও ৩ ইঞ্চির কাছাকাছি। 

বাংলাদেশে দুই রকমের তেলাকুচা দেখা যায়। মূলত পাতার আকৃতি তাদের মধ্যে ছাড়া আর কোনো পার্থক্য নেই। সবচেয়ে বেশি যে তেলাকুচ দেখতে পাই, তার পাতায় ৫ টা শীর্ষভাগ থাকলেও পাতা অখণ্ড। তবে অন্যজাতের তেলাকুচের পাতা তিন ভাগে বিভক্ত ও রসালো। সবুজ রংয়ের রসে ভরা। পিষলে খুব সহজে এই রস বেরিয়ে আসে। তেলাকুচের ফুলের রং সাদা। পাঁপড়ি মূলত একটা। কিন্তু পাঁচটা স্পষ্ট ভাগে বিভক্ত। এর মঞ্জরি একপুষ্পক। প্রায় বারোমাস এর ফুল দেখা যায়। ফুলের ব্যাস ২ ইঞ্চি। ফল লম্বাটে। রং সবুজ। তবে সাদা রংয়ের ডোরাকাটা থাকে। ফলের চেহারা অনেকটা চাল কুমড়োর মতো। ফল ২-৩ ইঞ্চি লম্বা হয়। পাকা ফলের রং সিঁদুর-লাল। পাকা ফলে মিষ্টি স্বাদ আছে। শিশু ও পাখিদের প্রিয় ফল। ফলের ভেতর শশার বীজের মতো ২০-২৫টা বীজ থাকে। তেলাকুচের পাতা শাক কিংবা বাটা হিসেবে বেশি জনপ্রিয়। কোনো কোনো অঞ্চলে মাছের সঙ্গেও খাওয়া হয়। তেলাকুচার ফল খেতে বেশ মিষ্টি। অনেকটা পাকা পটলের মতো স্বাদ।

তেলাকুচ ফলে আছে ‘মাস্ট সেল স্টেবিলাইজিং’, ‘এনাফাইলেকটিক-রোধী’ এবং ‘এন্টিহিস্টামিন’ জাতীয় উপাদান। কবিরাজী চিকিৎসায় তেলাকুচ বেশ কিছু রোগে ব্যবহৃত হয়, যেমন- কুষ্ঠ, জ্বর, ডায়াবেটিস, শোথ , হাঁপানি, ব্রংকাইটিস ও জন্ডিস।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত