জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০১৮, ১২:৩০

১.
‘আজ্ঞে আমি ঢাকার ভানু’– কথাটি কার না কানে বাজে? এই নস্টালজিক আত্মকথক আর কেউ নন, বাংলা চলচ্চিত্রের হাস্যকৌতুকের দিকপাল, অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেতা ভানু বন্দোপাধ্যায়। বিশেষ করে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে হাস্যকৌতুকময় অভিনয়ের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দিকপাল। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২০ সালের ২৬ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষণজন্মা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। দুইটি হিন্দি ছবিসহ ভানু অভিনীত সর্বমোট চলচ্চিত্রের সংখ্যা ২৩১টি। ২২৯ টি বাংলা ছবিতে অভিয় করেছেন অসামান্য প্রতিভাধর সপ্রতিভ অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য যে, ৬২ বছর বয়সে ১৯৮৩ সালের ৪ মার্চ মানুষ হাসানোর অসামান্য এই মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন। 

২.
বাঙালি নাকি ‘স্ত্রী লিঙ্গ’! তা হলে শব্দটির লিঙ্গান্তর করলে কী হবে? কেন ‘বাঙাল’! ‘জনপ্রিয়’ এই ব্যাখ্যাটি বঙ্গ জীবনে হাস্যরসের মোড়কে যিনি পেশ করেছিলেন তাঁর নাম সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু কী বাঙালি-বাঙাল! ‘মাসীমা মালপো খামু’, ‘টিনের বাক্সে বারো টাকা’, ‘নাগো মিনু আমাগো থার্মোমিটারও নাই, বার্নলও নাই’, ‘দ্রিমু য্রখন ত্রখন স্রব ত্রাইতেই দ্রিমু’... এমন হাজারো সংলাপ বাঙালির মুখে মুখে ফিরত তখন! ফিরত কেন, এখনও তো নানা হাস্য-আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসে এই সব সংলাপ। ভাবছেন, এ সবের স্রষ্টা হিসেবে খ্যাত মানুষটির নাম তো ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়! ঠিকই, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোশাকি নাম ছিল সাম্যময়। তাঁর পরিবার কমিউনিজমে বিশ্বাসী ছিল। তাই, মাতামহ যোগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দেওয়া ‘সাম্যময়’ নাম নিয়ে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রসিকতা’ ছিল— that I am communist, I bear it in my name.

৩.
হয়ে যেতে পারতেন কট্টর স্বদেশী। হতে পারতেন পার্টির হোলটাইমার, হয়ে গেলেন ‘কমেডিয়ান’ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়! ভানুর অভিনয় শৈলী, অভিব্যক্তি, বাচনভঙ্গি, কণ্ঠস্বর সমস্ত মিলিয়েই হাস্যকৌতুকের দিকপাল ভানু। দর্শক-শ্রোতাদের কখনো সুড়সুড়ি দিয়ে হাসানোর বৃথা চেষ্টা তিনি করেন নি। শ্রোতা-দর্শকদের হাসানোর অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী ভানু। সচরাচর কৌতুক শিল্পীদের মাঝে তিনি কেবল অসামান্য নন-বিরলও। এই অসামান্য প্রতিভার মানুষটিকে যোগ্য সম্মান আমরা দিতে পারি নি। আমাদের একজন চলচ্চিত্রকার কিংবা সাংস্কৃতিক আয়োজনে তাকে এখানে কেউ ডাকে নি। এই লজ্জা আমাদের বহন করতেই হবে। অথচ ঢাকা থেকে কলকাতায় চলে এসে বদলেই গেল দেশ অন্ত প্রাণ এক ‘সাম্যময়’ ছেলের জীবন। পরবর্তীতে ‘বাঙাল’ ভাষাকে নিজের শিল্প-জীবন দিয়ে খ্যাতির অসীম উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। হাস্যকৌতুক শিল্পে নতুন এক ঘরানার জন্মও হয়েছিল তাঁর হাত ধরে। মঞ্চ-চলচ্চিত্র-শ্রুতিনাট্য— স্বরক্ষেপণই জানিয়ে দিত তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। বাংলা সংস্কৃতির বিশিষ্ট শিল্পী ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতির প্রতি আবারো জানাই শ্রদ্ধার্ঘ্য।

৪.
হাস্যকৌতুকের দিকপাল অভিনেতা ঢাকার ভানু, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় (জন্ম: ২৭ আগস্ট, ১৯২০ - মৃত্যু: ৪ মার্চ, ১৯৮৩) খাঁটি বাঙাল এবং অনিবার্যরূপে আমাদেরই লোক। পূর্ববঙ্গের তো বটেই। খাস ঢাকারও। ঢাকার স্থানীয় কুট্টি ভাষাকে পশ্চিমবাংলাজুড়ে ছড়িয়ে ঢাকার ভানু খ্যাতিমান হয়েছিলেন। তাঁর কৌতুক নকশাসমূহে এবং বাংলা চলচ্চিত্রে নিজের সংলাপগুলো নির্ভেজাল ঢাকার কুট্টি ভাষায় প্রয়োগ ও প্রচার করে নিজেকে ঢাকার ভানু রূপে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। এমনিতে পূর্ববঙ্গীয় বাংলা ভাষা নিয়ে পশ্চিমবাংলার বাঙালিদের নাক সিঁটকান, ব্যঙ্গোক্তি, বিদ্রূপ, হাসি-তামাশার কমতি ছিল না। পূর্ববাংলার প্রচলিত বাংলা ভাষাকে তারা রীতিমত উপহাস করত। এর ওপর ঢাকার স্থানীয় কুট্টি ভাষা তাদের পক্ষে সহ্য-হজম করা কঠিন থেকে কঠিনতর ছিল। ভানুর ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষা নিশ্চিত তাদের কান গরম করে দিত। তাচ্ছিল্যের ঢাকাইয়া ভাষাকে পশ্চিমবাংলার বাঙালিদের উপর চাপিয়ে উল্টো তাদেরই নাজেহাল করে ছেড়েছেন। ভানুর অসাধারণ কৌতুকের ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষা তারা নিরুপায়ে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ভানুর কৌতুকে মানুষ হেসেছে-নির্মল আনন্দ উপভোগ করেছে। ভানুর কৌতুক কেবল হাসি সর্বস্ব ছিল না। তির্যক ছিল বহুলাংশে। অসঙ্গতি-অনাচারের শৈল্পিক উপহাস করেছেন কৌতুকের মাধ্যমে। সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীতি সকল ক্ষেত্রের অসঙ্গতি নিয়ে কৌতুকে তির্যক করেছেন-খোঁচা দিয়েছেন। ভানুর কৌতুকের উল্লেখযোগ্য দিকটি অসঙ্গতিকে উপহাস করা। সেটা সার্থকভাবে তিনি করেছেন। দম ফাটানো হাসিতে লুটোপুটি খেলেও-ভানুর তির্যকপূর্ণ কৌতুক শ্রোতাদের বুঝতে বেগ পেতে হত না। সহজ-সাবলীল এবং সর্বজন বোধগম্যে ভানুর কৌতুকের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি।

৫.
সাদাকালোর সেই সেলুলয়েডের ম্যাজিকে যতবারই তাঁকে দেখা গেছে, ততবারই অবাক হয়েছেন দর্শকরা। কখনো স্যুট-প্যান্ট, আবার কখনো কেতাদুরস্ত ধুতি-পাঞ্জাবি পরে ঝকঝকে বাঙাল ভাষায় দর্শকদের মনোরঞ্জনে যাঁর জুড়ি মেলা ভার ছিল, তিনি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি নিজেকে সব সময়ই এক্কেবারে বাংলাদেশের পোলা বলে পরিচয় দিতেই সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। নিজের পরিচয় ঘোষণা করে বলতেন-‘আমি কইলাম ঢাকার ভানু।’ অথচ একাত্তরের বিজয়ের পর স্বাধীন বাংলাদেশে পশ্চিম বাংলার অনেক গুণী-শিল্পীদের আগমন ঘটেছিল। সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগে তারা ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু ভানুকে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ঢাকায় কেউ আনে নি। অগত্যা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। বিটিভি তাকে নিয়ে অনুষ্ঠানও সমপ্রচার করেছিল। সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, কৌতুক পরিবেশন করেছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। জানিনা বিটিভি'র আর্কাইভে সেই অনুষ্ঠানটি সংরক্ষিত আছে কিনা? বিটিভি'র সাক্ষাৎকারে ভানু আক্ষেপে-শ্লেষে বলেছিলেন_ আমাকে আপনারা কেউ ডাকলেন না। আপনাদের ডাকের অপেক্ষায় বহুদিন ছিলাম। কিন্তু আপনারা কেউ আমাকে ডাকেন নি। আমরা নিশ্চয় ভানুর প্রতি সুবিচার করিনি। ঢাকার ভানুকে ঢাকা যোগ্য সম্মান দিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এই লজ্জা আর মোচন হবে না। নিজেকে কেবল পূর্ববঙ্গীয় নয়-খাস ঢাকার বলেই গর্ব করে বলতেন-আমি বাঙাল। এতে তাঁর হীনমন্যতা ছিল না। ছিল প্রচণ্ড অহংকার বোধ। 

৬.
১৯২০ সালের ২৬ আগস্ট বাংলাদেশের ঢাকার বিক্রমপুরের পাঁচগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর আসল নাম সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়। আর ডাকনাম ছিল ভানু। পরবর্তীকালে সাম্যময় থেকে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় নামেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। বাবা জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। মা সুনীতি দেবী। জিতেন্দ্রনাথের ছাত্র ছিলেন পরবর্তীকালের দুই বিখ্যাত অভিনেতা শিশির কুমার ভাদুড়ি ও অহীন্দ্র চৌধুরী। ঢাকার ভানু কেবল পশ্চিমবাংলায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না। মাতৃভূমি পূর্ববঙ্গেও জনপ্রিয় ছিলেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র পূর্ব পাকিস্তানে প্রদর্শনে বিধি নিষেধ ছিল না। ১৯৪৭-এর মধ্য আগস্টের দেশভাগের পরও ভারতীয় হিন্দি-বাংলা ছবির বিশাল বাজার ছিল পূর্ববাংলায়। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় জেনারেল আইয়ুব খান তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করে দেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পূর্ববর্তী বছরগুলোতে পূর্ববাংলায় কলকাতায় নির্মিত বাংলা এবং মুম্বাইর হিন্দি ছবি অবাধে প্রদর্শিত হত। সে কারণে পূর্ববঙ্গের দর্শকদের কাছে ভানু অপরিচিত-অজ্ঞাত কেউ ছিলেন না। বরযাত্রী (১৯৫১), পাশের বাড়ি (১৯৫২), সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩), ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪), ভানু পেল লটারী (১৯৫৮), যমালয়ে জীবন্ত মানুষ (১৯৫৮), পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (১৯৫৯), ভানু অভিনীত অনেক ছবি এখানে নিয়মিত প্রদর্শিত হবার কারণে ভানু দুই বাংলায়ই সমান জনপ্রিয় ছিলেন।

৭.
আট-দশ বছর বয়েস থেকে ‘গুরু’ বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত। তাঁরই সাইকেলে চেপে ঘুরতেন। বুকের আড়ালে নিষিদ্ধ বই, টিফিন বক্সে রিভলভার। চলত পাচার করা। দীনেশ গুপ্ত মারা যাওয়ার পর জড়িয়ে পড়েন ঢাকায় ‘অনুশীলন সমিতি’র কাজে। ’৪১ সালে, যখন বিএ পড়ছেন, কোনও এক ব্রিটিশ ইনফর্মার খুন হল অনুশীলন সমিতির হাতে। সে দলের পাণ্ডা ছিলেন উনি। ফলে হুলিয়া জারি। পালিয়ে আসতে হল পুব বাংলা ছেড়ে। তা’ও আবার কীসে? না, বন্ধু গোপাল মিঞার গাড়িতে, সিটের নীচে পাটাতনে লুকিয়ে। তত দিনে তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজে অধ্যাপক বিজ্ঞানী সত্যেন বসুর প্রিয়পাত্র। রমেশ মজুমদার, মোহিতলাল মজুমদার, কবি জসীমুদ্দিনের প্রিয় ছাত্র। ক্লাসের বাইরে সত্যেন বসুর আবদারে তাঁকে প্রায়ই ঢাকাই কুট্টিদের নিয়ে কমিক শোনাতে বসেন। বলতেন, ‘‘ছিলাম ‘বাঁড়ুজ্জে’, হয়ে গেলাম ‘ভাঁড়ুজ্জে’!’’ বিক্রমপুরের বিখ্যাত মাস্টার জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ঢাকার নবাব এস্টেটের মোক্তার। মা সুনীতিদেবী। সরকারি শিক্ষা বিভাগের চাকুরে। তাঁরও নামজাদা বংশ। সরোজিনী নাইডুর আত্মীয়া। তাঁদেরই ছেলে সাম্যময়। ডাকনাম ভানু। তার মঞ্চে নামাটা কিন্তু এক্কেবারেই আকস্মিক। পাড়ার নাটক দেখছিল ছোট্ট ভানু। স্টেজের নীচে দাঁড়িয়ে। ওপর থেকে কোনও এক খুদে অভিনেতা দুষ্টুমি করে লাথি কষায় মাথায়।— ‘‘হালায় ওই লাথখা’ন কুনওদিন ভুলি নাই, ওই দিনই ঠিক কইরা ছিলাম, অগো দ্যাখাইয়া ছাড়ুম।’’

৮.
চল্লিশের দশকের শুরুতে ভানু ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে স্নাতক হন। সেই সময় কিছুদিন ঢাকা রেডিওতে ঘোষক হিসেবেও কাজ করেন। জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু পরীক্ষা আর তাঁর দেওয়া হয়নি। ঢাকা শহরে সেই সময় বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তর অনুরক্ত হয়ে ওঠেন ভানু। ফলে ১৯৪১ সালে রাজরোষে পড়লেন তিনি। বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য ঢাকা শহর ত্যাগের পরোয়ানা জারি হয়। তারপরেই সাম্যময় ঢাকা ছেড়ে চলে যান কলকাতায়। পরীক্ষা আর দেওয়া হয় না। কলকাতায় চারু এভিনিউতে থাকতেন তিনি। টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানিতে একটা চাকরিও জুটে যায়। সেই সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন অফিস ও ক্লাবের অনুষ্ঠানে কৌতুক নকশা পরিবেশন করতে থাকেন এবং রীতিমতো জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠেন সে সময়। সেই জনপ্রিয়তা একসময় এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছায় যে তিনি ১৯৪৩ সালে ‘ঢাকার গাড়োয়ান’ নামে একটি কৌতুক নকশার রেকর্ড বের করেন।

৯.
ভানু কোনোদিনই ভাবেননি যে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনেতা হবেন। বরং মঞ্চে অভিনয়ের দিকেই তাঁর ঝোঁক ছিল সবচেয়ে বেশি। এরই মধ্যে ১৯৪৬ সালে ভানু বিয়ে করেন বেতার শিল্পী নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বিয়ের তিনদিন পরেই প্রথম ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান ভানু। ছবির নাম ছিল ‘জাগরণ’। অনেকে বলেন, স্ত্রী-ভাগ্যেই নাকি ভানুর উত্তরণ। তবে সিনেমার জগতে ভানুর প্রথম বাণিজ্যিক সফল ছবি নির্মল বসুর ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। এই ছবিটি বাংলা কমেডি সিনেমার ইতিহাসে একটি অন্যতম মাইলস্টোন। এক ছবিতেই বাজি মাত করেন ভানু। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে সেই সময়কার বাংলা ছবির দিকপাল অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু তার মধ্যে ভানু বিজয়ীর মুকুটটা নিজের মাথায় পরে নেন। ওই ছবিতে ভানুর সেই বিখ্যাত সংলাপ ‘মাসিমা মালপো খামু’ আজও পুরোনো হয়নি।

১০.
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রায় সব ছবিতে তাঁকেই তৈরি করতে হয়েছে কৌতুক। সংলাপ থেকে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে নিজেই গড়ে নিয়েছিলেন কমেডির নিজস্ব ভুবন। সমসাময়িকদের পেছনে ফেলে ভানুর নাম শিরোনামেই তৈরি হয় ‘ভানু পেলো লটারি’ কিংবা ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’-এর মতো ছবি। ভানু মনে করতেন বাঙালি কান্নাপ্রিয় জাতি। তাই বাঙালির কান্নাপ্রীতি ভোলানোর প্রয়াসেই ভানুর হাসির হুল্লোড় তৈরি করতেন, যা অরুণ মুখোপাধ্যায়কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভানু নিজের মুখেই বলেছেন। ভানুজায়া নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণা থেকে জানা যায়, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু নাকি মাঝে মাঝেই ফোন করে ভানুকে ডেকে পাঠাতেন বাড়িতে। বলতেন, ‘ওরে ভানু আমার মাথাটা যে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল, শিগিগির আয়, একটু রস ঢেলে মাথাটা ছাড়িয়ে দিয়ে যা।’ ১৯৬৮ থেকে ৬৯। প্রযোজকদের সঙ্গে টেকনিশিয়ানদের প্রবল সংঘাত বাধল। ভানু টেকনিশিয়ানদের পক্ষ নেওয়ায় পাঁচ বছরের জন্য ব্ল্যাক লিস্টেড করা হলো ভানুকে। এই ঘটনার প্রায় ১২ বছর আগে অভিনয়কে পেশা করবেন বলে আয়রন অ্যান্ড স্টিল কন্ট্রোল কোম্পানির চাকরিটা ছেড়েছিলেন। ফলে ফিল্ম-জগৎ হারিয়ে আঁকড়ে ধরলেন যাত্রাজগৎকে। কিছুদিনের মধ্যেই যাত্রাজগতে তোলপাড় করলেন তিনি। ভানুজায়া নীলিমা তাঁর স্মৃতিচারণায় বলেছেন, যে মানুষটি নরম বিছানা ছাড়া শুতে পারতেন না, তিনি মাঠেঘাটে ময়দানে শতরঞ্চি পেতে গাছের তলায় শুয়ে থেকেছেন।

১১.
যিনি বাড়ি থাকলে ১২টা থেকে ১টার মধ্যেই মাথায় পানি ঢেলে খেয়েদেয়ে না ঘুমিয়ে পারতেন না। বাড়িতে যতই অতিথি আসুক এই নিয়মের ব্যতিক্রম হতে পারত না। উল্টোপাল্টা খাবার খাওয়াও তিনি পছন্দ করতেন না। তিনি দিনের পর দিন ফুলুরি-মুড়ি, কিংবা জিলিপি খেয়ে স্নান-ঘুম না করে কাটিয়ে দিয়েছেন। ভানুর উল্লেখযোগ্য যাত্রাপালার মধ্যে ছিল ‘গোপাল ভাঁড়’, ‘বৈকুণ্ঠের উইল’, ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’, ‘ভৈরবমন্ত্র’, ‘শ্রীযুক্ত আলিবাবা’ প্রভৃতি।

১২.
ভানু ছিলেন যথেষ্ট জেদি মানুষ। বাঙাল পোলার একগুয়েমিতার কথা অজানা ছিল না সেই সময় কারোরই। একবারের এক ঘটনা, পশ্চিমবঙ্গের বুকে রাম চ্যাটার্জি তখন দাপুটে নেতা। চন্দননগরের এই নেতা তারকেশ্বরের বিধায়ক ছিলেন। সেই সময় মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক দলের সর্বেসর্বা ছিলেন। রাজ্যের মন্ত্রীও হন তিনি। পেশিবান মস্তান টাইপ বলেও তাঁর ঈষৎ কুখ্যাতি ছিল। সেই রাম চ্যাটার্জির কয়েকজন চ্যালাচামুন্ডা এসে একদিন ভানুকে বলল, অমুকদিন রামদার ফাংশন আছে সময়মতো পৌঁছে যাবেন। তার মানে? ভানু তো অবাক। বললেন, কে আপনাদের রামদা? তিনি বললেই আমাকে যেতে হবে নাকি? রাম চ্যাটার্জির ছেলেরা তো ভানুর এই কথায় হতবাক। সে কি মশাই। কে রামদা জিজ্ঞেস করছেন। রাম চ্যাটার্জির নাম শুনলে লোকে বাপ বাপ বলে দৌড়ায়। আর আপনি এসব বলছেন? শুনুন, গেলে ভালো, নইলে তুলে নিয়ে যাব। এবারে স্বরূপ ধরলেন ভানু। খাস বাঙাল ভাষায় বলে উঠলেন, নিয়া যাইতে পার, তবে আমার লাশ নিতে লাগব। জ্যান্ত অবস্থায় তো আমারে নিতে পারবা না। কও গিয়া তোমাগো বাপেরে। ছেলেরা ফিরে গিয়ে রাম চ্যাটার্জিকে সবিস্তারে ঘটনাটা বলল। তিনি শুনেই লাফিয়ে উঠলেন। বললেন, করেছিস কি! বাঙালের পোলাকে খেপিয়ে এসেছিস! ও যদি একবার বলে আসবে না তো কার সাধ্যি আনে! কদিন পর রাম চ্যাটার্জি স্বয়ং সদলবলে হাজির ভানুর বাড়িতে। ক্ষমাপ্রার্থনা এবং অনুরোধ। ‘ভাই কিছু মনে কোরো না। ছেলেদের তুমি ক্ষমা করে দাও। তোমার যখন সময় হবে একবার ফাংশনে এসে দাঁড়িও, নইলে আমার প্রেস্টিজ থাকবে না।’ পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে রাম চ্যাটার্জি বললেন, ‘তবে আমি কিন্তু তোমায় তুলেই নিয়ে যেতে পারতাম।’ এবার ভানু তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলে উঠলেন, পাগল! এত খাবলা খাবলা নাকি! আমারে পাইতা কই, আমি তো এক ছুটে গিয়া ছাদে উঠতাম। রাম চ্যাটার্জি বললেন, তাহলেই রেহাই পেতে ভেবেছো? ভানুর সাফ উত্তর, পাইতাম, তোমার মাথায় তো আর মাসল নাই। উপর থিকা একখানা আধলা ইট ঝাড়তাম তোমার মাথায়, তখন যাইতা কই? এরপরেই হাসিতে ফেটে পড়েন দুজনে। এই রাম চ্যাটার্জি একবার ভানুর বিষয়ে অনন্ত সিংহ (চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন খ্যাত)-কে বলেছিলেন, জানেন তো অনন্ত দা, আমি ওকে ভীষণ ভয় পাই। ও আমার চেয়ে সাহসী। আবার বলিউডের হীরালাল তো ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বলতেন, ও তো ডাকু হ্যায়। কারণ, ১৯৪৫-৪৬ সালে কোনো এক কারণে হীরালাল ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে প্রচণ্ডভাবে প্রহৃত হন।

১৩.
এক অদ্ভুত মানুষ ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। বিপ্লবী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় লেখাপড়ায় ছেদ পড়ে তাঁর, তবু কোনোদিন নিজেকে স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে দাবি করেননি। কমিক রোলেই নিজেকে বেঁধে রেখেছেন।একবার এক কমিউনিস্ট যুবক ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে মার্কসবাদ সম্পর্কে জ্ঞান দিতে এসেছে। সব শুনেটুনে ভানু বললেন, ‘আজ থেকে ৫৯ বছর আগে আমার মা-বাবা আমার নাম রেখেছিলেন সাম্যময়। তাহলে আপনি বুঝতে পারছেন তো, আমি কোনো পরিবার থেকে এসেছি। দ্যাট আই অ্যাম আ কমিউনিস্ট, আই বিয়ার ইট ইন মাই নেম। আপনি আমার চেয়ে ভালো কমিউনিস্ট কী করে হবেন?’ কমেডিয়ান ভানুর মুখে এমন সংলাপ ভাবা যায়!

১৪.
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পদ ছিল তাঁর মুখের ভাষা। ভানু তাঁর কৌতুকে নানা সময়ে সমাজের নানা বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। বাঙালি দাম্পত্য নিয়েও রয়েছে ভানুর নানা অকাট্য মন্তব্য। যেমন, বাঙালি কর্তাদের গিন্নির কাছে ৪০ মিনিট ধরে চা চাইলেও নাকি শুনতে হয় পাঁচ মিনিটের মধ্যে দিচ্ছি। এ ছাড়া ভানুর দাবি, কর্তার চোখে ধুলো পড়লে ডাক্তার খরচ হয় ২৫ টাকা, আর গিন্নির চোখে শাড়ি পড়লে গ্যাঁট থেকে বেরিয়ে যায় পাক্কা ২৫০ টাকা। এই ধরনের অসংখ্য রসিকতা ভানুর জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। অনেকে ভানুকে ভাঁড় ভাবতেন। আসলে আগেকার দিনে ভাঁড় বলা হতো পরামানিকদের। কারণ, পরামানিকরা তাদের ক্ষৌরকার্যের জিনিসপত্র বহন করার জন্য ভাঁড় ব্যবহার করতেন। যে কারণে বাবুদের বাড়িতে দাড়ি কামাতে পরামানিকরা ঢুকলে বলা হতো ভাঁড় এসেছে। তাই কেউ ভানুকে ভাঁড় বললে তিনি নিজেই জানিয়ে দিতেন, আমি খাঁটি বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং নিজের কামানো ছাড়া কখনো অন্য কারোর কামিয়ে দিইনি। অর্থাৎ কোনো অর্থেই আমি ভাঁড় নই। ভানু জীবদ্দশায় বলে গিয়েছেন, আধুনিককালে সারা পৃথিবীতে যত শিল্পী জীবিত আছেন, অর্থাৎ কাজ করছেন তার মধ্যে আমিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তার লজিক্যাল কারণ হলো, আমার চেহারা। ২৯ ইঞ্চি বুকের মাপ। সেই সঙ্গে মুখশ্রী ও গলার আওয়াজ। যা লইয়া ৩৬ বছর টিকিয়া আছি। পৃথিবীতে কোনো শিল্পী এতগুলান ড্র-ব্যাক লইয়া টিকিয়া থাকে না।

১৫.
ভানুকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দিকপালরা নানা মন্তব্য করেছেন। যেসব দিকপাল মানুষের অনেকেই আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। সেই সমস্ত দিকপালদের নানা সময়ের ভানু সম্পর্কিত মন্তব্য শোনা যাক।- বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় বলেছেন, ‘ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অজস্র ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং যেখানে বিশেষ কিছু করার নেই সেখানেও করেছেন। আশ্চর্য এই যে, যাই করেছেন, তা বহরে ছোট হোক বা বড়ই হোক, তার মধ্যে তাঁর সাবলীলতার পরিচয় রেখে গেছেন। সর্বজন প্রশংসিত বিরল অভিনেতাদের মধ্যে ভানুবাবু একজন। আমার কোনো ছবিতে যে তিনি আজ পর্যন্ত অভিনয় করেননি তার মানে এই নয় যে, আমি তাঁর অভিনয়ের কদর করি না। প্রথমে মঞ্চে ‘নতুন ইহুদী’ এবং পরে চলচ্চিত্রে ‘বসু পরিবার’, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর সময় থেকেই ভানুবাবুর সহজ ও বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করে এসেছে।’ চলচ্চিত্র পরিচালক তপন সিনহা মনে করেন, ‘আমার মনে হয় ভানুবাবু কমেডিতে একটা ধারার প্রবর্তন করেছেন। ভাঁড়ামো না করে হাস্যরসের সারবস্তুটিকে সঠিক ও সপ্রতিভভাবে প্রযুক্ত করাই তাঁর লক্ষ্য। তাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ এক নতুন স্কুলিং সৃষ্টি করেছেন।’ অভিনেতা বিকাশ রায় বলেন, ‘ভানু ইজ ইকোয়াল টু কমেডি প্লাস সিরিয়াস! আর আমি ইজ ইকোয়াল টু সিরিয়াস। লজিকের হিসাবে ভানু আমার চেয়ে বড় অভিনেতা। ওকে বলিনা বটে কিন্তু আপনাদের কাছে এই শেষ বয়সে কথাটা স্বীকার করে গেলাম।’ অভিনেতা তরুণ কুমার মনে করেন, ‘ভানুদা সুদক্ষ ও ক্ষমতাবান অভিনেতা। তবেই না লেখক তাঁর নামে গল্প লেখেন, ‘ভানু গোয়েন্দা, জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’। এটা একটা জ্বলন্ত প্রমাণ। অনেক কৌতুক অভিনেতা আসবেন, যাবেন। কিন্তু চলচ্চিত্র, নাটক এবং যাত্রার ইতিহাসে ভানুদার নাম মুছে যেতে শতাব্দী পেরিয়ে যাবে। কেননা, ভানুদা, ভানুদাই।’

১৬.
বিজ্ঞানী সত্যেন বসুর সঙ্গে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আলাপনের মজার ঘটনায় নজর দিয়ে শেষ করছি। একবার ঢাকায় কলেজ হস্টেলের ছেলেরা সরস্বতী পুজোর নেমন্তন্ন করে ডাকল। খুব হইচই। দালান জুড়ে বড় পাত করে এলাহি খাওয়াদাওয়া। কোথা থেকে একজন পঙ্গু ভিখারি খুব কাকুতিমিনতি করে খাবার চাইতে এল। ছাত্ররা তাকে ‘দূর দূর’ করে কম্পাউন্ডের বাইরে তাড়িয়ে দিল। ব্যাপারটা খেয়াল করে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় দূরে গিয়ে বসে রইলেন অন্যদের মধ্যে। এ দিকে আমোদআহ্লাদ ক্রমে সপ্তমে। খাবার নিয়ে ছোঁড়াছুঁড়িও শুরু হল। এ বার আর থাকতে না পেরে সটান হেঁশেলে চলে গেলেন ভানু। টান মেরে বাগানে খাবার ফেলতে লাগলেন। চিৎকার করে বললেন, ‘‘আমিও খাব না, কাউকে খেতেও দেব না।’’ সবাই মিলে বাধা দিতে এলে এক-আধজনকে দু-ঘা দিলেনও। এই ঘটনা নিয়ে তখন খুব হট্টগোল পড়ে যায়। সবাই প্রায় ওঁর বিরুদ্ধে। পাশে দাঁড়ান সত্যেন বসু। সেই শুরু। তারপর তো ছাত্র ভানুর ঢাকাই নকশায় মজে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় কোনও এক যাত্রা সম্মিলনী থেকে আমন্ত্রণ এলে বলেন, ‘‘আরে আমাকে কেন, ভানুকে নিয়ে যাও।’’ তাতেও তারা নাছোড় হলে তাদের রসগোল্লা খাইয়ে বিদায় দেবার সময় বললেন, ‘‘আমার কাছে শুধু গোল্লা পেলে, ভানুর কাছে গেলে রসটা পাবে।’’ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কমিকস-এ নাকি উচ্ছ্বসিত ছিলেন সৈয়দ মুজতবা আলীও। নাট্যকার মনোজ বসুর বাড়িতে ভানু প্রথম সাক্ষাতে আলী সাহেবকে বলেছিলেন, ‘‘আপনার সাহিত্যের আমি খুব ভক্ত।’’ তাতে তাঁকে চমকে দিয়ে আলীসাহেব ভানুরই ‘ঢাকাই কুট্টি’-দের কমিক গড়গড়িয়ে বলে যান। 
(তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া, দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, ইন্টারনেট)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত