জয় দিয়ে মাশরাফিকে টি-২০ থেকে বিদায় দিলো বাংলাদেশ

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০১৭, ১০:২৩

সাহস ডেস্ক

অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার শেষ টুয়েন্টি টুয়েন্টি ম্যাচটি জয় দিয়েই শেষ করলো বাংলাদেশ। ম্যাশের বিদায়ী ম্যাচে বাংলাদেশ ৪৫ রানে হারিয়েছে স্বাগতিক শ্রীলংকাকে। ফলে দুই ম্যাচের টি-২০ সিরিজও ১-১ সমতায় শেষ হলো। এ ম্যাচ দিয়েই টি-২০ ক্যারিয়ারকে বিদায় জানালেন বাংলাদেশের দলপতি মাশরাফি। 

নিজের বিদায়ী ম্যাচেও টস ভাগ্যে জয় পান বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি। পিঠের ইনজুরির জন্য এ ম্যাচের একাদশে সুযোগ পাননি ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। এছাড়া একাদশে সুযোগ হয়নি পেসার তাসকিনেরও। তাদের জায়গায় দলে আসেন ইমরুল কায়েস ও মেহেদি হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের ৫৭তম খেলোয়াড় হিসেবে টি-২০তে অভিষেক ঘটে মিরাজের। 

দলের সুযোগ পেয়ে সৌম্যর সাথে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন ইমরুল। উড়ন্ত সূচনা তারা পাওয়ার-প্লে’র ৬ ওভারেই দলকে এনে দেন ৬৮ রান। তবে সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে বিদায় নিতে হয় সৌম্যকে। এতে ভেঙ্গে উদ্বোধনী জুটি। দলীয় ৭১ রানে সৌম্য যখন বিদায় নেন, তখন তার নামের পাশে ছিলো ৩৪ রান। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় মাত্র ১৭ বল মোকাবেলা করে আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলেন সৌম্য। 
সৌম্যর ফিরে যাবার ৭ রান পর থেমে যান ইমরুলও। ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৫ বলে ৩৬ রানে থামেন ইমরুল। এতে কিছুটা চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু সেই চাপ আমলে নেননি সাব্বির রহমান ও সাকিব আল হাসান। তৃতীয় উইকেটে ৩২ বলে ৪৬ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়েন তারা। এতে বড় স্কোরের পথ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। 

কিন্তু বিরতি দিয়ে সাব্বির, সাকিব ও মোসাদ্দেক বিদায় নিলে, বাংলাদেশের রান তোলার গতি কমে যায়। সাব্বির ১৮ বলে ১৯ ও সাকিব মারমুখী মেজাজে ৩১ বলে ৩৮ রান করেন। তার ইনিংসে ৪টি চার ছিলো। এছাড়া মোসাদ্দেক ১টি চার ও ছক্কায় ১১ বলে ১৭ রান করেন। 
দলীয় ১৫২ রানে মিডল-অর্ডারের এই তিন ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর দলের স্কোর সামনের টানার দায়িত্ব পান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। এসময় ইনিংসের ১৭ বল বাকি ছিলো। তাই দলকে বড় স্কোর এনে দেয়ার পথেই ছিলেন রিয়াদ ও মুশি। কিন্তু ৮ বলে ১৭ রানের বেশি যোগ করতে পারেনি এই জুটি। 

শ্রীলংকার পেসার লাসিথ মালিঙ্গার শিকারে থামেন মুশফিকুর। এরপর পরের দু’বলে মাশরাফি ও মিরাজকে তুলে নিয়ে বিশ্বের পঞ্চম ও শ্রীলংকার দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টি-২০তে হ্যাট্টিক করেন মালিঙ্গা। ম্যাচ শেষে তার বোলিং ফিগার দাড়ায় ৪ ওভারে ৩৪ রানে ৩ উইকেট। মুশফিকুর ১টি করে চার ও ছক্কায় ৬ বলে ১৫ রান ফিরলেও, ৪ রানে অপরাজিত থেকে যান মাহমুদুল্লাহ। তারপরও বাংলাদেশ পায় ৯ উইকেটে ১৭৬ রানের সংগ্রহ। 

জয়ের জন্য ওভারপ্রতি প্রায় ৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় শ্রীলংকা। এখানে বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বের কৌশল তুলে ধরেন বাংলাদেশের দলপতি মাশরাফি। প্রথম ওভারেই বল তুলে দেন সাকিবের হাতে। ঐ ওভারের দ্বিতীয় বলেই ৪ রান করা শ্রীলংকান ওপেনার কুশল পেরেরার উইকেট তুলে নেন সাকিব।
 
এরপর ইনিংসা মেরামতের সিদ্ধান্ত নেন ওপেনার দিলশান মুনাবিরা ও অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গা। কিন্তু জুটিতে মাত্র ১৫ রান যোগ করেন তারা। এই জুটিও ভাঙ্গেন সাকিব। মুনাবিরাকেও ৪ রানে থামান তিনি। 

১৯ রানে ২ উইকেট হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে বড় জুটির আভাস দিচ্ছিলেন থারাঙ্গা ও চামারা কাপুগেদেরা। আক্রমণাত্মক মেজাজে বাংলাদেশের বোলারদের ভড়কে দিতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু সেটি হতে দেননি মাহমুদুল্লাহ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রথমবার বল হাতে নিয়েই থারাঙ্গাকে থামান তিনি। ৩টি বাউন্ডারিতে ২১ বলে ২৩ রান করেন থারাঙ্গা। 

দলীয় ৪০ রানে থারাঙ্গার বিদায়ের পর, ওই স্কোরেই আরও দুই উইকেট হারায় শ্রীলংকা। নিজের প্রথম ওভারের প্রথম দু’বলেই দুই উইকেট তুলে নিয়ে লংকানদের ব্যাকফুটে ঠেলে দেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। আসলে গুনারতেœ ও মিলিন্দা সিরিবর্ধনে শূন্য হাতে ফিরেন। এতে হ্যাট্টিকের সম্ভাবনা জাগে ফিজের। কিন্তু সেটি করতে পারেননি তিনি। 

তবে বাংলাদেশ শিবিরে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন কাপুগেদেরা ও থিসারা পেরেরা। ৪০ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারানোর পর পরিস্থিতিকে সামলে নেন তারা। সেই সাথে শ্রীলংকাকে ম্যাচে ফেরানোর লক্ষ্য স্থির করেছিলেন কাপুগেদেরা ও পেরেরা। ষষ্ঠ উইকেটে দু’জনে জুটিতে অর্ধশতক রান যোগ করে ফেলেন। এতে কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। 

এমন অবস্থায় আবারো বাংলাদেশের ত্রাণকর্তার ভূমিকায় আবারো আর্বিভূত হন সাকিব। নিজের দ্বিতীয় স্পেলে আক্রমণে এসেই থিসারাকে থামান তিনি। ২৩ বলে ২৭ রান করেন থিসারা। সেই সাথে ৪৫ বলে গড়ে উঠা ৫৮ রানের জুটিও ভেঙ্গে যায়। 

এরপর সেক্কুজে প্রসন্নকে নিয়ে আবারো রান তোলার কাজে নেমে পড়েন কাপুগেদেরা। সাফল্য পাবার পথেই হাটচ্ছিলেন তারা। কিন্তু তাদের বেশিদূর যেতে দেননি বিদায় ম্যাচ খেলতে নামা মাশরাফি। ১১ রানে থাকা প্রসন্নকে বোল্ড করেন ম্যাশ। 

তবে এক প্রান্ত আগলে শ্রীলংকার আশা হিসেবে টিকে ছিলেন কাপুগেদেরা। শেষদিকে কাপুগেদেরা ও মালিঙ্গাকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশের জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন মুস্তাফিজ। আর শ্রীলংকার শেষ ব্যাটসম্যান ভিকুম সঞ্জয়াকে শিকার করে স্বাগতিকদের ১৩১ রানেই গুটিয়ে দেন বাংলাদেশের পেসার সাইফুদ্দিন। কাপুগেদেরা দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ বলে ৫০ রান করেন। বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর ৪টি ও সাকিব ৩টি উইকেট নেন। 

ম্যাচের সেরা হয়েছেন সাকিব। সিরিজ সেরা হয়েছেন শ্রীলংকার মালিঙ্গা। 

দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হবার পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও ১-১ সমতায় শেষ করে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা। এবার টি-২০ সিরিজও ১-১ সমতায় শেষ করলো দু’দল। 
সূত্র: বাসস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত