টিম অলীকের আবেগঘন স্ট্যাটাস

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০১৯, ১৭:২৩

আমরা অলীক। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০১৮ তে আমাদের লুনার ভিআর প্রোজেক্ট, বেস্ট ইউজ অফ ডেটা ক্যাটাগরিতে গ্লোবাল উইনার হিসেবে নির্বাচিত হয়। গ্লোবাল উইনার হিসেবে নাসার আর্থ সায়েন্স ডিভিশন (NASA Earth Science Division) আমাদের আগামী ২১ জুলাই, ২০১৯ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত কেনেডি স্পেস সেন্টার এ তিন দিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায়। তিন দিনের এই আয়োজনের অনুষ্ঠান সূচীঃ

২১ জুলাই,২০১৯ - রকেট উৎক্ষেপণ - স্পেস এক্স ফ্যালকন নাইন, সিআরএস -১৮
২২ জুলাই,২০১৯ - স্পেস লাইফ সায়েন্স ল্যাব (SLSL) এ নাসার বিশেষজ্ঞদের সামনে ২০১৮ সালের বিজয়ীদের প্রজেক্ট প্রেজেন্টেশন
২৩ জুলাই,২০১৯ - কেনেডি স্পেস সেন্টার (KSC) ঘুরে দেখা

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এ আমরা জানতে পারি যে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০১৮ এ আমরা বিজয়ী হয়েছি। গ্লোবাল অর্গানাইজিং টিম-এর কমিউনিটি ম্যানেজার আমাদের ইমেইল করে অভিনন্দন জানান। পরবর্তীতে ২৯ মে ২০১৯ আমাদের এবং লোকাল লিডসহ আট জনকে আরেকটি ইমেইল এর মাধ্যমে উনি জানান যে জুলাই মাসে আমাদের উইনিং ট্রিপটি আয়োজিত হতে যাচ্ছে এবং আমরা চাইলে আমাদের সাথে একজন করে অতিথি নিয়ে যেতে পারবো। এই ইমেইলে আরও জানানো হয় যে সম্পূর্ন ট্রিপ-এ থাকা, খাওয়া এবং যাতায়াত খরচ আমাদের নিজেদের বহন করতে হবে।

লোকাল অর্গানাইজাররা খরচের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন এবং তারাই গ্লোবাল অর্গানাইজিং টিমের সাথে যোগাযোগ করবেন বলে জানান। লোকাল অর্গানাইজারদেরকে আমরা অলীকের ৫ জন সদস্য'র সাথে ৩ জন অতিথির লিস্ট পাঠাই যাদের মধ্যে একজন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে এবং সেই সাথে উল্লেখ করি যে, আমাদের অতিথিরা নিজ নিজ খরচ বহন করবেন। এরপর ৩০ মে ২০১৯ তারিখে বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ১৩ জনের একটা দলের তালিকা community manager -কে পাঠানো হয়।

২১ জুন ২০১৯ তারিখে আমাদের নাসার আর্থ সায়েন্স বিভাগ প্রত্যেকের নামে আলাদা আলাদা আমন্ত্রণ পত্র পাঠায়। উল্লেখ্য যে আমাদের সহ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অতিথির আমন্ত্রণ পত্র আসলেও বাকি দুই জন অতিথির আমন্ত্রণ পত্র আসে না।

এরপর আমাদের জানানো হয়, আইসিটি ডিভিশন আমাদের সকল খরচ বহন করবে এবং সেই সাথে নাসাকে ধন্যবাদ দেয়ার জন্য কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা আমাদের সাথে যুক্ত হবেন । তারা আরও জানান আমাদের মেন্টরের খরচ তারা বহন করবেন না। পরবর্তীতে মেন্টর স্যার আমাদের ইউনিভার্সিটি এবং ইউজিসি থেকে তার খরচের ব্যবস্থা করেন।

২৭ জুন আইসিটি ডিভিশন থেকে একটি সরকারি আদেশপত্র* প্রকাশ করা হয়, যেখানে আইসিটি ডিভিশন থেকে ৬ জন সহ সর্বমোট ১৬ জনের নাম উল্লেখ থাকে (আমাদের অতিথি ছাড়া)। যাদের মধ্যে ১৩ জনের খরচ আইসিটি ডিভিশন বহন করবে। আদেশপত্রে উল্লেখ থাকে উক্ত ১৬ জন শুধুমাত্র স্পেস এক্স ফ্যালকন নাইন, সিআরএস -১৮ এর উৎক্ষেপণ দেখার জন্য ২১ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থান করবেন।

এর আগে, আমরা ২৬ জুন দ্রুত ভিসা আবেদন সম্পন্ন করার জন্য যাবতীয় কাগজপত্র সহ আবেদন ফি লোকাল অর্গানাইজারদের কাছে দিয়ে আসি। ১ জুলাই তারা বিজনেস/টুরিস্ট (B1/B2) ভিসা আবেদন সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে জরুরী ভিত্তিতে ১১ জুলাই সকাল ১১ টায় আমরা ৫ জন ও লোকাল অর্গানাইজার সহ মোট ৮ জনের গ্রুপের ভিসা সাক্ষাতকার এর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান।এখানে উল্লেখ্য যে সাধারণ পদ্ধতিতে আগামী আগস্ট এর পূর্বে কোন ভিসা সাক্ষাতকার এর ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল না। বাকি ৮ জনের মধ্যে ২ জনের আগে থেকে ভিসা ছিল এবং আইসিটি ডিভিশন এর ৬ জন কর্মকর্তার ভিসার প্রক্রিয়াও আমাদের আগেই সম্পন্ন হয়েছে বলে আমরা জানতে পারি। এরপর ১১ জুলাই আমরা সাক্ষাতকার দিতে যাই এবং আমাদের ৮ জনের গ্রুপের ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়। আমরা তৎক্ষণাৎ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর স্যারকে ভিসা প্রত্যাখ্যিত হওয়ার কথা জানাই। তিনি এই ভিসা জটিলতা সমাধানে সর্বোচ্চ সহযোগিতার চেষ্টা করবেন বলে জানান।

আমরা আমাদের সাক্ষাতকারে নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বলি এবং আরও বলি যে, আমরা গ্লোবাল উইনার হিসেবে নাসার আমন্ত্রণে তিন দিনের অনুষ্ঠানে কেনেডি স্পেস সেন্টার এ যাচ্ছি, যা আমাদের আমন্ত্রণ পত্রে উল্লেখ ছিল ।

পরবর্তীতে ১২ তারিখ রাতে গ্লোবাল অর্গানাইজারদের আমরা ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কথা জানাই এবং তারা ইউ এস এম্বাসি ঢাকার সাথে যোগাযোগ করবে বলে জানান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের ইনভাইটেশন সম্পর্কে নাসার আর্থ সায়েন্স ডিভিশন সরাসরি ইউ এস এম্বাসিকে অবগত করে।

ইতিমধ্যে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর স্যার মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইউ এস এম্বাসিতে যোগাযোগ করা হলে, ১৫ জুলাই তারা আমাদের পূনঃআবেদন করার জন্য বলেন এবং বিশেষ প্রাধান্যের ভিত্তিতে আমাদের আবার ভিসা সাক্ষাতকার এর ব্যবস্থা করবেন বলে জানান। প্রসঙ্গত, ইউ এস ভিসা একবার প্রত্যাখ্যান করা হলে সেই পূর্বের আবেদন পূনঃবিবেচনার কোন ব্যবস্থা নেই ।

লোকাল অরগানাইজারদের মধ্যস্থতায় পূর্বে গ্রুপ হিসেবে আবেদন করায় পরবর্তীতে নতুন ভিসা আবেদনে একটি জটিলতার সৃষ্টি হয়। যার ফলে আমরা ১৭ জুলাই সকাল পর্যন্ত ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে থাকি। এর মধ্যে ইউ এস এম্বাসি জানায় তারা চেষ্টা করা সত্ত্বেও ২২ জুলাই এর পূর্বে কোন সাক্ষাতকার এর ব্যবস্থা করতে পারবে না । (শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি) তাই আমরা পরবর্তীতে ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া স্থগিত করি।

এরপর আমরা নিশ্চিত হয়ে যাই যে, আমরা আমাদের উইনিং ট্রিপ-এ যেতে পারছি না। গ্লোবাল উইনার হওয়ার পরেও এমন পরিস্থিতি আমরা আশা করিনি, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।

আমরা মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর স্যার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইউ এস এম্বাসির কাছে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি শেষচেষ্টা করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।

নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-এর গ্লোবাল অর্গানাইজিং টিম এবং নাসা আর্থ সায়েন্স ডিভিশনকে অশেষ ধন্যবাদ আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার জন্য।

আমাদের শ্রদ্ধেয় মেন্টর বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী স্যারকেও অশেষ ধন্যবাদ সবসময় আমাদের পাশে থাকার জন্য।

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত