ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ

স্বল্প পুঁজিতে হারল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২২, ১৭:১৯

সাহস ডেস্ক

ব্যাটিং ব্যর্থতায় লড়াই করার মত পর্যাপ্ত পুঁজি গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। পেসাররা যদিও লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেরে উঠলেন না। শরীফুল ইসলামকে লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কায় মেরে নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করলে গ্লেন ফিলিপস। তার মারা এই ছক্কায় বল গিয়ে লাগল বাউন্ডারির বাইরে এক দর্শকের শরীরে। এরপরই তার দিকে ছুটে গেলেন ফিলিপস। শেষে মাঠের বাইরের ওই অস্বস্তি বাদ দিলে নিউজিল্যান্ড জিতেছে বেশ ভালোভাবেই। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে এসে নিউজিল্যান্ডের এটি প্রথম জয়। আর জয় শূন্য থাকল বাংলাদেশ।

রবিবার (৯ অক্টোবর) ক্রাইস্টচার্চে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে সাকিব আল হাসানের দল। এই হারে সিরিজের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন কঠিন করে ফেলল টাইগাররা। এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরে সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ।

এদিন টস জিতে আগে ফিল্ডিং নিয়েছিল কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ডেভন কনওয়ের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ১৩ বাকি রেখেই জয় নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ড।

ম্যাচের চতুর্থ ওভারে ফিন অ্যালেনকে শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন শরিফুল ইসলাম। তবুও বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা বাতিল করেন ডেভন কনওয়ে। কেইন উইলিয়ামসনের সঙ্গে তার ৮৫ রানের জুটি নিশ্চিত করেছে, রানতাড়ায় নিউজিল্যান্ডের ওপর চাপ আসেনি মোটেও। ৫১ বলে ৭ চার ১ ছক্কায় ৭০ রান করে অপরাজিত কনওয়ে। সঙ্গে মারমুখি খেলে অপরাজিত থাকেন গ্লেন ফ্লিপস। ৯ বলে ২ চার ২ ছক্কায় ২৩ রান করেন ফ্লিপস। এর আগে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকে ক্যাচ দিয়ে ফেরান হাসান মাহমুদ। উইলিয়ামসন ফেরার আগে ২৯ বলে ১ চারে ৩০ রান করেন।

টি-টোয়েন্টি হচ্ছে চার-ছক্কার খেলা। এখানে মারমুখী ব্যাটিং করতে হয়। টি-টোয়েন্টির এ মন্ত্রটা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা জানেন। আর জানেন বলেই শুরু থেকে নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মারার চেষ্টাও করেছেন মিরাজ, লিটন, আফিফ হোসেনরা। কিন্তু সেই চেষ্টায় তারা শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেননি।

গত কিছুদিনে বেশ কয়েকটি উদ্বোধনী জুটি দিয়ে পাওয়ার-প্লের ৬ ওভারের ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করেছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। এ কারণেই প্রথাগতের বাইরে গিয়ে তারা উদ্বোধনীতে নিয়ে আসে মেহেদী হাসান মিরাজ-সাব্বির রহমান জুটি। কিন্তু ৩ বছর পর টি-টোয়েন্টি দলে ফেরা সাব্বির ৪টি ম্যাচ খেলে করতে পেরেছেন মাত্র ৩১ রান। ফল, আবার বদল ওপেনিং জুটিতে। এবার মিরাজের সঙ্গে নাজমুল হোসেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও উদ্বোধনী জুটি স্থায়ী হলো মাত্র ১.৪ ওভার। ১২ রানের জুটি ভেঙেছে মিরাজের বিদায়ে। টিম সাউদির বলে বিগ হিট করতে গিয়ে ঠিকঠাক টাইমিং করতে পারেননি মিরাজ। মিডঅনে ক্যাচ তুলে ফিরেছেন ৫ বলে ৫ রান করে। এর আগের বলেই অবশ্য ‘জীবন’ পেয়েছিলেন তিনি।

উইকেটে এসে কোনো রান করার আগেই ‘জীবন’ পেয়েছেন লিটনও। কিন্তু সেই জীবন খুব বেশি কাজে লাগাতে পারেননি। অফ স্পিনার মাইকেল ব্রেসওয়েলকে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে সরাসরি ক্যাচ দিয়েছেন বোলারের হাতেই। ফেরার আগে ১৬ বল খেলে করেছেন ১৫ রান, মেরেছেন ২টি চার। বিগ হিট করার চেষ্টা ছিল নাজমুলেরও। তবে সেটা একটু দেখেশুনেই, অন্য প্রান্তে দুটি উইকেট পড়ে গেছে। কিন্তু ৪ চারে তার ২৯ বলে ৩৩ রানের ইনিংসটিও থেমেছে বড় শট খেলার চেষ্টা করতে গিয়ে। কমিয়ে আনা লেংথ, গুগলি। ইস সোধিকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে টাইমিং না হওয়ায় লং অফে থাকা মার্ক চাপম্যানকে পার করাতে পারেননি এ বাঁহাতি। নাজমুলের উইকেটটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সোধির ১০০তম। সাউদির পর দ্বিতীয় নিউজিল্যান্ড বোলার হিসেবে এ কীর্তি হলো সোধির। নাজমুলের পর সোধির দ্বিতীয় শিকার হয়ে দ্রুত ফিরে যান মোসাদ্দেক হোসেনও (২)।

এরপর স্পিনারদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টার অংশ হিসেবে ব্রেসওয়েলকে তুলে মারেন ইয়াসির। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে টেনে মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েছেন তিনি। মাত্র ৭ রান করে ইয়াসির আউট হওয়ার আগে আফিফের সঙ্গে জুটিতে যোগ হয় মাত্র ১২ রান। ইয়াসির আউট হলে সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন সাকিব আল হাসান। অধিনায়ক উইকেটে আসার খানিক পরই অবশ্য ফিরে যান আফিফ। ট্রেন্ট বোল্টের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হওয়ার আগে ২৬ বলে ২৪ রান করেন তিনি। যথারীতি পুরনো রূপে ফিরে যায় বাংলাদেশ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের পাশাপাশি স্লো রান রেট সঙ্গী হয় সফরকারীদের। শেষদিকে নুরুল হাসান সোহানের ১২ বলে ২৫ রানের ইনিংসে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা খুঁজে নেয় বাংলাদেশ। ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রানের পুঁজি পায় সাকিবের দল।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, ইশ সোধি ও মাইকেল ব্রেসওয়েল ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন মাইকেল ব্রেসওয়েল।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত