বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদটা ছাত্র ইউনিয়নই আগে করেছে

প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০১৬, ১৬:৩৬

(১) 
ছাত্র ইউনিয়নের এক নেতা বলেছেন যে এই অবস্থা চলতে থাকলে ছাত্রলীগের নাম পাল্টে বাণিজ্য লীগ রাখতে হবে। তিনি ভুল বলেন নাই। তিনি সত্যি কথা বলেছেন। একবর্ণ মিথ্যা বলেননি, একবর্ণ ভুল বলেননি।

ছাত্রলীগের সাবেক বর্তমান কিছু নেতা এই নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নকে বাজে গালি দিচ্ছে। বটে? ছাত্রলীগ গালি দেয় ছাত্র ইউনিয়নকে? তস্কর মন্দ কথা বলে কিনা নৈতিকতার কোতওয়ালকে? ছাত্রলীগের ঐসব নেতাকর্মীকে বলি- ঐসব ভাষা তো আর বলতে পারবো না, তাই শোভন ভাষায়ই বলি- ছাত্র ইউনিয়নের একজন প্রাথমিক সদস্যের সমান প্রজ্ঞা আর নৈতিক মান অর্জন করে আসো, তাইলে তোমাদের সাথে আলোচনা চলতে পারে। নাইলে তোমাদের সাথে হ্যান্ডশেক করলেও আমাদের জীবাণুনাশক দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হয়।

ছাত্র ইউনিয়ন নেতা এমনিতেই বলেননি যে এইভাবে চললে ছাত্রলীগের নাম পাল্টে বাণিজ্য লীগ রাখতে হবে। তিনি বাস্তব ঘটনার এবং প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতেই এই কথা বলেছেন। ছাত্র ইউনিয়নের নেতা যদি এই কথা বলে থাকেন, আমি কোনরকম তথ্য ইত্যাদি যাচাই ছাড়াই আপনাদেরকে বলতে পারি, তিনি সত্যি কথা বলেছেন সত্যি কথা বলেছেন এবং সত্যি কথা বলেছেন।

এবং সেই প্রত্যয়ের উপর ভিত্তি করেই আমি আপনাদেরকে একটা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি- আপনারা প্রমাণ করুন যে ছাত্র লীগের কোন নেতা টেন্ডার বা ভর্তি বা সেইরকম কোন বাণিজ্যে জড়িত না। আমি- আমার নাম ইমতিয়াজ মাহমুদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন উকিল- জাতির সামনে পায়ের জুতা খুলে হাত জোড় করে মাফ চাইবো। কিন্তু আমি যদি প্রমাণ করতে পারি যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের জীবনযাত্রার সাথে তাদের জ্ঞাত আয়ের কোন মিল নাই তাইলে আপনি কি করবেন বলেন? আমি যদি দেখাতে পারি যে টেন্ডারবাজির সাথে ছাত্রলীগ নেতাদের সংযোগ আছে তাইলে কি আপনি কানে ধরে মাফ চাইবেন? আমি যদি প্রমাণ করতে পারি যে ভর্তির জন্যে কোন ছাত্রলীগ নেতা টাকা নিয়েছেন তাইলে আপনি কি করবেন? আমার সেই খুলে রাখা জুতা চেটে দিবেন?

নিবেন চ্যালেঞ্জ?

(২) 
আপনারা বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নকে গালি দিয়েছেন। ছাত্রলীগের সাবেক এক সাধারণ সম্পাদকসহ এইরকম কয়েকজনের পোস্ট আমি দেখেছি। আমি ভদ্রলোক বলে আপনাদেরকে আপনি বলে সম্বোধন করছি। আপনাদের যে নৈতিক এবং রাজনৈতিক মান দেখেছি, দুঃখিত- এই পোস্ট দেখলে আপনাদের পিতামাতা কষ্ট পাবে, ছাত্র ইউনিয়নের প্রাথমিক সদস্য হবার যোগ্যতা আপনার চতুর্দশ ঊর্ধ্বতন বা অধ্বস্তন পুরুষের হবে না। কেননা ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হতে হলে মানব সন্তান হতে হয়।

কথা যখন উঠেছেই, তখন বলেই ফেলি। আপনাদের ফাদার পার্টি আওয়ামী লীগের বর্তমান সরকারে যেসব সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদেরকে নিয়ে আপনারা সরকারের সাফল্য দেখান- সেইসব সাবেক বামরা হচ্ছে ছাত্র ইউনিয়নের বর্জিত ক্যারেক্টার। বর্জিত ক্যারেক্টার বা বর্জিত সাবস্ট্যান্স বুঝেছেন তো? না, আপনাদের ইন্টেলেকচুয়াল ক্যাপাসিটির উপর ভরসা করা যায় না, ভেঙ্গেই বলি। প্রতিদিন সকালে আমি আমার দেহ থেকে যেগুলি ত্যাগ করি- সেগুলি হচ্ছে বর্জিত পদার্থ। এগুলি আমার দেহেই ছিল, কিন্তু এদেরকে ধারণ করা যায়না, এগুলি বেরিয়েই যায়। এইগুলিই হচ্ছে বর্জিত পদার্থ। ছাত্র ইউনিয়নের এইগুলিই আপনাদের সরকারের নাম রোশন করে।

শোনেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সম্পর্কে এইরকম মন্দ কথা বলার স্পর্ধা খোদ বঙ্গবন্ধুরও ছিল না। রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভিন্ন কথা। কিন্তু এইসব গালাগালি কিসের ইঙ্গিত করে? এইসব গালাগালিতে শুধু এটাই প্রমাণিত হয় যে ছাত্রলীগ আর রাজনীতির মধ্যে নেই, কেবল দলাদলির আর গুণ্ডামির একটি গ্যাংএ পরিণত হয়েছে।

ন্যুনতম জ্ঞানসম্পন্ন হলে বর্তমান কোন আওয়ামী লীগ নেতাও ছাত্র ইউনিয়ন সম্পর্কে এইসব বাজে কথা বলতে পারবেন না। ছাত্রলীগ সম্পর্কে মন্দ কথা বলা যায়, ছাত্র ইউনিয়ন সম্পর্কে না। আপনাদের নেতা তোফায়েল আহমেদ প্রকাশ্যে দুঃখ করেছেন আপনাদের বর্তমান অবস্থা দেখে। আর অপ্রকাশ্যভাবে আমার পরিচিত কমবেশি প্রায় সকল আওয়ামী লীগ নেতাই ছাত্রলীগ সম্পর্কে মন্দ কথা বলেছেন। এইসব কথা বলার যথেষ্ট যুক্তিও আছে। আওয়ামী লীগের এইসব বড় বড় নেতার সাথে আমি সম্পূর্ণ দ্বিমতও পোষণ করতে পারিনা।

(৩) 
খুব ধমক দিচ্ছে ছাত্রলীগ নেতারা। হেন করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা ঢোঁরা কাউয়ার বাল ছিরেঙ্গা। ছাত্রলীগের সাহসের দৌড় আমরা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দেখিনাই? বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ছাত্রলীগের প্রথম মিছিলটা কতদিন পরে হয়েছিল খবর আছে আপনাদের? আর বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কি করেছিল জানেন? জেনে আসেন। জেনে এসে তারপর লেকচার দেন। শত ভিন্নমত সত্বেও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদটা ছাত্র ইউনিয়নই আগে করেছে।

পঁচাত্তরএর কথা বা ইতিহাসের কথা বাদই দিলাম। এই তো সেদিন, মাত্র এক বছর গেছে। গেল বছর পহেলা বৈশাখে সোহরাওরার্দী উদ্যানের ওখানে যখন নারীদের উপর অত্যাচার হচ্ছিল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের তিনটা ছেলে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল মেয়েদেরকে রক্ষা করতে। দাড়ায়নি? আমাদের লিটন নন্দী, সুমন আর আরেকজন- ওরা কি জীবনের পরোয়া করেছিল? করেনি। সেইখানে তো হাজার হাজার মানুষ ছিল, কেউ তো এগিয়ে আসেনি। তিনজন যুবক সেদিন বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই তিনজন যে লক্ষ কোটি মানুষের চেয়ে উত্তম সেউ কথা কি আমাকে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করে বুঝাতে হবে? এটাই ছাত্র ইউনিয়ন। এই জিনিস চেনার যোগ্যতা আপনাদের সকলের নাই।

আচ্ছা মনে করলাম সেই ঘটনার সময় আপনারা উপস্থিত ছিলেন না, এগিয়ে আসতে পারেননি। কিন্তু এর পরে কি করেছেন? একজন ছাত্রলীগ নেত্রী, একটি মেয়ে, সে নিজে একটি আক্রান্ত নারীকে বস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছিল। কয়দিন পরে ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরা একটি কর্মসূচী দিয়েছিল, সেই কর্মসূচী আপনারা বাতিল করেননি? কেন করেছিলেন? কই, নারী নির্যাতন বিরোধী কর্মসূচীতে তো আপনাদেরকে দেখলাম না। ঐ এইরকম বিশালদেশি মোটা গর্দান পালোয়ানসদৃশ ছাত্র নেতাদের হুঙ্কার তো সেদিন শুনলাম না- যে ক্যাম্পাসে নারী নির্যাতন সহ্য করবো না।

আরে পহেলা বৈশাখের কথাও বাদ দিলাম। সেখানে নির্যাতিতা নারীরা তো আর আপনাদের সংগঠনের কেউ ছিল না আরকি। বাদ দেন। এই যে গতকাল নাকি পরশু আপনাদের একজন কেন্দ্রীয় সম্পাদক একটা মেয়েকে মশিউর রহমান রাঙার ভাই অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করলো মারধোর করলো, তার জন্যে আপনারা কি করেছেন? মশিউর রহমান রাঙার ভাইয়ের এতো বড় সাহস সে একজন নারীকে এইরকম খোলা বাজারে গালাগালি করে? আপনারা নাকি এতো বড় বড় সব মাস্তান? ঐ ব্যাটার জিহ্বাটা কেটে আনতে পারেন না? আপনাদেরই না নেত্রী সেই মেয়েটা?

না, সেটা করবেন কেন? উল্টা ছাত্র ইউনিয়নের মেয়েরকে বাজে গালি দিবেন। বুঝতে পারছেন আপনারা কি?

(৪) 
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো? সেটা পারবেন কেন? গায়ে আপনাদের জোর আছে। কিন্তু সেই জোর তো কাজের কাজে ব্যয় করবেন না। গলাবাজি করবেন ছাত্র ইউনিয়নের ছেলেমেয়েদের সাথে। গালি দিবেন ছাত্র ইউনিয়নের মেয়েদেরকে। কেন? ওরা তো আপনাদেরকে পাল্টা মারতে যাবেনা। ওরা হয়তো আপনাদের মাসলকে ভয় পায়।

আমিও ভয় পাই। আমি ছিনতাইকারীকেও ভয় পাই। কুকুরকেও ভয় পাই। টেররিস্টদের ভয় পাই। সাপকে ভয় পাই। অনেকে টিকটিকি মাকড়শা এইসবকেও ভয় পায়। ছাত্রলীগকেও ভয় পায়। আপনাদের ভয় দেখানোর ক্ষমতা আছে। গায়ের জোর আছে। সাথে সরকার আছে। নৈতিক জোরটা কি আছে? নাই। ইন্টেলেকচুয়াল জোরটা কি আছে? নাই? এককদম এগিয়ে বলি- দেশপ্রেমের জোরটাও কি আপনাদের আছে? আমার তো মনে হয় দলীয় আনুগত্যের আড়ালে আপনাদের দেশপ্রেমও হারিয়ে গেছে।
ছাত্র ইউনিয়নের এক নেতা ছাত্রলীগের নাম ভবিষ্যতে বাণিজ্য লীগ করতে বলেছেন, তাতে এতোই পিত্তি জ্বলে গেল আপনাদের? তাইলে বুক চিতিয়ে এসে বলেন না কেন, যে ছাত্রলীগের কোন নেতা ভর্তি বাণিজ্য বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার ইত্যাদি কোনরকম বাণিজ্যের সাথে জড়িত নাই। বলেছেন সেই কথা। কেউ বলেননাই। সোজা ছাত্র ইউনিয়নকে গালি দেওয়া শুরু করেছেন। তাও কিসব গালি? সেগুলি আর উচ্চারণ করলাম না। এখনো এতো নিচে নামিনাই যে সেইসব উচ্চারণ করতে পারবো।
আপনার যদি সেই নৈতিক জোরই থাকে, তাইলে বলেন যে ছাত্রলীগের কেউ টেন্ডারবাজি করে না, চাঁদাবাজি করে না, ভর্তি বাণিজ্য করে না। আসেন। আমাদের ছেলেমেয়েদের সাথে ভর্তি বানিজ্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। সেটা তো করেবেন না। বাণিজ্য ঠিকই করবেন আর আমরা বললেই দোষ।

(৫) 
ছাত্র লীগের বেশ কয়েকজন সাবেক নেতা কর্মী আমার বন্ধু তালিকায় আছেন। ছাত্রজীবনে আমি ছাত্র ইউনিয়ন করেছি, কিন্তু ছাত্রলীগ কর্মীদের সাথে কাঁধে কাঁধ রেখে শিবিরের সাথে মারামারি করেছি। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে একসাথে পুলিশের মার খেয়েছি, একসাথে আন্দোলন করেছি। আবার সেই সাথে আদর্শগত স্বতন্ত্র অবস্থানও বজায় রেখেছি। তাতে আমাদের যেমন কোন অসুবিধা হয়নি, ছাত্রলীগেরও কোন অসুবিধা হয়নি। কখনো কখনো উত্তেজনাও যে হয়নি তা নয়- কিন্তু পরস্পরের বিরুদ্ধে এইসব ভাষা ব্যাবহার? সেটা কখনো হয়নি।

এখন ছাত্রলীগের নেতারা ছাত্র ইউনিয়নকে যে ভাষায় গালি দিচ্ছে এগুলি শুনে আমি কি ক্রোধান্বিত হবো, নাকি দুঃখ পাবো এইটাই তো বুঝতে পারছি না। এরা কি আসলেই ছাত্রলীগ? বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ? গণতন্ত্রের জন্যে লড়াই করা ছাত্রলীগ? কি বলেন এইসব? এইসব কি বঙ্গবন্ধুর ভাষা? গণতন্ত্রের ভাষা? কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বাঙালী সংস্কৃতির ধারক বাহক ছাত্রদের ভাষা? নাকি দুই টাকার ছ্যাঁচড়া গুণ্ডার ভাষা?

ছাত্রলীগের যেসব সাবেক বর্তমান নেতারা ছাত্র ইউনিয়নকে বাজে ভাষায় গালি দিচ্ছেন, আমি ওদেরকে গালি দেওয়ারও রুচি পাচ্ছি না। কেন যেন মনে হয় সাংস্কৃতিক ভাবে নেহায়েত অতি নিচু লেবেলে গিয়ে গালি না গিলে এরা গালিটাও বুঝতে পারবে না। সেই লেভেলে তো আর আমার পক্ষে নামা সম্ভব না।

মশিউর রহমান রাঙার ভাই কিন্তু সেই লেভেলে গিয়েই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক ঐ মেয়েটিকে গালি দিয়েছে। আপনি দেখবেন, ছাত্রলীগ সেই ঘটনারও ঠিকমত প্রতিবাদ করবে না। আমি অবাক হবোনা যদি দেখি যে মশিউর রহমান রাঙার ঐ বদ ভাইটার সাথে ছাত্রলীগ গিয়ে মিলে মিশেও যায়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হলে নৈতিক বল লাগে। এক গুণ্ডা আরেক গুণ্ডার গুণ্ডামির প্রতিবাদ করবে কোন মুখে?

এই ছাত্রলীগ একটা পতিত ছাত্রদল। এর কোন রাজনীতি আছে কিনা আপনারাই বিবেচনা করেন। এদের সাহস টাহসও কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা সন্দেহ আছে। এরা এখন মাস্তানি করতে আসে কেবল ভদ্রলোকেদের সাথে। আরে গাধার দল, ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যে লাগতে এসেছিস, এদেরকে তোরা কি করবি? এরা গায়ের জোরে মারামারি করে না বটে, ইন্টেলেকচুয়ালি তোদের চেয়ে ইনফিনিটলি সুপিরিয়র, মানুষ হিসেবে তোদের চেয়ে অনেক অনেক অনেক অগ্রসর। এদেরকে গালি দিয়ে তোরা কেবল নিজেদের নৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক দৈন্যতা আর রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা প্রতিষ্ঠিত করেছিস মাত্র। এর দামও তোদেরকে দিতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত