স্বাধীন থাকুক আমাদের বিচার ব্যবস্থা

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০১৮, ১৭:১৮

মো. ওয়াহিদুর রহমান রাজু

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট দুইভাগে বিভক্ত, আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নতুন  নিয়োগ পেয়েছেন ১৮ জন বিচারপতি। গত ৩১ মে (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৩টার পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন জাজেস লাউঞ্জে একে একে সব বিচারপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান।

৩০ মে (বুধবার) এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৪। মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকের স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি তার সংবিধানিক ক্ষমতাবলে এই নিয়োগ দিয়েছেন। শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে এই নিয়োগ অনধিক দুই বছর কার্যকর থাকিবে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচার পতিগণকে রাষ্ট্রপতি তার সংবিধানিক ক্ষমতাবলে নিয়োগ করেন এটা আমরা সবাই জানলেও সেই ক্ষমতা কী বা সংবিধানে কীভাবে এই ক্ষমতা বর্ণিত রয়েছে তা হয়ত আইনের ছাত্র, আইনের শিক্ষক, আইনজীবি ও আইনের সাথে সম্পৃক্ত জন ছাড়া অনেকেই জানি না।

আসুন আমাদের সংবিধান এই ব্যাপারে কী বলে একটু দেখে নেই-
বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ অধ্যায়ের ৯৪ ধারায় সুপ্রীম কোর্টের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আইনী বিধান ব্যাক্ত করা হয়েছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় 'বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি' নিয়োগের প্রক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ষষ্ঠ অধ্যায়ের ৯৪ ধারার (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘বাংলাদেশ “সুপ্রীম কোর্ট” নামে বাংলাদেশের একটি সর্বোচ্চ আদালত থাকিবে এবং আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ লইয়া তাহা গঠিত হইবে।’ এই ধারার (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “প্রধান বিচারপতি এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যেরূপ সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজন বোধ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রীম কোর্ট গঠিত হইবে”; আরো বলা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি “বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি” নামে অভিহিত হইবেন। পরবর্তী অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “প্রধান বিচারপতি ও আপীল বিভাগে নিযুক্ত বিচারকগণ কেবল উক্ত বিভাগে এবং অন্যান্য বিচারক কেবল হাইকোর্ট বিভাগে আসন গ্রহণ করিবেন।”; এবং চতুর্থ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “সংবিধানের বিধানাবলী-সাপেক্ষে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারক বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবেন।”

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নবনিযুক্ত ১৮ জন বিচারপতি হলেন, আবু আহমেদ জমাদার, এস এম আব্দুল মবিন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফাতেমা নজীব, কামরুল হোসেন মোল্লা, এস এম কুদ্দুস জামান, আতোয়ার রহমান, খিজির হায়াত, এস এম মনিরুজ্জামান, শশাংক শেখর সরকার, মোহাম্মদ আলী, মহিউদ্দিন শামীম, রিয়াজ উদ্দিন খান, খায়রুল আলম, আহমেদ সোহেল, সরদার রাশেদ জাহাঙ্গীর, খোন্দকার দিলীরুজ্জামান ও ড. কে এম হাফিজুল আলম।  

৭ জুন (বৃহস্পতিবার) নবনিযুক্ত বিচারপতিগণ,বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার এর নেতৃত্বে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে যান।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ যারা বিচারপ্রার্থী সাংবিধানিক ভাবে যারা বিচার লাভের অধিকারী তাদের বিচারটাকে যত দ্রুততর সময়ে সহজলভ্য করে, সততা ও দক্ষতার সাথে দিতে পারি সেই লক্ষে আমরা কাজ করে যাব। এবং এই কাযক্রমের মাধ্যমেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার একটা বড় মাইল ফলক হবে আইনের শাসন সুদীর্ঘ করা।

সংবিধানের বিধানাবলী র মত করে আমরাও চাই প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীণতা উপভোগ করুক, স্বাধিন থাকুক আমাদের বিচার ব্যাবস্থা, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক, ন্যায় ও সাম্যের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হোক।

দেশের সকল সাধারণ নাগরিকের পক্ষথেকে নতুন বিচারপতিগণের প্রতি ও বিচার বিভাগের প্রতি রইল শুভকামনা ও শুভেচ্ছা।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত