শ্রীলংকায় মুসলিম ও খ্রিস্টানদের কবর হবে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২১, ১৮:২৫
শ্রীলংকা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংখ্যালঘু মুসলিম ও খ্রিস্টানদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাদের কবর দেয়া হবে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপে।
এর আগে সংখ্যালঘুদের মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলতে বা দাহ করতে বাধ্য করা হলেও তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছিলো কারণ ইসলাম ধর্মে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার নিয়ম নেই।
ভারত মহাসাগরের মান্নার উপসাগরে ইরানাথিবু দ্বীপটি এখন করোনায় মারা যাওয়া মুসলিম ও খ্রিস্টানদের জন্য নির্ধারণ করেছে শ্রীলংকা সরকার।
এ দ্বীপটি রাজধানী কলম্বো থেকে তিনশ কিলোমিটার দুরে এবং দাফনের জন্য এই দ্বীপকে নির্বাচিত করার কারণ হিসেবে এর কম ঘনবসতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও জাতিসংঘ এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি তুলেছে।
কলম্বো গেজেট জানিয়েছে যে সরকারের মুখপাত্র কেহেলিয়া রামবুকভেলা বলেছেন, দ্বীপটির এক পাশে এজন্য একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নিরাপদে দাফনের জন্য পর্যাপ্ত গাইডলাইন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিন্তু বিষয় হলো পুড়িয়ে ফেললে ইনফেকশন ছড়াবে না-এমন কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। বরং দাহ করাকে একটি সাংস্কৃতিক চর্চা হিসেবেই দেখা হয়।
মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের হাই কমিশনার বলেছেন, দাহ করার নীতি মুসলিম, ক্যাথলিক ও কিছু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং তাদের পরিবারের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
কিছু মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতারা শ্রীলংকা সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
"এটি একটি হাস্যকর সিদ্ধান্ত," বলছেন শ্রীলংকা মুসলিম কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলমি আহামেদ।
"এটা একেবারেই বর্ণবাদী এজেন্ডা"।
ওদিকে ওই দ্বীপের একজন ধর্মযাজক মাধুথিন পাথিনাথার বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে স্থানীয়রাও কষ্ট পেয়েছে।
তিনি বলেন, "আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি। এটা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিকর হবে"।
তিনি আরো বলেন, ওই দ্বীপে আড়াইশোর মতো তামিল বসবাস করে যারা ৯০এর দশকে গৃহযুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলো।
শ্রীলংকায় মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক ক্ষোভ আছে। তবে গত সপ্তাহে বাধ্যতামূলক দাহ করার নীতি থেকে সরকার সরে আসার ঘোষণা দিলে তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্তও তাদের জন্য অবমাননাকর বলে মনে করা হচ্ছে।
শ্রীলংকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৫০ জন, কিন্তু এর মধ্যে তিনশ জনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ।
সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সফরের পর সংখ্যালঘুদের দাফনের সিদ্ধান্ত আসে শ্রীলংকা সরকারের তরফ থেকে।