প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমনেও পুলিশকে প্রস্তুত হতে হবে

প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪, ১৫:৪৮

সাহস প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষ যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরাধও কিন্তু ভিন্ন ভিন্নভাবে হচ্ছে। নতুন নতুন মাত্রায় অপরাধ দেখা দিচ্ছে। শেখ হাসিনা আরো বলেন, অপরাধের সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে মোকাবিলা করার পদ্ধতিও যদি সমানতালে না চলে, তাহলে কিন্তু যথাযথভাবে সেটা করা যায় না। এ জন্যই আমরা সেভাবেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে পুলিশ সপ্তাহ- ২০২৪' উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সভায় দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। 'স্মার্ট পুলিশ, স্মার্ট দেশ, শান্তি প্রগতির বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্যে গত মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে ছয় দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহ-২০২৪ শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের পুলিশ বাহিনী এখন মানুষের বন্ধু হিসেবে কাজ করছে। আজকাল মানুষ আর আগের মতো পুলিশকে ভয় পায় না। এখন তারা আস্থা ফিরে পেয়েছে। পুলিশকে নিজের বন্ধু এবং আস্থার জায়গা হিসেবে সাধারণ মানুষ বিবেচনা করে। মানুষের এই বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জন করতে হবে।

তিনি বলেন, মানুষের জন্য কাজ করে আপনারা তাদের হৃদয়ে একটা স্থান করে নিয়েছেন। মানুষের সেই আস্থা ও বিশ্বাস সবচেয়ে বড় কথা। যেকোনো কর্মস্থলেই হোক না কেন, সেখানে নারী, পুরুষ, শিশু যেই থাকুক, তাদের আপনজন হিসেবে বিবেচনা করেই দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের সেবা করবেন, এটা সবাই চায়। তিনি নিজ নিজ কর্মস্থলে অধস্তনদের তার এই নির্দেশনা জানানো এবং দেশের মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করে যাওয়ার জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, যেহেতু ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকার ফলে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা বিরাজমান, পাশাপাশি পরিস্থিতিও সেভাবে স্থিতিশীল রয়েছে। কাজেই আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমরা এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, পুলিশকে মারা, পুলিশ হত্যাসহ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের যে মামলাগুলো রয়েছে, এর দীর্ঘসূত্রতা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এই মামলাগুলো কিন্তু যথাযথভাবে চলে না। তিনি বলেন, আমি মনে করি যারা এ ধরনের অপরাধ করে তাদের মামলাগুলো যদি যথাযথভাবে চলে এবং যদি দ্রুত সাজা হয়ে যায়, তাহলে আর অপরাধ করার সাহস পাবে না।

সেই লক্ষ্যে আগামীতে যেন আর কেউ এভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে না পারে সেভাবে পুলিশ বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ফিলিডিনের ওপর যে হামলা এবং গণহত্যা চলছে, বাংলাদেশ কিন্তু এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমি প্রতিটি জায়গায় এর প্রতিবাদ করেছি। ফিলিস্তিনের নিরীহ নারী ও শিশুদের ওপর অকথ্য অত্যাচার-নির্যাতন ও গণহত্যা যে চলছে, শুধু তাই নয় তাদের খাদ্য, চিকিৎসা হাসপাতাল সবকিছুতে এমনকি যেখানে রিলিফ বিতরণ হয় সেখানেও আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এর থেকে জঘন্য এবং মানবতাবিরোধী কাজ আর হতে পারে না। আর এর প্রভাবটা বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়ছে এবং আমাদের ওপরও কিন্তু সেই ধাক্কা আসছে। যদিও আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে এটা মোকাবিলা করার। সরকারপ্রধান বলেন, রাজনীতির নামে হোক আর সন্ত্রাসের নামে হোক, আইন যাতে নিজের হাতে তুলে নিতে না পারে এবং আইন-শৃঙ্খলা ও মানুষের জানমাল এবং জাতীয় সম্পদের ক্ষতি করতে না পারে, এ ব্যাপারে পুলিশকে অবিচল থাকতে হবে। যখনই যেটা দরকার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমি আপনাদের কাছে সেটাই কামনা করি। তিনি বলেন, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে নিতে এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে।

আওয়ামী লীগ সরকারে এসে জনগণের ক্ষমতা আবার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই জনগণের শান্তি-শৃঙ্খলা জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাই, প্রতি মেয়াদে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা দেই এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় আজকে বাংলাদেশকে কেউ আর তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের চোখে দেখতে পারে না। বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে নিজের একটা স্থান করে নিতে পেরেছে। এখন বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সেই ভাবমূর্তি ধরে রেখে আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সেই জন্য আমাদের যেকোনো কাজ, প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে শুরু করে জানমালের নিরাপত্তা, যেে অপরাধ, সেটা মোকাবিলা এবং সাজার ব্যবস্থাকরণে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা সবার কর্তব্য। সেভাবেই আপনারা কাজ করে যাবেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আমরা বাংলাদেশকে আরো উন্নত-সমৃদ্ধ করতে চাই, যেন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত