এশিয়া কাপ

লড়াই করেও পারল না বাংলাদেশ

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:৫৩

সাহস ডেস্ক

কুশল মেন্ডিসকে বার বার জীবন দান, অগোছালো ডেথ ওভার, ৮টি ওয়াইড, ৪টি নো বল- অতিরিক্ত খাতে বাংলাদেশ খরচ ১২ রান। আর শ্রীলঙ্কা কোনো নো বা ওয়াইড করেনি। এমন সূক্ষ্ণ ব্যবধানের ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিল সেটিই? শেষ ওভারে দরকার ছিল ৮ রান। বলে আসেন মেহেদী হাসান। প্রথম বলে লেগবাই থেকে সিঙ্গেল। দ্বিতীয় বলে ফার্নান্দোর চার। তৃতীয় বলে ডাবলস এবং স্কোর টাই। সেটি আবার নো বল। খেলা তাতেই শেষ। অর্থাৎ বড় স্কোর নিয়ে লড়াই করেও পারলো না সাকিবের দল। শ্রীলঙ্কার কাছে ২ উইকেটে হেরে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিল বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (০১ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে সুপার ফোরে ওঠার লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার কাছে ২ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। ৪ বল হাতে রেখেই ২ উইকেটের জয় নিয়ে ‘এ’ গ্রুপ থেকে আফগানিস্তানের সঙ্গে সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে শ্রীলঙ্কা। ১৮৩ রান তাড়ায় লঙ্কানদের জয়ের নায়ক কুশল মেন্ডিস। ৩৭ বলে করেছেন ৬০ রান। খেলেছেন ৪টি চার ও ৩টি ছক্কা। এসময় চারবার জীবন পান তিনি! অধিনায়ক দাসুন শানাকা খেললেন মোড় ঘুরিয়ে দেয়া ইনিংস। শেষটা করতে না পারলেও তার ৩৩ বলে ৩ চার ২ ছক্কায় ৪৫ রান দলের জয়ে রেখেছে দারুণ ভূমিকা।

পুরো ইনিংসে ৪টি ‘নো’ এবং ৮টি ওয়াইড, মোট ১২টি অতিরিক্ত রান দিয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ দুই ওভার অতিরিক্ত বল করতে হয়েছে তাদের। স্লো ওভার রেটের কারণে শাস্তি হিসেবে শেষ ওভারে বৃত্তের ভেতর ৫ ফিল্ডার নিয়ে বল করতে হয়েছে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে। অথচ ১৮৩ রান রক্ষার শুরুটা দারুনভাবে করে বাংলাদেশ। রান পাহাড় তাড়ার মিশনে মারকুটে ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কাকে ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় বলে ফেরান ইবাদত হোসেন। একই ওভারের শেষ বলে চারিথ আশালাঙ্কাকে ১ রানে ফেরান টাইগার পেইসার। নিজের পরের ওভারে আবারও আঘাত হানেন ইবাদত। তার শিকার হয়ে ফিরতে হয় দানুষ্কা গুনাথিলাকাকে। ইবাদতের অভিষেকটা হয় স্বপ্নের মতো।

অভিষেক ম্যাচে প্রথম ওভারেই ২ উইকেট দলকে ভালো অবস্থানে নিয়েছিলেন ইবাদত হোসেন।

নবম ওভারে লঙ্কা শিবিরে আঘাত হানেন তাসকিন। ভানুকা রাজাপাকশেকে ২ রানে সাজঘরের পথ দেখিয়ে নিজের প্রথম উইকেট নেন ডানহাতি এই পেইসার। উইকেটের একপ্রান্ত আগলে ধরে লড়াই চালাতে থাকেন মেন্ডিস। দাশুন শানাকাকে সঙ্গে নিয়ে ১০ ওভারে তোলেন ৮০ রান। চার বার জীবন পাওয়ার সুযোগে তুলে নেন দুর্দান্ত অর্ধশতক। এরপর আর বেশিদূর যাওয়া সম্ভব হয়নি তার। মুস্তাফিজের শিকার হয়ে ৬০ রানে ফেরন কুশল মেন্ডিস। এসময় ইবাদত হোসেনের স্বপ্নের অভিষেক ওভার, তাসকিন আহমেদের ফিল্ডিং ও বোলিংয়ের পর মোস্তাফিজুর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এনে দেয়া ব্রেকথ্রুতে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ।

তখন লঙ্কানদের জিততে শেষ তিন ওভারে দরকার ছিল ৩৪ রান। লঙ্কানদের শেষ ভরসা তখন অধিনায়ক শানাকা। শেখ মেহেদীর প্রথম ৪ বল থেকে ৮ রান আনার পর পঞ্চম বলটা লঙ অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে ধরা দেন শেষ দিকে ঝড় তোলা শানাকা। ৩৩ বলে ৩ চার ২ ছক্কায় করেন ৪৫ রান করেনে তিনি। বাংলাদেশেরও জয় তখন যেন মুঠোয়। এরপর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে ২ রানে বিদায় করে আবারও বাংলাদেশকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন তাসকিন।

দুটি দুর্দান্ত ক্যাচ ধরেছেন তাসকিন।

কিন্তু কে জানত অপেক্ষা করছে আরও নাটকীয়তা। যে ইবাদত শুরুতে ব্রেক থ্রো দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ভালো অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ইবাদতই পরে হয়ে গেলেন খলনায়ক। ১৯তম ওভার করতে যখন আসেন তখন শ্রীলঙ্কার জিততে দরকার ২৫ রান। চামিকা করুনারত্নে প্রথম দুই বল থেকে ৪ রান নেয়ার পর তৃতীয় বলে মারলেন বাউন্ডারি। সেই বলটি হলো ‘নো’। পরের দুই বল থেকে আরও ৩ রান আসার পর পঞ্চম বলে স্ট্রাইক পেতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান করুনারত্নে। আবারও দাপুটে অবস্থানে চলে আসে বাংলাদেশ। কিন্তু অভিষিক্ত আসিতা ফার্নেন্দো এসে শেষ বলে মেরে দেন বাউন্ডারি। ওই ওভারে ১৭ রান দেন ইবাদত। শেষ ওভারে প্রয়োজন ৮ রান। মেহেদী হাসানের বলে সিঙ্গেল, বাউন্ডারি, ডাবোল এবং ‘নো’তে দুই বলে ৮ রান দেন মেহেদী। এতেই খেলা শেষ, জয়ের উল্লাসে মাতে লঙ্কান ক্যাম্প। ১৮৩ বা এর বেশি রান করেও এ নিয়ে দ্বিতীয়বার হারল বাংলাদেশ। দুটিই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

বাংলাদেশের হয়ে ইবাদত হোসেন ৩টি, তাসকিন আহমেদ ২টি এবং মোস্তাফিজ আর মেহেদী হাসান ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮৩ রানের বড় ইনিংস খেলেছিল বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে খেলা দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও মোহাম্মদ নাঈমকে রাখা হয়নি এ ম্যাচে। বাদ পড়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও। এদিন ওপেনিং করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমান। সাইফউদ্দিনের জায়গায় দলে অভিষেক হয়েছে ইবাদত হোসেনের। ওপেনিংয়ে সাব্বির ভালো না করতে পারলেও বড় ইনিংস খেলেছেন মিরাজ। করেছেন ২৬ বলে ২ চার ২ ছক্কায় ৩৮ রান।

অধিনায়ক সাকিব ২২ বলে ৩ চারে ২৪ রান করে ফিরলেও আফিফ, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক তোলেন ঝড়, শেষে তাসকিনও। ২২ বলে ৪ চার ২ ছক্কায় ৩৯ রান করেন আফিফ হোসেন। মাহমুদউল্লাহ ২২ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ২৭ রান করেন। এরপর ওঠে মোসাদ্দেকের ঝড়। ৯ বলে ৪ চারে ২৪ রান করেন তিনি। আর শেষে ৬ বলে ১১ রান করে অপরাজিত থাকেন তাসকিন আহমেদ।

লঙ্কানদের হয়ে হাসারাঙ্গা ও করুনারন্তে ২টি করে এবং দিলশান মাধুশানাকা, থিকশাহানা ও আশিথা ফার্নান্দো ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন কুশল মেন্ডিস।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত