কর্মসংস্থান কর্মসূচির কোটি টাকা হরিলুটের অভিযোগ

প্রকাশ : ২৭ মে ২০১৯, ১৭:১৩

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় কর্মসংস্থান কর্মসূচির অতিদরিদ্রদের কোটি টাকার সিংহভাগই প্রকল্প সভাপতিরা (ইউপি সদস্য) কৌশলে পকেটস্থ করার পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে কর্মসংস্থান কর্মসূচি (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দুই হাজার ৮৩ জন শ্রমিকের বিপরীতে এক কোটি ৬৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। উপজেলায় ৫৮টি প্রকল্পে ২৯ লাখ ১৬ হাজার ২০০ ঘণফুট মাটি ভরাটের নির্দেশনা রয়েছে। 

দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ, গোহালিয়াবাড়ী, সল্লা, দশকিয়া, নারান্দিয়া, বাংড়া, সহদেবপুর, পাইকড়া, বল্লা, কোকডহরা, বীরবাসিন্দা, পারখী ও নাগবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটিতে ৪-৫টি পৃথক প্রকল্পে ১২৫ জন করে শ্রমিক কাজ করার কথা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন ইউনিয়নে গত ৮ এপ্রিল থেকে প্রকল্পটির কাজ শুরু করার কথা থাকলেও অনেক প্রকল্পেই পরবর্তী সপ্তাহে কাজ শুরু করা হয়। কোন কোন প্রকল্প সভাপতি সপ্তাহে পাঁচ দিনের স্থলে ৩-৪দিন কাজ করাচ্ছেন। অন্য কর্মদিবসে শ্রমিকদের ছুটি দেয়ার নাম করে কাজ বন্ধ রাখছেন। এরমধ্যে কোকডহরা, বীরবাসিন্দা ও পারখী ইউনিয়নের প্রকল্পগুলোতে ২৫-৫০ জন শ্রমিকের স্থলে অধিকাংশ প্রকল্পেই ৮ থেকে ১৪ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে।

পারখী ইউনিয়নের আউলিয়াবাদ পিয়ার আলীর বাড়ি থেকে রজব আলীর বাড়ি পর্যন্ত প্রকল্পে ৫০ জন শ্রমিক থাকার কথা থাকলেও ১৩ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়। এরমধ্যে ২ জন পুরুষ, ৯ জন মহিলা ও ২ জন শিশু-কিশোর রয়েছে।

এ প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য মর্জিনা জানান, এ সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। সবকিছু ইউপি চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী তালুকদার জানেন এবং লোক দিয়ে তদারকি করে থাকেন। 

একই ইউনিয়নের বর্গা গ্রামের মতির বাড়ি থেকে নুরুল ইসলামের বাড়ি পর্যন্ত প্রকল্পে ২৫ জন শ্রমিকের স্থলে ১১ জনকে কাজ করতে দেখা যায়। এরমধ্যে ৩ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী। 

নারী শ্রমিকরা জানায়, প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের সপ্তাহে ৩-৪ দিন কাজ করায় এবং অন্যদিনগুলোতে ছুটি দিয়ে থাকেন। 

একই ইউপির আ. ছামাদ মেম্বারের প্রকল্পে ২৫ জন শ্রমিকের মধ্যে ৮ জন দিয়ে কাজ করাতে দেখা যায়। পারখী ইউনিয়নের সদস্য আ. কদ্দুছের সভাপতিত্বে বাস্তবায়নকৃত পূর্বাসিন্দা পাকা রাস্তা থেকে বড় মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে ২৫ জনের মধ্যে ১৩ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়।

শ্রমিকরা জানায়, এখন ধান কাটার মৌসুম। এ মৌসুমে প্রতিজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৭০০ টাকা আর প্রকল্পে কাজ করলে ২৫ টাকা আমানত রেখে ১৭৫ টাকা পাওয়া যায়। তারা এ প্রকল্পের মজুরি বাড়ানোর দাবি জানান।

তারা আরো জানান, তাদের দেয়া জব কার্ড ও ব্যাংকের চেক বই ইউনিয়ন পরিষদে জমা রাখা হয়েছে। জব কার্ড ও চেক বইয়ে তাদের কারো কারো নাম-সাক্ষর নেয়া হলেও অধিকাংশেরই নেয়া হয় না। তাদের কোন হাজিরা নেয়া হয় না, অধিকাংশ প্রকল্পেই পরিদর্শন বই ও সাইনবোর্ড নেই। 

কয়েকজন প্রকল্প সভাপতি ও ইউপি সদস্য জানান, ধানকাটার মৌসুম থাকায় শ্রমিক পাওয়া যায় না তাই কম শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। তারা এ প্রকল্পটি ধান কাটার মৌসুম বাদ দিয়ে অন্য সময় বাস্তবায়নের দাবি জানান। 

কালিহাতী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সেহাব উদ্দিন জানান, শ্রমিকের সঙ্কট রয়েছে এটা সত্য। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত