বাংলাদেশে আমিরাতের বড় মাপের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২২, ০০:৫৫

সাহস ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, খাদ্যপণ্য এবং আইসিটি ও আইটিইএস (আইটি সংশ্লিষ্ট সার্ভিসেস) খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভার্চুয়াল মিটিং রুম থেকে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আয়োজিত এক যৌথ ব্যবসা পরিষদে (জেবিসি) বক্তব্য প্রদানকালে এ আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেছেন, আমাদের অর্থনৈতিক বাজার এখন উন্নত বেসরকারি ইকুইটি ও ফিন-টেক সমাধান দিতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রায় বার বছর আগে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এখন তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আমি, এজন্য, আপনাদের আমাদের অংশীদার হওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষনীয় সুযোগ লাভের দেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নগরায়ন, শিল্পায়ন এবং ব্যক্তির সাথে শাসন, উদ্ভাবন ও বাজার ব্যবস্থার মধ্যে ক্রমবর্ধমান  টেলি-যোগাযোগে  দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্ব-বাজারের সাথে আমাদের উৎপাদন উপকরণসমুহকে যুক্ত করা। এছাড়াও বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার তো আছেই। আমাদের জনগণ যুবক, উদ্যোমী ও উচ্চাভিলাষী।

তিনি বলেন, কৃষিতে তার সরকারের ব্যাপক ও নানা ধরনের উদ্ভাবন, কৃষি-সম্প্রসারণ, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং রেমিটেন্সের কারণে বাংলাদেশের শ্রমাশ্রয়ী আয় অনেক দেশের তুলনায় দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি চমৎকার ভূ-কৌশলগত অবস্থান এবং সকল প্রধান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজ রুটের সাথে সরাসরি যুক্ত।

তিনি বলেন, আমরা জনবহুল ও ক্রমবর্ধমান দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব-এশিয়া অঞ্চলের মিলনস্থলে রয়েছি। আমাদের একটি বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার তো রয়েছেই। পাশাপাশি আমাদের নিকটবর্তী অনেক দৃশ্যত সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এই সব সুবিধা বাংলাদেশকে বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে এবং আমাদের দেশ এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ পণ্য উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হয়ে উঠবে।

আমাদের নীতি হচ্ছে- ‘সকলের সাথে মিত্রতা, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এই নীতিই আমাদেরকে মুক্ত-বাজার বাণিজ্য ও একটি স্বাধীন অর্থনীতির সকল প্রতিবন্ধকতা থেকে আমাদের পৃথক করে রেখেছে। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। আমরা চামড়া, পরিবেশ-বান্ধব পাট ও পাটজাত দ্রব্য, খাদ্য ও সবার উপর আইসিটি ও আইটিইএস (আইটি এনাবলড সার্ভিসেস)-এ ভাল ও দক্ষ।

বাংলাদেশের ৬৫০ হাজারের বেশি ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপার রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়াও বাংলাদেশ উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেটের জন্য পূর্ণ স্পেকট্রাম পাচ্ছে। ‘এখানে একটি বিষয় না বললেই নয়, বাংলাদেশের জনশক্তি আমাদের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে- এরা কঠোর পরিশ্রমী, সাশ্রয়ী শ্রমিক এবং এরা দ্রুত কাজ শিখতে পারে।’

তিনি বলেন, আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আমাদের হাই-টেক পার্কগুলো এখন প্রস্তুত রয়েছে। আমরা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশকে তাদের নিজ দেশ হিসেবে বেছে নিতে, বিশ্বের সবচেয়ে ভাল দেশ হিসেবে তুলে ধরতে নীতিগত ও অবকাঠামো উভয় ক্ষেত্রেই তাদের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি।

শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা সমুদ্র-বন্দর, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এবং এ ধরনের মেগা প্রকল্পগুলো বাংলাদেশে অবকাঠামোগত বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে।

তিনি বলেন, প্রকল্পগুলো তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাংলাদেশের ভৌগলিক স্থানের সাথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিবহন ও যোগাযোগ করিডোরের অর্থনৈতিক স্থানগুলোকে সংযোগ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন খাদ্য, আর্থিক ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য কয়েকটি স্তরে আমাদের যোগাযোগ বাড়াচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিদ্যমান থাকায় বিনিয়োগকারীরা খুব স্বাচ্ছন্দে দীর্ঘ-মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন। তাছাড়া বাংলাদেশে ব্যবসায় বিদেশী মালিকানার জন্য কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতাও নেই। অধিকন্তু, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার শক্তিশালী সঞ্চয় রয়েছে। এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তাদের দেশে নিয়ে যেতে কোনো ধরনের বাধা নেই।

পরে, দুদেশের মধ্যে জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার জন্য এফবিসিসিআই এবং ইউএই চেম্বার্স অব কমার্স এ্যন্ড ইন্ডাষ্ট্রির মধ্যে একটি সমঝোতা স্বারক সাক্ষরিত হয়। এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন এবং আবু ধাবি চেম্বার অব কমার্স এ্যন্ড ইন্ডাষ্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরাউই নিজ নিজ পক্ষে স্বারকে স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ইউএই’র বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী ড. থানি বিন আহমেদ আল জিওদি, এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন, আবুধাবী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরাউই’ও বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত