ছাত্রলীগ: রাবিতে চাঁদা না দেয়ায় হলের রুমে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২২, ১৩:৫১

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি
ছবিঃ মতিহার হল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে গলায় ছুরি ধরে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে। এসময় বুয়েটের আবরার ফাহাদকে যেভাবে মেরে ফেলা হয়েছে ঠিক সেভাবে তাকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বেলা ৩টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মতিহার হলের ২৫৯নং রুমে (অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার রুম) এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী সামসুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাসা নারায়ণগঞ্জ জেলায়। অভিযুক্ত ভাস্কর সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী মতিহার হলের তৃতীয় ব্লকের ১৫৯নং রুমে থাকেন। হলের কক্ষে পড়াশোনার পাশাপাশি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন তিনি। গত ১৫ আগস্ট ভুক্তভোগীকে ফোন দিয়ে ১০ হাজার টাকার চাঁদা দাবি করেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা। ভুক্তভোগী ৫ হাজার টাকা দিতে চাইলে তাকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার ২৫৯নং রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় ৫ হাজার টাকা ছাড়া অতিরিক্ত টাকা দিতে পারবেনা বলায় ভুক্তভোগীকে গলায় ছুরি ধরে রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বেধড়ক পেটানো হয়। বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তাকে বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। সাংবাদিক বা পুলিশকে এসব কথা জানালে বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো তাকেও মেরে ফেলা হবে। শিবির বলে চালিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সামসুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবার খুব অসহায় তাই আমি হলের শিক্ষার্থীদের মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করে পরিবারের দেখাশোনা করি। হলে সার্ভিসিং কাজ করার জন্য ছাত্রলীগ নেতা চাঁদা দাবি করলে আমি ৫ হাজার টাকা দিতে চাই। ৫ হাজার টাকা হবে না বলে আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। আমি একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি।

বিষয়টি অস্বীকার করে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা বলেন, আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমনটা করা হচ্ছে। কারো ইন্ধনে এমনটা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমি এ বিষয়ে মাত্র অবগত হলাম। আমি খোঁজ নিচ্ছি, সত্যতা প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রক্টর অফিস থেকে আমাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এ অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয় তাহলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. আরিফুর রহমান বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী অনেক কিছু ভয়ে বলছে না। আমরা সব তথ্য নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডি তদন্ত কমিটি গঠন করব। অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতার বিরুদ্ধে সত্যতা প্রমাণিত হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বলেন, আমি ইতোমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেওয়া এক ধরনের অপরাধ। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাকে আপাতত মেডিকেলে পাঠিয়েছি। তদন্ত করে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রমাণ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত