জিতেও বিদায় নিতে হলো রোনালদোর জুভেন্টাসকে

প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২১, ১৪:৪৪

ঘরের মাঠে পোর্তোর বিপক্ষে জিতেও চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে রোনালদোর জুভেন্টাসকে। চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম লেগে স্বাগতিক পোর্তোর বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে এসেছিল জুভিরা। তবে দ্বিতীয় লেগে ৩-২ গোলে জিতেছে রোনালদোরা। কিন্তু দ্বিতীয় লেগে জিতেও অ্যাওয়ে গোলের সুবাধে ৪-৪ গোলের ড্র নিয়ে এবারও চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নিতে হয়েছে জুভেন্টাসকে। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিল জুভরা।

মঙ্গলবার (৯ মার্চ) দিবাগত রাতে জুভেন্টাস স্টেডিয়ামে এফসি দ্বিতীয় লেগে পোর্তোকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে আন্দ্রে পিরলোর শিষ্যরা। প্রথম লেগে ২-১ গোলে হেরেছিল জুভিরা। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ গোলের ড্র নিয়ে অ্যাওয়ে গোলের সুবাধে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে এফসি পোর্তো।

আগের মৌসুমেও ঠিক একইভাবে বিদায় নিতে হয়েছিল জুভেন্টাসকে। লিওঁর মাঠে গিয়ে তারা হেরে এসেছিল ১-০ গোলে। ফিরতি ম্যাচে নিজেদের মাঠে ২-১ গোলে জেতার পর গোল ব্যবধান ২-২ হলেও অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নিয়ে জুভদের বিদায় করে দিয়েছিল লিওঁ। এবারও ঠিক একই কাণ্ড রোনালদোদের সঙ্গে।

জুভেন্টাসকে বাঁচানোর জন্য কালও রোনালদোর দিকেই তাকিয়ে ছিলেন ক্লাবটার সমর্থকেরা। এমন রাতগুলোতেই তো জ্বলে ওঠেন রোনালদো! এই ম্যাচের জন্য লিগে লাৎসিওর বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচেও রোনালদোকে বিশ্রামে রেখেছিলেন জুভ কোচ আন্দ্রেয়া পিরলো, সে ম্যাচে মৌসুমে নিজেদের সেরা ফুটবলটা খেলেই জিতেছে জুভেন্টাস। কিন্তু কাল যখন রোনালদোর নায়ক হওয়ার দিন, রোনালদোকে খুঁজেই পাওয়া গেল না মাঠে!

প্রথম লেগে মেহদি তারেমি ও মুসা মারেগার গোলের জবাবে সান্ত্বনাসূচক গোল করেছিলেন জুভেন্টাসের ইতালিয়ান উইঙ্গার ফেদেরিকো কিয়েসা। দ্বিতীয় লেগেও তিনি বলতে গেলে একাই টানলেন দলকে। দুই গোল করেছেন, জুভেন্টাসের হয়ে আরেক গোল ফরাসি সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার আদ্রিয়ান রাবিওর। ওদিকে পোর্তোর হয়ে জোড়া গোল করেছেন সের্হিও অলিভিয়েরা। একটি অ্যাওয়ে গোল বেশি করার সুবাদে পরের রাউন্ডে উঠে গেছে পোর্তো।

এদিন ম্যাচের ৫৪ মিনিটে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছিলেন পোর্তোর ইরানিয়ান স্ট্রাইকার মেহদি তারেমি। এতে ১০ জনের দল হয়ে পরে পোর্তো। তা সত্ত্বেও ১০ জনের পোর্তোকে আরও একটি গোল বেশি দিয়ে কোয়ার্টারে উঠতে পারেনি জুভেন্টাস। প্রায় ৭০ মিনিটের বেশি ১০ জনের দল নিয়ে খেলেছে পর্তুগিজ ক্লাবটি।

এদিন ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় জুভেন্টাস। ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে কলম্বিয়ান রাইটব্যাক হুয়ান কুয়াদ্রাদোর ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে আরেকটু হলেই গোল করে দিচ্ছিলেন মোরাতা, আর্জেন্টাইন গোলকিপার অগুস্তিন মার্চেসিনের কল্যাণে সে যাত্রায় বেঁচে যায় পোর্তো। পরের মিনিটেই পোর্তো বুঝিয়ে দেয়, শুধু জুভেন্টাসের আক্রমণ সহ্য করার জন্যই তুরিনে আসেনি তারা। নাইজেরিয়ান লেফটব্যাক জাইদু সানুসির কাটব্যাকে বক্সে থাকা ইরানিয়ান স্ট্রাইকার মেহদি তারেমি শট নিলে অবিশ্বাস্যভাবে সেটা আটকে দেন জুভেন্টাসের গোলকিপার ভইচেখ সেজনি। ফিরতি বলে হেড করলে সেটা আবার পোস্টে লাগে জুভেন্টাসের।

তবে বেশিক্ষণ জাল অক্ষত রাখতে পারেনি জুভিরা। ম্যাচের ১৯ মিনিটে পর্তুগিজ মিডফিল্ডার সার্জিও অলিভেইরার সফল স্পট কিকে পিছিয়ে পড়ে রোনালদোরা। ১৭ মিনিটের সময় ডি-বক্সে তারেমিকে পেছন থেকে ফাউল করলে পেনাল্টি পায় পোর্তো। শেষ হয়ে যায় ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের অ্যাওয়ে গোলের ন্যূনতম স্বস্তিটুকুও।

ম্যাচের ২৭ মিনিটে কুয়াদ্রাদোর আরেকটা ক্রস আয়ত্তে এনে মোরাতা শট করলেও আবার চীনের প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে যান মার্চেসিন। ৩০ মিনিটে কিয়েসার একটা শটও একইভাবে আটকে দেন এই আর্জেন্টাইন গোলকিপার। ওদিকে জুভের ওয়েলশ মিডফিল্ডার অ্যারন র‍্যামসেও বেশ কয়েকটা গোলের সুযোগ নষ্ট করেন। পরে প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে এই ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় পোর্তো।

বিরতি থেকে ফিরে এসে পোর্তোকে ভালোভাবে চেপে ধরে জুভেন্টাস। এর ফলও পেয়ে যায় ধ্রুত। ম্যাচের ৪৯ মিনিটে বোনুচ্চির লং বল আয়ত্তে এনে গোল করার জন্য কিয়েসার পাতে সাজিয়ে দেন রোনালদো। ডান পায়ের দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে দলকে সমতায় ফেরান এই ইতালিয়ান রাইট উইঙ্গার।

এর কিছুক্ষণ পরেই বড় ধাক্কাটা খায় পোর্তো; তিন মিনিটে জোড়া হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তারেমি। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে ফাউল করে একটা হলুদ কার্ড দেখেছিলেন, তার দুই মিনিট পর রেফারি অফসাইডের বাঁশি বাজালেও জোরে লাথি মেরে বল বাইরে পাঠিয়ে দেন এই ইরানিয়ান স্ট্রাইকার। রেফারির বাঁশি বাজানোর পরও কেন এই অবাধ্যতা, সে কারণে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখানো হয় এই স্ট্রাইকারকে। ১০ জনের দল নিয়ে খেলা শুরু করে পোর্তো।

তারেমি চলে যাওয়ার ঠিক পর পর দুর্দান্ত একটা গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন জুভ ফরোয়ার্ড কিয়েসা। মার্চেসিনকে বোকা বানিয়ে গোলমুখে চলে গেলেও বর্ষীয়ান পর্তুগিজ সেন্টারব্যাক পেপের কারণে গোল করতে পারেননি এই উইঙ্গার, পোস্টে লাগিয়েছেন। গোটা ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলেছেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক সেন্টারব্যাক পেপে।

তার ছয় মিনিট পরেই আবারো কিয়েসার গোলে এগিয়ে যায় জুভিরা। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে ডান দিক থেকে কুয়াদরাদোর দারুণ ক্রস ছয় গজ বক্সে পেয়ে হেডে গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়ে নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করেন ২৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।

এরপর ম্যাচের ৭৮ মিনিটে কুয়াদ্রাদোর ক্রস থেকে রোনালদো গোল করার এক সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। যোগ করা সময়ে কুয়াদ্রাদো নিজেই এবার গোল করার জন্য এগিয়ে আসেন, যদিও তার বিদ্যুৎ–গতির শট ক্রসবারে লেগে পোর্তোকে বাঁচিয়ে দেয়। ৯০ মিনিট শেষে জুভিরা ২-১ গোলে এগিয়ে, দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৩ সমতায় থেকে নির্ধারিত সময় শেষ করে। এরপর শুরু হয় অতিরিক্ত সময়ের খেলা।

অতিরিক্ত সময়ের ১১৫ মিনিটে সের্হিও অলিভিয়েরার ফ্রি-কিকে এগিয়ে যায় পোর্তো, মহামূল্যবান বাড়তি এক অ্যাওয়ে গোলও পেয়ে যায় তাতেই। এর দুই মিনিট পর রাবিওর হেডে আবারও ম্যাচে এগিয়ে যায় জুভেন্টাস। এতে ৪-৪ গোলে সমতায় থাকে। পরে বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হলে এই ৪-৪ গোলের ড্র নিয়ে অ্যাওয়ে গোলের সুবাধে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে এফসি পোর্তো। এদিকে এই ম্যাচ জিতেও বিদায় নিতে হল রোনালদোর জুভেন্টাসকে।

ইতালির সেরা জুভেন্টাসকে ইউরোপের সেরা বানানোর প্রত্যয় নিয়ে বছর তিনেক আগে তুরিনের মাটিতে পা রেখেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের বরপুত্র রোনালদো। কিন্তু প্রথম বছরে কোয়ার্টার ফাইনালে, দ্বিতীয় বছরে শেষ ষোলোতে বিদায়ের পর এবারও শেষ ষোলোতেই শেষ রোনালদোর চ্যাম্পিয়নস লিগ অভিযান। গত দুই বছর আয়াক্স ও লিওঁর হাতে বিদায় নেওয়ার পর এবারে রোনালদোদের ‘ঘাতক’ হিসেবে আবির্ভূত এফসি পোর্তো—রোনালদোরই দেশ পর্তুগালের ক্লাব।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত