তৃতীয় টি-টোয়েন্টি

সিরিজ জয়ে অপেক্ষা বাড়লো বাংলাদেশের

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৪৯

পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ও দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ের পর আজ হেরে গেলো বাংলাদেশ। এতে সিরিজ জয়ের অপেক্ষা বাড়লো টাইগারদের। আজ তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলে টানা তিন জয়ে দুই ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করতে পারত স্বাগতিকরা। সফরকারিদের দেওয়া ১২৯ রানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি মাহমুদউল্লাহ বাহিনী। মাত্র ৭৬ রানে অলআউট হয়ে সিরিজের অপেক্ষা আরো বাড়ালো টাইগাররা।

রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫২ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।

এদিন টসে জিতে আগে ব্যাট করে ১২৯ রানের লক্ষ্য দেয় নিউজিল্যান্ড। এই রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারের ২ বল বাকি থাকতেই মাত্র ৭৬ রান করে সব উইকেট হারায় টাইগাররা।

তবে ওপেনিংয়ে শুরুটা ভালোই করেছিলেন মোহাম্মদ নাঈম ও লিটন দাস। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি লিটন। কোল ম্যাককনচির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ১১ বলে ৩ চারে ১৫ রান করেন ওপেনার লিটন দাস। এর আগে প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে জ্যাকব ডাফিকে বাউন্ডারি মেরে শুরু করেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। পরের ওভারের প্রথম বলে এজাজ প্যাটেলকে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন লিটন।

এরপর নামেন মেহেদী হাসান। কিন্তু ক্রিজে দাঁড়াতে পারলেন না তিনি। এজাজ প্যাটেলের বাড়তি বাউন্স বলে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। করেছেন মাত্র ১ রান। তার পরপরই খালি হাতে ফিরলেন সাকিব আল হাসান। এজাজ প্যাটেলের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অন থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে ক্যাচ ধরেন কোল ম্যাককনচি। সাকিব ফিরলেন শূন্য রানে।

তখন ৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ২৬ রান। ক্রিজে মোহাম্মদ নাঈম শেখের সঙ্গী হতে নামলেন মুশফিকুর রহিম।

এরপর ফিরলেন নাঈম। রচিন রবীন্দ্রের বলে মারতে গিয়ে বল ব্যাটে লেগে স্টাম্প ভাঙে। এতে বোল্ড হয়ে ফেরেন বেশ কয়েকবার সুযোগ দিয়েও বেঁচে যাওয়া ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। ফিরে যাওয়ার আগে ১৯ বলে ২ চারে ১৩ রান করেন তিনি।

এরপর নামেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনিও দাঁড়াতে পারলেন না ক্রিজে। মাত্র ৩ রান করে এজাজ প্যাটেলের লেংথ বল মারতে গিয়ে নিকোলাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। তার পরের বলেই ফেরেন আফিফ হোসেন। মাহমুদউল্লাহর পর ব্যাট হাতে নেমেই শূন্য রানে এজাজ প্যাটেলের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি।

পরে ম্যাককনচির অফ স্টাম্পের বাইরে বল তুলে মারতে গিয়ে ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন নুরুল হোসেন সোহান। ফেরার আগে করেছেন মাত্র ৮ রান। ম্যাককনচির পরের ওভারে এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন সাইফউদ্দিন। রিভিউ নিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তিনি ১১ বলে ১ চারে ৮ রান করে ফেরেন।

তারপরেই কুগালাইনের বলে শূন্য রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন নাসুম আহমেদ। এরপর গ্রান্ডহোমের বলে ক্যাচ দিয়ে ৪ চার করে ফেরেন শেষ উইকেট মোস্তাফিজুর রহমান। এদিকে ৩৭ বলে ২০ রান করে অপরাজিত থেকে যান মুশফিকুর রহিম। অবশেষে ৭৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ৫২ রানের জয় পায় নিউজিল্যান্ড। সিরিজে এটাই তাদের প্রথম জয়।

তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড এড়াল বাংলাদেশ। ২০১৬ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের শেষ ম্যাচে ১৪১ রান তাড়া করতে নেমে ৭০ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কুগালাইনের বলে মোস্তাফিজের সিঙ্গেল সে রেকর্ড থেকে বাঁচাল দলকে।

কিউইদের হয়ে এজাজ প্যাটেল ৪টি, কোল ম্যাককনচি ৩টি এবং রচিন রবীন্দ্র, স্কট কুগালাইন ও কলিন ডি গ্রান্ডহোম ১টি করে উইকেট নেন।

এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১২৮ রান সংগ্রহ করে কিউইরা। দলের হয়ে প্রথম ওভারে ১১ রাত তুলেছে কিউইরা। ৫ বলে ২ চারে ১০ রান করেছেন করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ্য হয়ে ফেরা ওপেনার ফিন অ্যালেন। করোনাভাইরাসের কারণে প্রথম দুই ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি।

প্রথম ওভারে ভালো শুরু করে আশার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অ্যালেন। কিন্তু টিকতে পারলেনা বেশিক্ষণ। তৃতীয় ওভারে মোস্তাফিজের প্রথম বল ফুল লেংথ ডেলিভারি পেয়ে শট করতে গিয়ে মিড অনে মাহমুদউল্লাহকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অ্যালেন। ফেরার আগে ১০ বলে ৩ চারে ১৫ রান করেন ফিন অ্যালেন।

এরপর মেডেন নিলেন মুস্তাফিজ। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে আব্দুর রাজ্জাককে পেছনে ফেলে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫টি মেডেন ওভার করেছেন কাটার মাস্টার। এর আগে সমান ৪টি মেডেন নিয়ে আব্দুর রাজ্জাকের পাশে ছিলেন তিনি। আজ ৫১তম ম্যাচ খেলতে নেমে রাজ্জাককে পেছনে ফেলেছেন মুস্তাফিজ। তৃতীয় সর্বোচ্চ তিনটি মেডেন ওভার আছে সাকিব আল হাসানের।

তবে মুস্তাফিজের চেয়ে কেবল এগিয়ে আছেন বুমরাহ-কুলাসেকারা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি- ৭টি মেডেন ওভার আছে ভারতীয় পেসার জাসপ্রিত বুমরাহর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬টি মেডেন ওভার করেছেন লঙ্কান পেসার নুয়ান কুলাসেকারা। মুস্তাফিজসহ আট জন বোলারের মেডেন আছে পাঁচটি করে।

পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে এক উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড করেছে ৪০ রান। ফিন অ্যালন ফিরে যাওয়ার পর নামের উইল ইয়াং। তাকে নিয়ে পাওয়ার প্লেতে ওভার প্রায় সাত করে রান তুলেছে রাচিন রবীন্দ্র।

এরপর সাইফউদ্দিনের জোড়া আঘাত। স্পিনারদের ভালোভাবে সামলে এগোচ্ছিল রচিন রবীন্দ্র ও উইল ইয়াং। তবে মোস্তাফিজের পর তাদের গতি থামিয়ে দেন আরেক পেসার সাইফউদ্দিন। তার প্রথম ওভারের ৪র্থ বলটি ফ্লিক করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন। জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সারা দিয়ে রিভিউ নেন ইয়াং। পরে রিভিউতেও তাকে আউটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভাঙে ২৭ বল ৩০ রানের জুটি। ফেরার সময় ২০ বলে ৩ চারে ২০ রান করেন ইয়াং।

এই ওভারের শেষ বলে আবারো এলবিডব্লিউর আবেদন। জোরালো আবেদনে সারা দিয়ে সদ্য নামা ডি গ্র্যান্ডহোমকে আউট দেন আম্পায়ার। তিনিও রিভিউ নিয়েছিলেন। সেখানেও আউট দেখায়। তবে আম্পায়ার্স কলের জন্য নষ্ট হয়নি তার রিভিউ। শূন্য রানেই ফিরে যান গ্র্যান্ডহোম।

এরপর ক্রিজে রাচিন রবীন্দ্রর সঙ্গী হন অধিনায়ক টম ল্যাথাম। তবে রবীন্দ্রকে ক্রিজে টিকতে দিলেন না অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। নিজের শততম ম্যাচে বল হাতে পেয়েছেন সাফল্য। ওপেনিংয়ে নেমে এক প্রান্ত আগলে রাখা রচিন রবীন্দ্রকে বোল্ড করেন মাহমুদউল্লাহ। ২০ বলে ২ চারে ২০ রান করে ফেরেন রচিন রবীন্দ্র। তখন দশ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে ৬০ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড।

অধিনায়ক টম লাথামকে বেশিক্ষণ টিকতে দিলেন না শেখ মেহেদী হাসান। আগের ম্যাচে শেষ বল পর্যন্ত টিকে থাকা টম লাথাম আজ মেহেদীকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি। ফেরার আগে মাত্র ৫ রান করেন লাথাম।

আজ উইকেট পাননি সাকিব আল হাসান। ৪ ওভারের স্পেল শেষে ২৪ রান দিয়েছেন সেরা এই অলরাউন্ডার। নিউজিল্যান্ডের আর উইকেট হারাতে পারেনি টাইগাররা। ৫ উইকেট হারানোর পর শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। দুজনে গড়েন ৬৬ রানের একটি জুটি। শেষ পর্যন্ত ১২৮ রানে থামে নিউজিল্যান্ড।

বাংলাদেশের হয়ে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২টি, মেহেদী হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন এজাজ প্যাটেল।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত