কেঁচোসার তৈরির সারাংশ

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২১, ০০:৩৯

সাহস ডেস্ক
কেঁচো কম্পোস্ট একটি জৈব সার যা জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয় ( ছবি- সংগ্রিহিত)

আনাজপাতির খোসা থেকে শুরু করে চায়ের পাতা, কাঠের গুঁড়ো ইত্যাদি জমাতে থাকুন। নিজের বাড়ির বাগানের ঝরে যাওয়া পাতাও ব্যবহার করা যায় (দুধ, চিনি দেওয়া চায়ের পাতা জমানো যাবে না)। রোগাক্রান্ত গাছের পাতা কখনও ব্যবহার করবেন না। বাড়িতে বাগান বা আলাদা কম্পোস্টিংয়ের জায়গা না থাকলে ঢাকা দেওয়া পাত্র ব্যবহার করুন।

গোবর খেয়ে কেঁচো মল ত্যাগ করে এবং এর সাথে কেঁচোর দেহ থেকে রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে যে সার তৈরি হয় তাঁকে কেঁচো কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্ট বলা হয়। এটি সহজ একটি পদ্ধতি ১ মাসের বাসী গোবর দিয়ে ব্যবহার উপযোগী উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরি করা হয়। এ সার সব ধরণের ফসল ক্ষেতে ব্যবহার করা যায়।

ভার্মি কম্পোস্ট প্রয়োগের উপকারিতা:
‘ভার্মি কম্পোষ্ট´ বা কেঁচোসারে মাটির পানি ধারণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বায়ু চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। এই পদ্ধতিতে জৈব সার পাবেন যা গাছের জন্য খুব ভাল। নিজে নিজে কম্পোস্ট শুরু করা একটু আয়াসসাধ্য মনে হলেও তার ফল সুদূরপ্রসারী। একে তো বর্জ্য রিসাইকল করা যাবে, পরন্তু এই পদ্ধতিতে কোনও রাসায়নিক ব্যবহার না করায় ভাল ফসল পাবেন।

 

 সার তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ:
কেঁচো-২০০ টি, মাটির তৈরি নালা বা চারি অথবা ইট দিয়ে নির্মিত চৌবাচ্চা এবং ১ মাসের বাসী গোবর।

 

সার তৈরি করার পদ্ধতি/ধাপসমুহ:

  • ২ মিটার লম্বা, ১ মিটার চওড়া ও ১ মিটার গভীরতা বিশিষ্ট ইট দিয়ে চৌবাচ্চা তৈরি করতে হবে। চৌবাচ্চার উপর টিনের/খড়ের চালা দিতে হবে। 
  • গর্তের মধ্যে বাসী পচা গোবর ঢেলে ভরে দিতে হবে। অতঃপর ২০০ থেকে ৩০০ কেঁচো ছেড়ে দিতে হবে। এ কেঁচোগুলো গোবর সার মল ত্যাগ করবে। এই মলই কেঁচো সার। 
  • কেচোর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে সার তৈরীর সময় নির্ভর করে। সংখ্যা বেশী হলে দ্রুত কেঁচো সার তৈরি হবে। কেঁচো সার দেখতে চায়ের গুড়ার মত। 
  • সার তৈরি হওয়ার পর চৌবাচ্চা হতে সতর্কতার সাথে কম্পোস্ট তুলে চালুনি দিয়ে চালতে হবে। সার আলাদা করে  কেঁচোগুলো পুনরায় কম্পোস্ট তৈরির কাজে ব্যবহার করতে হবে। 
  • কেঁচো সার বাজারের চাহিদা অনুযায়ী/ নিজস্ব ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট সাইজের প্যাকেট/বস্তা ভর্তি করে রাখা যেতে পারে। 

তৈরি হওয়ার সার ব্যবহার: 
সকল প্রকারের শাক সবজি ক্ষেতে ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে শাক সবজির ফলন বাড়ানো যায়। ধান, গম, পাটসহ বিভিন্ন ফলবাগানে এই সার ব্যবহার করে ভাল ফলন পাওয়া যায়। এই সার ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে মাটিতে বায়ুচলাচল বৃদ্ধি পায়। মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ে, মাটির বিষাক্ততা দূরীভূত হয়। মাটির অনুজৈবিক কার্যাবলী বৃদ্ধি পায় ফলে মাটি হতে গাছ্র পুষ্টি পরিশোধন ক্ষমতা বেড়ে যায়। এই সার ব্যবহার করলে রাসায়নিক সার মাত্রার ১/২ অংশ ব্যবহার করলেই চলে। ধানের জমিতে বিঘাপ্রতি ৫০ কেজি ভার্মি কম্পোস্ট ব্যবহার করে অর্ধেক ফলন পাওয়া যায়। এই সার পুকুরে ব্যবহার করে ফাইটোপ্লাংকটন উৎপাদন ত্বরান্বিত করে মাছের উৎপাদন বাড়ানো যায়।

 

সাবধানতা:
চালুনীর সময় সাবধান থাকতে হবে যেন শিশু কেঁচো মারা না যায়। শিশু কেঁচোগুলো পুনরায় গর্তে রক্ষিত বাসী গোবরের মধ্যে কম্পোস্ট তৈরির জন্য ছেড়ে দিতে হবে।  পিপঁড়া, উইপোকা, তেলাপোকা, মুরগী, ইঁদুর, পানি ও পোকার কামড় থেকে কেঁচোগুলোকে সাবধানে রাখতে হবে। প্রয়োজনে চৌবাচ্চার উপর মশারী ব্যবহার করতে হবে।

তথ্যসূত্র: কৃষি বাতায়ন / কৃষি জাগরণ

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত