ইমরান খানের অনুরোধে পার্লামেন্ট ভেঙে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আহ্বান

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২২, ১৭:৫৯

সাহস ডেস্ক

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনুরোধের পর দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এসময় তার সরকার পতনের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

রবিবার (৩ এপ্রিল) পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দিয়ে আচমকা অধিবেশন শেষ করে দেন।

রবিবারের অনাস্থা প্রস্তাবটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

এদিনের অধিবেশনে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, সংবিধানের ৫ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের প্রতি আনুগত্য প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক কর্তব্য। তিনি বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘শাসক পরিবর্তন করার জন্য ‘বিদেশি শক্তির’ সঙ্গে যোগসাজশ করার অভিযোগ করেন।

এর কিছুক্ষণ পরই ইমরান খান জাতীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে বলেন, আমি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে সংসদ ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছি।

ইমরান তার ভাষণে আরও বলেন, আমি জনগণকে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে বলছি। আল্লাহকে ধন্যবাদ, সরকার পতনের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।

ইমরান খানের প্রস্তাবের পরই রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্ট ভেঙে দেন।

বিরোধী যেসব দল পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের দাবি করেছিল, তারা ডেপুটি স্পিকারের অনাস্থা ভোট খারিজের রায়কে অবৈধ বলে অভিহিত করেছে। তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা বলেছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য ৩৪২ আসনের পার্লামেন্টে ১৭২ ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দরকার ছিল ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা ইমরান খানের। এজন্য ইমরান খানকে জোট গঠনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে হয়। কিন্তু বর্তমানে ইমরানের জোটের অংশীদাররা এবং তার নিজের দলের ১৭ জন সদস্য তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন।

রবিবার সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই অনাস্থা ভোট হওয়ার কথা ছিল। তবে সংসদীয় রীতি অনুযায়ী এজন্য তিন থেকে সাত দিনের বিতর্কের নিয়ম রয়েছে। যদিও বিরোধীরা জানায় তাৎক্ষণিক তাদের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যক ভোট রয়েছে।

এদিকে ইমরান খান তাকে অপসারণ করার জন্য বিরোধীদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় তিনি তার বৈদেশিক নীতি তাদের পছন্দ মতো নির্ধারণ করেন। কারণ তার নীতি প্রায়ই চীন ও রাশিয়ার পক্ষে চলে যায়। ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে সেই যুদ্ধে পাকিস্তানের অংশীদারিত্বেরও কঠোর বিরোধী।

ইমরান খান জোর দিয়ে বলেছেন, পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতা থেকে তাকে অপসারণের জন্য করা ষড়যন্ত্রে ওয়াশিংটন তার বিরোধী পক্ষকে সাহায্য করছে।

পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ পাঞ্জাবের বাসিন্দারা রবিবার নতুন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ভোট দেয়ার কথা ছিল। পাকিস্তানের ২২০ মিলিয়ন জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই পাঞ্জাবে বসবাস করে। এ প্রদেশটিকে দেশের চারটি প্রদেশের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে মনে করা হয়। এছাড়াও রবিবার সরকার পাঞ্জাবের প্রাদেশিক গভর্নরকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছে।

পাকিস্তানের ডানপন্থী প্রধান বিরোধী দলগুলো ২০১৮ সালে ইমরান খান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক ইনসাফ পার্টিকে বিজয়ী হতে সাহায্য করেছিল; এমন অভিযোগ ওঠায় ইমরান খানের সরকার বিতর্কের মধ্যে পড়ে।

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ইউএস ইনস্টিটিউট অফ পিস-এর একজন সিনিয়র বিশেষজ্ঞ আসফান্দিয়ার মীর বলেছেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ শুরু থেকেই খানের বৈধতাকে ক্ষুন্ন করেছে।

পাকিস্তানের স্বাধীনতার ৭৫ বছরের ইতিহাসের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে সরাসরি সামরিক বাহিনী পাকিস্তানকে শাসন করেছে এবং ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করেছে। বাকি সময়েও পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোকে চালিত করেছে সেনাবাহিনী।

বিরোধীরা ইমরান খানকে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার জন্য অভিযুক্ত করেছে। তারা তার বিরুদ্ধে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির অভিযোগ করেছে।

অন্যদিকে, ইমরান খানের সরকার ১৮ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বজায় রাখায় এবং প্রবাসী পাকিস্তানিদের কাছ থেকে গত বছর রেকর্ড ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আনার কৃতিত্বও রয়েছে। এছাড়া ইমরান খানের দুর্নীতিবিরোধী খ্যাতি প্রবাসী পাকিস্তানিদের বাড়িতে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত করেছে। তার সরকার করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা এবং দেশব্যাপী শাটডাউনের পরিবর্তে ‘স্মার্ট লকডাউন’ বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক প্রশংসাও পেয়েছে।

তবে ইমরান খানের নেতৃত্বের ক্ষমতা প্রায়ই দ্বন্দ্বমূলক বলে সমালোচিত হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত