রাবি শিক্ষক জলির মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে সাবেক স্বামীর বক্তব্য

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১৬:০৪

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আকতার জাহান জলির লাশ উদ্ধার হয় শুক্রবার। রাবির জুবেরি ভবনের যে কক্ষে ওই শিক্ষক থাকতেন, সে কক্ষ থেকে তার হাতে লেখা একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। সাবেক স্বামীর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে তাতে জলি লিখে গেছেন, তিনি নিজে আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকও জানাচ্ছেন, বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।

তবে জলিকে আত্মহত্যায় কেউ প্ররোচিত করেছে দাবি করে শনিবার বিকেলে পেনাল কোড ৩০৬ (আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া) ধারায় থানায় মামলা করেছেন জলির ছোট ভাই কামরুল হাসান। জলির দাম্পত্য কলহ চরমে পৌঁছায় ২০১০ সালে। আর সংসার ভাঙে ১৩’তে। তার সাবেক স্বামী একই বিভাগের শিক্ষক তানভীর আহমদ দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন একই বিভাগের ছাত্রী সোমা দেবকে। বর্তমানে তিনিও রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক।

ফলে জলির আত্মহত্যায় অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তীর্যক মন্তব্য ছুটছে সাবেক স্বামী তানভীর আহমদের দিকেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তাদের প্রিয় শিক্ষকের মৃত্যুর জন্য দায়ি হিসেবে তানভীর আহমদকে ইঙ্গিত করে লিখছেন। এ অবস্থায় শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন তানভীর আহমদ।

তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘গতকাল থেকে মিডিয়াসহ অনেকেরই কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। তাই কিছু উত্তর এখানে দিয়ে রাখলাম:
আমাদের জীবনে সমস্যার সূত্রপাত ২০১০ সালে। আমার সাবেক স্ত্রী আকতার জাহান বিভাগের এক জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চান। বিষয়টি আমার সহকর্মীরাসহ ক্যাম্পাসের অনেকেই জানেন। ফলে ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমরা মিউচুয়ালি আলাদা হয়ে যাই। তিনি আমাদের সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। কিন্তু প্রায় ২ সপ্তাহ পরেই ছেলেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন এবং জানান যে, শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি ছেলের দায়িত্ব নিতে পারছেন না। আমাদের ছেলে তখন ক্লাশ ফোরে উঠেছে। পরবর্তী বছরগুলোতে আমি প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অনুরোধ জানালেও নিজের অসুস্থতার কারণে তিনি ছেলেকে নিজের কাছে নিতে অপরাগতা জানিয়েছিলেন। তখন থেকে ২০১৬ এর ৩০ মে পর্যন্ত ছেলে আমার কাছেই ছিল। তবে প্রতিটি ঈদ ও স্কুলের ভ্যাকেশনে মায়ের সাথে নানীবাড়িতে যেত। সে রাজশাহীর প্যারামাউন্ট স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। সম্প্রতি তার মা তাকে ঢাকার স্কুলে পড়াশোনা করানোর ইচ্ছা আমার মায়ের কাছে জানান। আমার কাছেও এটি সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য ভাল প্রস্তাব মনে হয়। ঢাকার স্কুলটিতে সেশন জানুয়ারিতে শুরু হওয়ায় আগামী জানুয়ারিতে তার ক্লাশ নাইনে ভর্তি হওয়ার কথা।’

তানভীর আহমদ লেখেন, ‘২০১১ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আকতার জাহানের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ ছিল না। উল্লেখ্য, গত ২৬.০৮.২০১৩ তারিখে তিনি অফিসিয়ালি ডিভোর্স প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আমাকে ডিভোর্সের নোটিশ পাঠান। আমিও তাতে সম্মতি দিই। এই ৫ বছরে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন-যাপন, ভালো-মন্দ কোন কিছুর সাথেই আমি সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। তিনি নতুন করে জীবন গুছিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। আমি তাতে বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়াতে চাইনি।’

তিনি আরও লেখেন, ‘তিনি (জলি) নিঃসন্দেহে একজন ভাল শিক্ষক, সহকর্মীদের কাছে একজন ভাল সহকর্মী এবং ছাত্রদের কাছে মাতৃতুল্য অভিভাবক। আমার সাথে তাঁর বহু আগেই শেষ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিগত সম্পর্কের থেকে মুখ্য হলো তিনি এই ৫ বছরে যাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁর বর্তমান সময়ের সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা সম্পর্কে তারাই সবচেয়ে ভাল বলতে পারবেন। এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি মোটেই সঠিক ব্যক্তি নই।’

তানভীর আহমদের এই স্ট্যাটাসে প্রথম মন্তব্য লেখেন তার সাবেক শিক্ষার্থী রাজশাহী থেকে প্রকাশিত দৈনিক সোনার দেশ পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক ও রাইজিংবিডি ডটকমের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক তানজিমুল হক। এতে তিনি লেখেন, ‘স্যার কোন কমেন্ট করছি না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার কিছু আগে ম্যাম জয়েন করেছেন। তবে সাংবাদিকতার কারণে অনেক কিছুই আমাদের নজরে রয়েছে। এ কারণে কোন মন্তব্য করতে চাইছি না। তবে আপনারা শ্রদ্ধেয় মানুষ। কিন্তু আপনাদের সম্পর্কে যেসব কথাবার্তা ক্যাম্পাসে চাউর হয়, তা অত্যন্ত বেদনায়ক। সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এগুলো আমাদের কাম্য না...।’

শিক্ষক জলি জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে নতুন জীবন শুরু করতে চেয়েছিলেন-তানভীর আহমদের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ করে প্রথম আলোর বাগমারা উপজেলা প্রতিনিধি মামুন-অর-রশিদ লিখেছেন, ‘স্যার আপনি নিজের অবস্থান জানিয়েছেন ভালো, তবে একটি বিষয় না লিখলেই পারতেন।’

প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলাম লিখেছেন, ‘বি কুল’।

সমকালের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান সৌরভ হাবিব লেখেন, ‘স্যার জুনিয়র সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কের কোন প্রমাণ আপনার হাতে কি আছে? থাকলে দিন এবং তার পরিচয়টা জানান। একজন মৃত মানুষকে নিয়ে এমন মন্তব্য খুবই প্রতিহিংসামূলক মনে হলো। তাছাড়া আপনার সহকর্মীরা বলছেন, জীবিত অবস্থাতেও জলি আপা আপনার এমন মন্তব্য থেকে রক্ষা পাননি। তাহলে কি বুঝবো? এই আত্মহত্যার পেছনে প্ররোচনাদানকারি যে মানুষটির কথা উঠে আসছে তিনি কি...?’

খালেদ সুজন নামে একজন লেখেন, ‘স্যার, আপনি এবং জলি ম্যাডাম আমার কাছে খুবই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। আমি যখন জেনেছিলাম আপনাদের ডিভোর্স হয়েছে, এতো কষ্ট পেয়েছিলাম যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না, আরো কষ্ট পেতাম যখন আপনার নতুন স্ত্রীর সাথে সেলফি দেখতাম, আরও কষ্ট পেতাম যখন জলি ম্যাডামকে নিয়ে আজেবাজে কথা প্রচার হতো যা আপনি স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন। শুধুমাত্র মান অভিমান এবং জেদাজেদির কারণে আজ এই পরিণতি।’

শাহাজাদী সুলতানা নামে এক নারী মন্তব্য করেন, ‘একটা অংক মিলছে না। আপনার ভাষ্যমতে, ম্যাডামের সাথে সমস্যা শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে- ম্যাডামের কারণে! তো আপনার বর্তমান বউ তো ২০১০ এর অনেক আগেই পাশ করে চলে যাওয়ার কথা। তাইলে পাইলেন কেমনে?? অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ বুঝি?! আপনারা অনেক জ্ঞানী! তাই বলে আমরা কী অনেক বোকা??? মিনতি করি- মৃত মানুষটিকে মুক্তি দিন। তিনি আপনার সন্তানের মা। নিজের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ছেলেটাকে কতটা কষ্ট আর লজ্জায় ফেলছেন একটু ভাবুন!’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত