মানবতাবিরোধী অপরাধে ময়মনসিংহে ৩ আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:৩০

সাহস ডেস্ক

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের গফরগাঁও ও ভালুকার তিন আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং পাঁচ আসামিকে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে যুদ্ধাপরাধ আদালত।

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বেলা পৌনে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান মো. বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন।

ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আমির হোসেন ও বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার।

এই মামলার ৯ আসামির মধ্যে একজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এপর্যন্ত রায় আসা ৪২টি মামলার ১১৪ জন আসামির মধ্যে এই প্রথম কেউ বেকসুর খালাস পেলো। আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তার পাঁচজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আর বাকি চার আসামিকে পলাতক দেখিয়েই মামলার বিচার চলে।

রায়ে মো. সামসুজ্জামান ওরফে আবুল কালাম, এ এফ এম ফয়জুল্লাহ (পলাতক), আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলকে (পলাতক) আমৃত্যু দণ্ড দেয়া হয়েছে।

২০ বছর করে সাজা দেয়া হয় মো. খলিলুর রহমান, মো. আব্দুল্লাহ, মো. রইছ উদ্দিন আজাদী ওরফে আক্কেল আলী, আলিম উদ্দিন খান (পলাতক) ও সিরাজুল ইসলাম তোতাকে। আব্দুল লতিফকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

তবে রায়ের দিন সকালে পলাতক এক আসামি আলিমুদ্দিন খান ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে ময়মনসিংহের বিভিন্ন গ্রামে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যার মত অপরাধে যুক্ত হন বলে এ মামলায় অভিযোগ করা হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের চারটি ঘটনায় অভিযুক্ত করে ২০১৮ সালের মার্চে তাদের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিল আদালত। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত বছরের ২৬ জানুয়ারি মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।

তবে করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে গতবছর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলারই রায় দিতে পারেনি ট্রাইব্যুনাল। শেষ পর্যন্ত গত মঙ্গলবার মামলার রায়ের জন্য এদিন ঠিক করে দেয়। সেই অনুযায়ী এই ট্রাইব্যুনালে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার পর রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়।

আসামিদের কার কী রায়

কারাগারে থাকা আসামিদের মধ্যে মো. শামসুজ্জামান ওরফে আবুল কালামকে ১ ও ৪ নম্বর অভিযোগে এবং পলাতক এ এফ এম ফয়জুল্লাহ ও আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলকে চারটি অভিযোগের সবগুলেতেই আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আর কারাগারে থাকা মো. খলিলুর রহমান মীরকে ১ ও ৪ নম্বর অভিযোগে; মো. আব্দুল্লাহকে ১ নম্বর অভিযোগে, মো. রইছ উদ্দিন আজাদী ওরফে আক্কেল আলীকে ১, ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে এবং পলাতক সিরাজুল ইসলাম তোতাকে ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে; আলিম উদ্দিন খানকে ১, ২ ও ৩ নম্বরে ২০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।   

মামলায় অভিযুক্ত অপর আসামি আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

মামলার ৯ আসামির মধ্যে কারাগারে থাকা পাঁচজনকে সকাল পৌনে ৯টায় ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে আসা হয়। পরে তাদের এজলাসে হাজির করে দূরত্ব বজায় রেখে বসানো হয়। আদালতের নির্দেশে তারা একে একে নিজেদের নাম বলেন।   

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ২২২ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন। রায়ের দ্বিতীয় অংশ পড়েন বিচারপতি আমির হোসেন। সবশেষে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম সাজা ঘোষণা করেন।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন, জাহিদ ইমাম, তাপস কান্তি বল ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত