ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টেও হারলেন

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:০৫

সাহস ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। ট্রাম্পের নিজের মনোনয়ন দেওয়া তিন রক্ষণশীল বিচারপতিও ট্রাম্পের পক্ষে দাঁড়াননি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দেওয়া সংক্ষিপ্ত আদেশে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বলা হয়েছে, মামলার আইনগত কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে তাঁর পরাজয় হয়েছে বলেও মেনে নেননি এখনো। সুপ্রিম কোর্টে তিনি আর কোনো সুবিধা করতে পারবেন না বলেই মনে হচ্ছে।

টেক্সাসের অ্যাটর্নি জেনারেল কেন প্যাক্সটোন চার অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনী ফলাফলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন। এ মামলায় পক্ষ হওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প শিবিরের প্ররোচনায় ১৮টি রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ১২৬ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাও এ মামলায় যুক্ত হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি সুপ্রিম কোর্টকে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

জর্জিয়া, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের দেওয়া জবাব ট্রাম্পের পক্ষে যায়নি। ১০ ডিসেম্বর রাজ্যগুলোর পক্ষ থেকে দেওয়া জবাবে চার অঙ্গরাজ্য, টেক্সাসের অ্যাটর্নি জেনারেলও ট্রাম্পের নির্বাচনে কারচুপিসংক্রান্ত দাবিকে ভুয়া-ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন। এমন ভিত্তিহীন মামলা খারিজ করার জন্য তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

কোনো রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে অন্যান্য রাজ্যের বিরুদ্ধে মামলা করলে আইনে সুপ্রিম কোর্টে তা শুনানির জন্য গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চার অঙ্গরাজ্য থেকে পাওয়া দীর্ঘ জবাব পর্যালোচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা গতকাল সভা করেন। নয় বিচারপতির সম্মিলিত বিবেচনার পরই এক বাক্যের বেশি কিছু শব্দে দেওয়া আদেশে মামলাটির গ্রহণযোগ্যতা নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রক্ষণশীল দুজন বিচারপতি ক্লারেন্স টমাস ও স্যামুয়েল এলিটো বলেছেন, আন্তরাজ্য বিরোধের অভিযোগ শুনানির জন্য গ্রহণ করতে আদালতের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিচারপতি এলিটো ও টমাস বলেছেন, তাঁরা এমন মামলার অভিযোগ শুনানির আবেদন গ্রহণ করতেন। তবে এ মামলার আবেদনকারী যেসব সুবিধার জন্য আবেদন করেছেন, তা গ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই এবং অন্য কোনো বিষয়েও তাঁদের কোনো মতামত নেই বলে বলেছেন।

টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলের পক্ষ থেকে করা মামলায় ইলেক্টোরাল ভোট গ্রহণের তারিখ পেছানো এবং এ নিয়ে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন করা হয়েছিল। নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে রাজ্যের আইনপ্রণেতাদের ইলেক্টোরাল ভোট সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেওয়ার আদেশ কামনা করা হয়েছিল মামলার আবেদনে। গতকাল দিনভর শতাধিক রিপাবলিকান আইনজীবী মামলার পক্ষে তাঁদের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা বক্তব্য সুপ্রিম কোর্টে জমা দেন।

গতকাল বিকেলে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ট্রাম্প শিবিরের এ প্রয়াস বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এখন ১৪ ডিসেম্বর অঙ্গরাজ্য ইলেক্টোরাল কলেজের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে ভোট দিতে কোনো বাধা নেই। অন্য কোনো নাটকীয়তা বা নজিরবিহীন কিছু না ঘটলে রাজ্য ইলেক্টোরাল ভোটের ৩০৬টি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের পাওয়ার কথা। নির্বাচনে জয়ের জন্য তাঁর ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোটের প্রয়োজন।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনো মন্তব্য না করেই একটি ভিডিও পোস্ট দিয়েছেন ফেসবুক ও টুইটারে। সেখানে তাঁর ভোট জালিয়াতির একটা ভুয়া ভিডিও চিত্র রয়েছে। সেখানে তাঁর সমর্থকদের আইনপ্রণেতাদের ওপর নির্বাচন নিয়ে চাপ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন ট্রাম্প।

সুপ্রিম কোর্ট মামলা খারিজ করে দেওয়ার পর ট্রাম্প এবং তাঁর সমর্থকেরা আরেক দফা সক্রিয় হতে পারেন নির্বাচনের ফলাফলকে কংগ্রেসে বাধাগ্রস্ত করার জন্য। আগামী ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ সভায় ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট গণনার সময়ে তাঁরা আরেক দফা জট পাকানোর চেষ্টা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত