রোহিঙ্গাকন্যার কান ফোঁড়ানো অনুষ্ঠানে এক কেজি স্বর্ণালংকার ও ৪৫ লাখ টাকা উপহার

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০১৯, ১৫:৪৯

টেকনাফের ‘দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত’ ও রোহিঙ্গা নেতা নূর মোহাম্মদের কিশোরী কন্যার কান ফোঁড়ানো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা কেউ এনেছে স্বর্ণালংকার, কেউ এনেছে রুপা। আবার অনেকে নগদ টাকা, এমনকি ছাগল নিয়েও এসেছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে এক কেজি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৪৫ লাখ টাকাসহ আরও নানা উপহার।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) রাতে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ।

তিনি বলেন, নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, ডাকাতি, অপহরণসহ অনেক মামলার রয়েছে এবং তিনি মোস্ট ওয়ানটেড আসামি। রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদকে ধরার জন্য কয়েক দফা অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তিনি তার বিশাল অস্ত্রধারী ডাকাত বাহিনী নিয়ে টেকনাফের পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। তাই তাকে ধরা যাচ্ছে না।

টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিনই রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ তার কন্যার কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। এতে গরু-ছাগল জবাই করে আয়োজন করা হয় বড় ভোজ অনুষ্ঠানের। আমন্ত্রিতদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা ডাকাত, সন্ত্রাসী ও রোহিঙ্গা ইয়াবা কারবারির দল।

তিনি বলেন, ১৯৯২সালে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদ হ্নীলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জাদিমুরা এলাকায় এসে প্রথমে বাসা ভাড়া নিয়ে ছিলেন। ধীরে ধীরে সেখানেই জমি কিনে বাড়ির মালিক হন।

ওসি প্রদীপ কুমার জানান, রোহিঙ্গা নূর মোহাম্মদের বাংলাদেশে ৪টি বাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে একটি পাকা ভবন, একটি দু’তলা, একটি টিনের ঘর এবং অপরটি বাগান বাড়ি। রোহিঙ্গারাই তাদের ‘ওস্তাদের’ কন্যার কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানে এক কেজির মত স্বর্ণালংকার এবং সেই সাথে নগদ টাকা দেয় রীতিমত প্রতিযোগিতা করে উপহার সামগ্রী দিয়েছে। যে কারণেই এরকম অস্বাভাবিক পরিমাণে উপহার উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, নূর মোহাম্মদের ডাকাত বাহিনী অপহরণ, ডাকাতি, সন্ত্রাসী, ছিনতাই, মানব পাচার এবং সর্বশেষ সীমান্তের এক চেটিয়া ইয়াবা কারবারও হাতে নেয়। ইতিমধ্যে দুই বছর আগে বাংলাদেশে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর নূর মোহাম্মদের ক্ষমতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এলাকার ৫-৬টি রোহিঙ্গা শিবির, টেকনাফের বিস্তৃত পাহাড়, সীমান্তের নাফ নদী ও নদীর ওপারের রাখাইনের অভ্যন্তরে থাকা ইয়াবা কারখানা ও গবাদি পশুর বাজারসহ একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণে নেয় তারা। এসব কারণেই বাহিনীর সদস্যরা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।

প্রসঙ্গত, টেকনাফ উপজেলার জাদিমুরায় গত ২২ আগস্ট রাতে যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে (৩০) গুলি করে হত্যা করা হয়। তার বড় ভাই ওসমান গণি অভিযোগ করেন, একদল রোহিঙ্গা তার ভাইকে বাসার সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং পাশের একটি পাহাড়ে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

ওমর ফারুক খুনের ঘটনায় গতকাল শতাধিক বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতা একটি রোহিঙ্গা শিবিরে হামলা চালিয়ে অস্থায়ী ঘরবাড়ি ও এনজিও অফিসগুলোতে ভাঙচুর করে। তারা টায়ার এবং প্লাস্টিকের বক্স জ্বালিয়ে টেকনাফ পৌরসভা থেকে লেদা পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়ক তিন ঘণ্টা অবরোধ করে। রোহিঙ্গা নেতা নূর মোহাম্মদের বাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

২৩ আগস্ট দিবাগত রাতে জাদিমুরা পাহাড়ের পাদদেশে ওমর ফারুক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুই রোহিঙ্গা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। নিহতরা হলেন- টেকনাফের জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মো: শাহ ও আবদুর শুক্কুর।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত