পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ

রেকর্ড জয়ে সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২১, ২২:৫৩

পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে বোলারদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় ভাসিয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিকরা জিতেছে বিশাল ব্যবধানে। টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম অস্ট্রেলিয়াকে সর্বনিম্ন ৬২ রানে অল-আউট করে রেকর্ডও গড়েছে টাইগাররা।

সোমবার (৯ আগস্ট) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টোডিয়ামে সিরিজের শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৬০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এতে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে টাইগাররা।

প্রথমে টানা তিন ম্যাচ জিতে সিরিজ আগেই নিশ্চিত করে রেখেছিল বাংলাদেশ। চতুর্থ ম্যাচটি লড়াই করেও হেরেছিল তারা। তবে নিজেদের সেরা পারফর্মেন্সটা যেন তুলে রেখেছিল টাইগার বোলাররা। যা আজ অজিদের উপর ভালোভাবেই প্রয়োগ করল তারা। সাকিব, সাইফউদ্দিন ও নাসুমদের প্রেসারে দাঁড়াতেই পারল না অস্ট্রেলিয়া। একের পর এক আসা যাওয়ার তালেই ছিল তারা। এই ধারা বজায় রেখে অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ৬২ রানে অল-আউট করেছে বাংলাদেশ। এই প্রথম সর্বনিম্ন রানে ক্যাঙ্গারুদের ঘায়েল করল টাইগাররা।

২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাউদাম্পটনে ৭৯ রানে অল-আউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, টি-টোয়েন্টিতে এতদিন সেটিই ছিল তাদের সর্বনিম্ন স্কোর।

বাংলাদেশের দেওয়া ১২৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৩.৪ ওভারে মাত্র ৬২ রানে অল-আউট হয় অস্ট্রেলিয়া। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই নাসুমের শিকার হন ওপেনার ডেনিয়েল ক্রিস্টিয়ান। নাসুমের ব্রেক থ্রুতে বড় শট করতে গিয়ে বোল্ড হন ক্রিস্টিয়ান। মাত্র ৩ রান করে ফিরেছেন এই ওপেনার।

এরপর নাসুমের দ্বিতীয় ওভারে শিকার হন অস্ট্রেলিয়ার উজ্জ্বল তারকা মিচেল মার্শ। সিরিজ জুড়ে তিনিই ছিলেন অজিদের আশা। তবে আজ শুরু থেকেই যেন তিনি ধুঁকছিলেন। পরে নাসুমের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন মার্শ। তবে রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি, শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেলেন না। ৯ বলে মাত্র ৪ রান করে ফিরে যান মার্শ।

দলিয় মাত্র ৩ রানের সময় প্রথম উইকেটের পর ১৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।

নাসুমের পর সাকিবের আঘাত। বোলিংয়ে এসেই অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ককে ফেরালেন সাকিব আল হাসান। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৯৯ উইকেট হয়ে গেল সাকিবের। দলিয় ৩৮ রানের মাথায় ৩ উইকেট হারায় অজিরা। ২২ বলে ২ ছক্কায় ২২ রান করে ফেরেন ওয়েড।

সাকিবে পর মাহমুদউল্লাহর আঘাত। টাইগার অধিনায়কের চতুর্থ বলটি ছক্কা মারেন ম্যাকডারমট। তার পরের বলেই নিজের হাতে ক্যাচ বানিয়ে বেন ম্যাকডারমটকে ফেরান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৪৮ রানে ৪ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।

 

মাহমুদউল্লাহর পর সাইফউদ্দিনের জোড়া আঘাত। নিজের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে অ্যালেক্স ক্যারিকে মাত্র ৩ রানে বোল্ড করেন। পরে এই ওভারের চতুর্থ বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক নুরুলের গ্লভসে ধরা পরেন মোয়েস হ্যানরিকস। সিরিজে আজ প্রথম খেলতে নেমে ২ উইকেট নিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

আবারও সাকিবের আঘাত। অফস্টাম্পের বাইরে দেওয়া নিজের তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্যাট চালিয়েছিলেন কাভারে মাহমুদউল্লাহর হাতে ধরা পড়েন অ্যাশটন টার্নার। এতেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে শততম উইকেটের মালিক হয়ে গেলেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বে মাত্র দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এ কীর্তি গড়লেন সাকিব। আপাতত সাকিবের ওপরে আছেন শুধু লাসিথ মালিঙ্গা। শ্রীলঙ্কান এই পেসারের উইকেট ১০৭টি।

শততম উইকেট নিয়ে ক্ষান্ত হননি সাকিব। নিজের চতুর্থ ওভার করতে এসেই প্রথম বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন নাথান এলিস। এরপর চতুর্থ বলে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ বানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার শেষ উইকেট এ্যাডাম জাম্পাকে ফেরান সাকিব আল হাসান। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০২টি উইকেটের মালিক হয়ে গেলেন এই সেরা অলরাউন্ডার। এর আগে অষ্টম উইকেটটি বোল্ড করে ফেরান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। 

অবশেষে ৬০ রানে অস্ট্রেলিয়াকে ৬০ রানে হারাল টাইগাররা। আর এই প্রথম স্বল্প রানে অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করেছে বাংলাদেশ। অজিরা করেছে মাত্র ৬২ রান।

বাংলাদেশের হয়ে সাকিব আল হাসান ৩.৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৩ ওভারে ১২ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। নাসুম আহমেদ ২ ওভারে ৮ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট এবং অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ১ ওভারে ৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ১টি উইকেট।

এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১২২ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিক বাংলাদেশ। দুঃস্বপ্নের মত একটা সিরিজ কাটানো সৌম্য সরকার এদিন দলে থাকলেও ওপেনে রাখা হয়নি তাকে। তার জায়গায় ওপেন করতে নামেন আগের ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্যামিও খেলা মাহেদী হাসান।

আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে ৪.২ বলে ৪২ রানের জুটি বাঁধেন মেহেদী। পরের বলে ক্যাচ দিয়ে জুটি ভাঙেন মেহেদী। ১২ বলে ২ চারে ১৩ রান করে টার্নারের করা দলিয় পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে ক্যাচ দিয়ে সাজ ঘরে ফেরেন এই অলরাউন্ডার।

দলিয় ৫৭ রানের সময় ফেরেন আরেক ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। ৯.২ ওভারের সময় ক্রিশ্চিয়ানের বল রিভার্স করতে গিয়ে পয়েন্টে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নাঈম, খেলতে পারলেন না লম্বা ইনিংস। করেছেন ২৩ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ২৩ রান। আর সেই সাথেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৭ বছর প্রথম উইকেট পেয়েছেন ক্রিশ্চিয়ান, ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে পেয়েছিলেন শেষ উইকেট।

এরপর নিজের ৮২তম ইনিংসে এসে প্রথম এলবিডব্লিউয়ের শিকার হলেন সাকিব। জাম্পার সোজা ডেলিভারি ব্যাটে বলে করতে না পেরে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন এই অলরাউন্ডার। করেন ২০ বলে ১১ রান। এলবিডব্লিউ না হয়ে সাকিবের থেকে বেশি ইনিংস খেলেছেন কেবল ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনি (৮৫)।

অপর প্রান্তে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শুরুটা করেছিলেন দারুণ, জাম্পাকে স্লগ সুইপ করে ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে মেরেছিলেন বিশাল ছক্কা। তবে অ্যাগারের বলে জায়গা বানিয়ে ফাঁকায় ঠেলে দিতে গিয়ে তার হাতেই টপ এজ হয়ে ধরা পরেন টাইগার অধিনায়ক। করেছেন ১৪ বলে ১ ছক্কায় ১৯ রান।

এরপর মিডল অর্ডারে নেমেও ভাগ্যের খাতা খুলতে পারলেন না সৌম্য সরকার। তিনিও একই ভঙ্গিতে মেরেছিলেন বড় ছয়। ক্রিশ্চিয়ানের বলে জায়গা বানিয়ে বল মাঠ ছাড়া করতে গিয়ে লং অফে সহজ ক্যাচে ধরা পরেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। করেছেন ১৮ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ১৬ রান।

এরপর নাথান এলিস বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন নুরুল হাসান। ১৩ বলে ১ ছক্কায় করেন ৮ রান। অফিফকেও ফেরান নাথান এলিস। ১১ বলে ১ ছক্কায় ১০ রান করে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আফিফ হোসেন। এরপর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন শূন্য রানে রান আউট হয়ে ফিরলেও অপরাজিত থেকে যান মোসাদ্দেক হোসেন (৪) ও মোস্তাফিজুর রহমান (০)।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নাথান এলিস ও ডেনিয়েল ক্রিস্টিয়ান ২টি করে এবং অ্যাস্টোন টার্নার, অ্যাস্টোন আগার ও এ্যাডাম জম্পা ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ সেরা এবং সিরিজ সেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত