জিম্বাবুয়ের কাছে প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২২, ২১:০০

সাহস ডেস্ক

শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৯ রান। আফিফ হোসেন প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদকে, লুক জঙ্গুয়ের শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে রাজার হাতে ধরা পড়েছেন তিনি। ৪ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৮ রান! কোন বাউন্ডারি-তো আসেনি বরং শেষ বলে ক্যাচ তুলেছিলেন নাসুম আহমেদ। ব্র্যাড এভান্স মিস করে গেলেন সেটি। তাতে কিছু যায় আসেনি জিম্বাবুয়ের। তার আগেই সিরিজ জয়ের উল্লাসে মাতে জিম্বাবুয়ে। প্রথমবারের মতো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) হারারে মাঠে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে অর্থাৎ তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১০ রানে হেরেছে বাংলাদেশক।

জিম্বাবুয়ের দেয়া ১৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই ফেরেন লিটন দাস। ভিক্টর নিয়াউচির লেগ সাইডের বলটা একটু ক্রিজে হোল্ড করেছিল। সেটিতে ব্যাট চালিয়ে লিডিং-এজড হন লিটন। ভিক্টর নিয়াউচিকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৬ বলে ১৩ রান করে ফেরেন এ ওপেনার। দ্বিতীয় ওভারেই লিটনকে হারায় বাংলাদেশ। এরপরই নিয়াউচির শিকার হন অভিষিক্ত পারভেজ হোসেন। নিয়াউচির বলটা স্লটে পেয়েছিলেন, তবে তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে ধরা পড়েন তিনি। আন্তর্জাতিক অভিষেকে পারভেজ টিকলেন মাত্র ৬ বল, ২ রানের বেশি করতে পারলেননা তিনি। লিটনের পর পারভেজ-বাংলাদেশের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানই নিয়াউচির শিকার। তবে টিকলেন না বিজয়ও। ওয়েসলি মাধেভেরের বাউন্ডারি মারার বলে বোল্ড হয়েছেন এনামুল হক বিজয়। ফেরার আগে করেছেন ১৩ বলে ১৪ রান। ৩৪ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে আরও চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

এরপর ৬ ওভারের পাওয়ারপ্লে শেষে বাংলাদেশের রান ৪৫। হারিয়েছে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে। পরে নাজমুল হোসেনের সঙ্গে যোগ দেন মাহমুদউল্লাহ। উইকেট হারানোর চাপ সামাল দেওয়ার সঙ্গে তাদের খেয়াল রাখতে হয় রানের গতির দিকেও। কিন্তু শন উইলিয়ামসের বলে স্কুপ করে বাউন্ডারি খুঁজতে চেয়েছিলেন নাজমুল। তার শট খুঁজে নিল ফাইন লেগে থাকা লুক জঙ্গুয়ের হাত। ফেরার আগে ২০ বলে করেছেন ১৬ রান করেন তিনি। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে নাজমুলের জুটিতে উঠেছে ২৮ বলে ২৬ রান। ৬০ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর আফিফকে নিয়ে ৩৯ রানে একটি জুটি গড়েন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু অসময়ে ফেরেন তিনি। শর্ট বল, জায়গা বানিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে টাইমিং করতে পারলেন না। ব্র্যাডলি এভান্সের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরলেন ২৭ বলে ২৭ রান করেই। এর পরের বলেই ফেরেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম নেতৃত্ব পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন। এভান্সের এ বলটাও ছিল শর্ট লেংথে, তবে লেগ সাইডে। ঘুরিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন মোসাদ্দেক, তবে শট খেলে ফেলেছেন আগেভাগেই। ব্যাটের পিঠে লেগে ক্যাচ উঠে যায় চাকাভার হাতে। ৯৯ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তখন বাংলাদেশের প্রয়োজন ৩৪ বলে ৫৮ রান। এরপর ক্রিজে আফিফ-মেহেদী, বাংলাদেশের শেষ স্বীকৃত জুটি।

১৯তম ওভারে কোনো বাউন্ডারি দেননি নিয়াউচি, দিয়েছেন মাত্র ৭ রান। প্রথম দুই বলে বাউন্ডারির সুযোগ থাকলেও আসেনি। তৃতীয় বলটি ছিল লো ফুলটস, তবে কমিয়ে আনা গতির বলটা মিডউইকেটে থাকা সিকান্দার রাজাকে পার করাতে পারলেন না মেহেদী হাসান। মেহেদী ফেরেন ১৭ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ২২ রান করে।  শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৯ রান। আফিফ হোসেন প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক দিয়েছিলেন হাসান মাহমুদকে, লুক জঙ্গুয়ের শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে রাজার হাতে ধরা পড়েছেন তিনি। ৪ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ১৮ রান! কোন বাউন্ডারিতো আসেইনি বরং শেষ বলে ক্যাচ তুলেছিলেন নাসুম আহমেদ। ব্র্যাড এভান্স মিস করে গেলেন সেটি। তাতে কিছু যায় আসেনি জিম্বাবুয়ের। তার আগেই সিরিজ জয়ের উল্লাসে মাতে জিম্বাবুয়ে। ১০ রানে হারে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে জিম্বাবুয়ে। স্বাগতিকদের হয়ে ভিক্টর নিয়াউচি ৩টি, ব্র্যাডলি এভান্স ২টি এবং ওয়েসলি মাধভেরে, শেন উইলিয়ামস ও লুক জঙ্গুয়ে ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রান করে জিম্বাবুয়ে। এদিন ইতিবাচক ভাবেই শুরু করেছিল স্বাগতিক ওপেনার রেজিস চাকাভা। মোস্তাফিজকে চার মেরেই শুরু হয় তার ব্যাট চলা। ওয়েসলি মাধভেরিকে নিয়ে ২৯ রানের জুটি গড়েন চাকাভা। তখনই এ জুটিতে নাসুমের আঘাত। প্রথম ম্যাচের মতো প্রথম ৪ ওভারেই এলেন চতুর্থ বাংলাদেশি বোলার। এসেই ব্রেকথ্রু দিলেন তিনি। তুলে মারতে গিয়েছিলেন চাকাভা, শর্ট এক্সট্রা কাভারে লাফিয়ে উঠে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন আফিফ হোসেন। ফেরার আগে চাকাভা করেছেন ১০ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ রান। আগের ম্যাচে প্রথম বলেই উইকেট নিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। জিম্বাবুয়েকে দুমড়েমুচড়ে হয়েছেন তিনি। তবে আউট হওয়ার আগে মোসাদ্দেকের ওপর চড়াও হয়েছিলেন রেজিস চাকাভা। রিভার্স সুইপ করে চার মেরেছেন, এরপর লং অন দিয়ে ছয় মেরেছেন। শেষ বলে লং অনে ভালো ফিল্ডিং করলেও বল বাউন্ডারির ভেতরে রাখতে পারেননি মেহেদী হাসান। মোসাদ্দেক প্রথম ওভারে দিয়েছেন ১৫ রান। এর পরের বলেই ওয়েসলি মাধেভেরের বিপক্ষে হয়েছিল স্টাম্পিংয়ের আবেদন। বেশ সূক্ষ্ণ ব্যবধানেই বেঁচে গেছেন তিনি। এক অ্যাঙ্গেল থেকে পা ক্রিজের দাগের ওপর মনে হলেও আরেক দিক থেকে দাগের একটু ভেতরে ছিল বলে মনে হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত নটআউট দিয়েছেন টেলিভিশন আম্পায়ার।

এরপর জোড়া আঘাত করে ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছেন মেহেদী হাসান। আগের বলে এলবিডব্লুর জোরাল আবেদন করলেও সফল হননি, পরের বলে করলেন ইয়র্কার। সামনে এসে খেলার চেষ্টায় ব্যর্থ ওয়েসলি মাধেভেরে। ৪৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। মাধেভেরে ফিরেছেন ৮ বলে ৫ রান করে। ঠিক পরের বলেই সিকান্দার রাজাকেও ফিরিয়েছেন মেহেদী। লেংথ থেকে হাঁটু গেড়ে তুলে মারতে গিয়েছিলেন সিরিজে জিম্বাবুয়ের সেরা ব্যাটসম্যান রাজা। ফাইন লেগে শরীফুলকে পার করাতে পারেননি, তার হাতে ধরা পড়েছেন কোনো রান না করেই। ৪৫ রানে ১ উইকেট থেকে জিম্বাবুয়ে পরিণত হয়েছে ৪৫ রানে ৩ উইকেটে। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভার শেষে তাদের স্কোর সেটিই।

আগের দিনের চেয়ে বাংলাদেশের বেশ উন্নতিই হয়েছে বলতে হবে, তবে দ্রুত উইকেট হারিয়ে তখন চাপে থাকে স্বাগতিকেরা। এরপরেই মোসাদ্দেকের আঘাত। তার বলে ব্যাকফুটে গিয়ে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে লেগ সাইডে ডিপে ক্যাচ উঠিয়ে দেন শন উইলিয়ামস। সেখানে একজন থাকা ফিল্ডারের হাতেই ধরা পরেন তিনি। ইনিংসে এটি মোসাদ্দেকের প্রথম উইকেট আর জিম্বাবুয়ে হারাল চতুর্থ উইকেট। ৯ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারাল স্বাগতিকরা।

ফিরেই সফল মাহমুদউল্লাহ। এ সিরিজে খেলারই কথা ছিল না তার। নুরুল চোটে পড়ায় দলে এলেন মাহমুদউল্লাহ, তবে অধিনায়ক হিসেবে নয়। দশম ওভারে প্রথম বল করতে এসেই মাহমুদউল্লাহ ফেরালেন জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে। অফ স্টাম্পের বাইরের বলটিতে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মিস করে গেছেন আরভিন। প্রথম দফা ঠিকঠাক গ্লাভসে নিতে না পারলেও সঙ্গে সঙ্গে ঠিকই স্টাম্পিং করেছেন উইকেটকিপার এনামুল হক বিজয়। আরভিন ক্রিজে ফেরার চেষ্টাই করেনি। উইকেটটি পেয়ে যান মাহমুদউল্লাহ।দলে তিনি ঠিকই আছেন কিন্তু নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোসাদ্দেক। নুরুল চোটে পড়ায় মোসাদ্দেকের এটাই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথম নেতৃত্ব পাওয়া।

জিম্বাবুয়ে হারিয়েছে পঞ্চম উইকেট। ১০ রানের ব্যবধানে চারটি উইকেট হারাল তারা। এরপরই মোস্তাফিজের আঘাত। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়েছিলেন মিল্টন শুম্বা। ঝাঁপিয়ে, বাঁ হাত প্রসারিত করে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন এনামুল। মোস্তাফিজের এটি প্রথম উইকেট। ৬৭ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারাল স্বাগতিকরা।

এরপর নাসুমের ওভারে ঝড় তুললেন বার্ল। এক ওভারে রেকর্ড ৩৪ রান করলেন তিনি। টানা চার ছয়, এক চার ও ছয় মারেন তিনি। প্রথম ১৪ বলে ৯ রান নিয়েছিলেন বার্ল। এরপর নাসুমকে নাস্তানাবুদ করে এক ওভারেই নেন ৩৪। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে এক ওভারে সর্বোচ্চ রান দেয়া বোলার এখন নাসুম। সব মিলিয়ে এক ওভারে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান দিলেন তিনি। নাসুমের আগে ১ ওভারে ৩৪ রান দিয়েছিলেন ভারতের শিবাম দুবেও। ব্যাটসম্যান ছিলেন টিম সাইফার্ট ও রস টেলর। স্টুয়ার্ট ব্রডের ১ ওভারে ছয় ছক্কায় ৩৬ রান নিয়েছিলেন যুবরাজ সিং। পরে আকিলা দনাঞ্জয়ার বলে ছয় ছক্কা মেরেছিলেন কাইরন পোলার্ড।

এরপর ফিফটি করেন বার্ল। ১৪ বলে ছিল ৯ রান। এরপর নাসুমের ওভারে ঝড় তুলে মাত্র ২৪ বলে ফিফটি পূর্ণ করলেন বার্ল। মেহেদী হাসানকে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছয় মেরে অর্ধশতক করে ফেলেন বার্ল। ক্যারিয়ারে তার এটি দ্বিতীয় ফিফটি। এর আগের একমাত্র ফিফটিও এসেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মিরপুরে ৩২ বলে অপরাজিত ৫৭, ৫টি চার ও ৪টি ছয়ে।

এরপর রেকর্ড ঝোড়ো জুটির পর ফিরলেন জঙ্গুয়ে, রায়ান বার্ল। বার্লের ঝড়ে হয়তো একটু আড়ালেই ছিলেন লুক জঙ্গুয়ে। তবে তিনিও খেলেছেন গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। হাসান মাহমুদের করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ক্যাচ তোলার আগে ২০ বলে ৩৫ রান করেছেন, টি-টোয়েন্টিতে যেটি সর্বোচ্চ স্কোর তার। বার্লের সঙ্গে জঙ্গুয়ের সপ্তম উইকেট জুটিতে উঠেছে ৩১ বলে ৭৯ রান। মানে এ জুটিতে ১৫.২৯ হারে রান তুলেছেন তারা। সপ্তম উইকেটে এর আগে কোনো জুটি এত বেশি হারে এত রান তোলেনি। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটেই রেকর্ড এটি। হাসানের বলেই জঙ্গুয়ের পর বার্লও ক্যাচ দিয়ে ফিরেছে। ২০ বলে ৪ চার ২ ছয়ে ৩৫ রান করেন জাঙ্গুয়ে এবং ২৮ বলে ২ চার ৬ ছয়ে ৫৪ রান করেন বার্ল। আউট হওয়ার সময় আরেকবার ব্যাট ভেঙেছেন তিনি। জঙ্গুয়ে ও বার্লের জোড়া উইকেটসহ হাসান দিয়েছেন মাত্র ৪ রান। শেষ বলে ওই মিসফিল্ডের পরও শেষ ওভারে মোস্তাফিজ দিয়েছেন মাত্র ৬ রান। নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রান করেছে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী হাসান ও হাসান মাহমুদ ২টি করে এবং মোস্তাফিজ, মোসাদ্দেক হোসেন, নাসুম আহমেদ ও মাহমুদউল্লাহ ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা হয়েছেন রায়ান বার্ল এবং সিরিজ সেরা হছেন সিকান্দার রাজা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত