এমসি কলেজে গণধর্ষণ: অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারকে বরখাস্তের নির্দেশ

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২১, ১৬:০৪

সাহস ডেস্ক

সিলেটের এমসি কলেজে গৃহবধূ গণধর্ষণের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য কলেজের অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

বুধবার (২ জুন) এ বিষয়ে জারি করা রুল আংশিক মঞ্জুর করে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কমরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার আশিক রুবাইয়াত, ব্যারিস্টার সারোয়ার পায়েল। অন্যদিকে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান ও এম আব্দুল কাইয়ুম।

এর আগে, ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এমসি কলেজে গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় অনুসন্ধানে যৌথ কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন আদালত।

চার সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিতে ছিলেন- সিলেটের জেলা ও দায়রা জজ মো. বজলুর রহমান, অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মমিনুন নেসা, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবুল কাশেম ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন সুলতানা।

পরে এই অনুসন্ধান কমিটি হাইকোর্টে প্রতিবেদনও দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পেছনে মূলত হোস্টেল সুপার ও প্রহরীদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ওই কলেজের অধ্যক্ষও কোনোভাবে ওই ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। ধর্ষণের পেছনে মূলত হোস্টেলের বর্তমান তত্ত্বাবধায়কেরা, হোস্টেলের মূল গেটের ডে গার্ড, ৫ নম্বর ব্লকের ডে গার্ড ও নাইট গার্ড (নৈশপ্রহরী) এবং ৭ নম্বর ব্লকের ডে গার্ড ও নাইট গার্ডের দায়িত্বে অবহেলা ছিল।

প্রতিবেদেনে আরও বলা হয়, ঘটনার সময় কলেজ বন্ধ থাকার পরও কয়েকজন ছাত্র ও সাবেক ছাত্র হোস্টেলে অবস্থান করেন। একজন সাবেক ছাত্র ৫ নম্বর ব্লকের হোস্টেল সুপারের বাসভবন দখল করে থাকেন। ওই ছাত্ররা অবৈধভাবে কলেজে হোস্টেলের সিট দখল করে থাকার কারণে এবং সাবেক ছাত্র সাইফুর রহমান কর্তৃক হোস্টেল সুপারের বাসভবন জোর করে দখল করে থাকার জেরেই ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করার সাহস পান। ফলে ঘটনার তারিখে হোস্টেল ক্যাম্পাসে ওই ঘটনার নেপথ্যে মূলত হোস্টেল সুপারের তদারকির ঘাটতি ও দায়িত্বে অবহেলাই দায়ী। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষের ওপরও এ দায়ভার চলে আসে।

গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণের শিকার হন স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া এক গৃহবধূ। এরপর পুলিশ ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে ওসিসিতে তিনদিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান তিনি। ওই রাতেই ধর্ষণের শিকার গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে মহানগরের শাহপরান থানায় ছয় ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এ ঘটনার পর সিলেটসহ সারাদেশে তোলপাড় শুরু হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আসামিদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযানে চালায়। র‌্যাব-৯ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় চারজনকে গ্রেফতার করে। এছাড়া সিলেট জেলা পুলিশ দুজনকে, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর আট আসামিকে পর্যায়ক্রমে পাঁচদিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তারা। জবানবন্দিতে প্রধান আসামি সাইফুর, তারেক, রনি ও অর্জুন ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন।

এছাড়া রবিউল ও মাহফুজুর ধর্ষণে সহায়তা করার কথা স্বীকার করেন। সন্দেহভাজন আসামি মিসবাউর রাজন ও আইনুলও জবানবন্দি দেন। এছাড়া গত বছরের ২৯ নভেম্বর আসামিদের ডিএনএ প্রতিবেদন হাতে পান তদন্ত কর্মকর্তা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত