বাবার কাছে শেখা

প্রকাশ : ০২ মে ২০১৬, ১০:১৭

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি

বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি তাঁর বাবাকে নিয়ে ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, আমি শিখেছি আব্বার কাছ থেকে কিভাবে শূণ্য থেকে শুরু করতে হয়। আমি শিখেছি শত বাঁধার পরও কিভাবে নিজেকে শক্ত করে দাঁড়াতে হয় কোন খুঁটি ছাড়া। আমি শিখেছি, কিভাবে নিজেকে ব্যবহার করে আরেকজনকে সাহায্য করতে হয়।

তিনি লিখেছেন, তাঁর বাবার মনবতার কথা আর শাসন এর কথাও।

সাহস২৪.কম এর পাঠকদের জন্য মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি লেখাটি তুলে ধরা হল।

এই যে ভদ্র লোকটির ছবি দেখছেন, তিনি আমার বাবা মরহুম আব্দুর রশিদ। ছোট বেলায় আমি ঠিক মতো বোঝার আগেই আজ এই দিনে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। উনার একটি মাত্র ছবি আমার কাছে আছে তাও ছবি থেকে ছবি তোলা। মায়ের তো কোন ছবিই আমার কাছে নেই। খুব ছোট থাকলেও তার সাথের সব সৃতি আমার স্পষ্ট মনে আছে। ঐ যে বলছিলাম বাচ্চাদের সব মনে থাকে। আমাদের ফার্মগেইট গ্রীন রোডে একটা বাড়ি আর তেঁজগাও তে (যা এখন হাতিরঝিল) আরেকটা বাড়ি। 

একদিন তাঁর সাথে যাচ্ছিলাম তেজগাঁও এর বাড়িতে। আমাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি বল্লাম ‘আব্বা, রিকশা নাও। এতো দূর হেঁটে যেতে পারবো না’। আব্বা বললেন, ‘রিকশা ভাড়া ১০ টাকা, ঐ ১০ টাকা যদি বাঁচে, তাহলে কোন গরীবের সাহায্য হতে পারে, কারো এক বেলা খাবার হতে পারে, কারো একটা বই কিনার সাহায্য হতে পারে। তোমার অল্প একটু কষ্টতে কারো মুখে হাশি ফুটতে পারে’। এই গল্প শুনাতে শুনাতে আর বোঝাতে বোঝাতে আমাকে ঐ বাড়ি পর্যন্ত ঠিকই হাঁটিয়ে নিয়ে গেলো । ঐখানে পৌছাতে না পৌঁছাতে এক বিধবা মহিলা এসে বলল, ‘স্যার, আমার ছেলের পরীক্ষার ফি দিতে পারতেছিনা, যদি উপকার করতেন’। তখন আব্বা পকেট থেকে আমাকে ১০ টাকা দিয়ে বলল ঐ মহিলাকে দিতে আর উনি নিজে হাত মুঠ করে যেন কি দিল (হয়তো আরও কিছু টাকা) ঘটনাটি ২০ বছর আগের।
 
আমি শিখেছি আব্বার কাছ থেকে কিভাবে শূণ্য থেকে শুরু করতে হয়। আমি শিখেছি শত বাঁধার পরও কিভাবে নিজেকে শক্ত করে দাঁড়াতে হয় কোন খুঁটি ছাড়া। আমি শিখেছি, কিভাবে নিজেকে ব্যবহার করে আরেকজনকে সাহায্য করতে হয়। উনার মতো সৎ হয়ত হতে পারিনি কিন্তু চেষ্টা করি। 

আব্বা তোমাকে কোন মানুষ এখনও ভুলেনি। এখনও তোমার কোন পরিচিত মানুষ, আত্মীয়-স্বজনরা তোমার উপকার আর অবদান এর কথা ভুলেনি, এখনও তোমাকে স্মরণ করে চোখের পানি ফেলে। আমি চোখের পানি ফেলি না, আব্বা, তুমি চিন্তা করো না। কারণ তুমি আমার ভিতর বাস করো, তোমার আইডিওলোজি পালন করার চেষ্টা করি। তুমি জানো কিনা জানি না, তোমার নাতী আবরাজ জন্ম কাঁকতলিও ভাবে এই মাসেই। 

শেষ করছি না কথা ...... কারণ কথা আরও আছে ... মনে আছে আমাকে অংক করাতে গিয়ে বৃহত্তম আর ক্ষুদ্রতম সংখ্যা আমার মনে থাকতো না বলে আমাকে থপাশ করে একটা থাপ্পড় দিয়েছিলে, আজ পর্যন্ত ভুলিনি বৃহত্তম সংখ্যা ৯৯ আর ক্ষুদ্রতম সংখ্যা ১০, মনে আছে সব বেত আমি জানালা দিয়ে ফেলে দিতাম ...। আরও অনেক কথা অনেক্কক্কক্কক্কক্কক ...........

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত