সোনার বাঙলা শ্মশান কেন-আওয়ামী লীগ জবাব চাই

প্রকাশ : ০৮ জুন ২০১৬, ১২:০৯

বাঙলাদেশের নাগরিকের মর্যাদা পাকিস্তানীদের চাইতে নিম্নমানের হওয়ায় বঞ্চণার শেষ নেই; উৎপাদন-আয় বাঙলায়, ব্যয় হয় পাকিস্তানে। একটি পরিকল্পিত উপায়ে দাবিয়ে রাখার প্রচেষ্টা রুখে দিতে রাজনীতি সেদিন পথ দেখিয়েছিলো। প্রতিবাদী মানুষ শ্লোগান দিয়েছে ‘‘সোনার বাঙলা শ্মশান কেন-ইয়াহিয়া জবাব চাই’’। মানুষের মুক্তিও মিলেছিলো, কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। ফলে মুক্তিযুদ্ধকালে জনপ্রিয় এই শ্লোগানটির তাৎপর্য এখনও বিন্দুমাত্র কমেনি।

সেই শ্লোগানের পরিবেশ-পরিস্থিতি গড়ে উঠেছে; প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে নাগরিক মর্যাদার প্রথম-দ্বিতীয় শ্রেণি, সংখ্যাগুরু-লঘুর তত্ত্বের। কিন্তু কী আশ্চর্য রাষ্ট্র গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন! নিজদেশে নাগরিকের পরবাসী হয়ে ওঠার গল্প আজ পুরোনো।

প্রথা কিংবা মত কিংবা ধর্ম কিংবা ভাবনা-যুক্তির ভিন্নতায় চলছে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড-প্রকাশ্য। আর সরকার দায় এড়াতে আবোল-তাবোল বকেই চলেছে। সাংসদ, সরকারের স্বরাষ্ট্র-প্রধানমন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা বা দলীয় রাজনীতির নেতা সকলেই একই পথে; রাজনীতি আজ দিশাহীন-পথ দেখাতে পারছে না।

বাঙলাদেশ পাকিস্তান থেকে ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, পতাকার রং-ধরনে পরিবর্তন হয়েছে-নতুন জাতীয় সঙ্গীতসহ কিছু বিষয় যুক্ত করেছেমাত্র শাসনতন্ত্রে-আর কী এমন ঘটেছে বলবার মতো? যে পরিবর্তনটি প্রয়োজন ছিলো কিন্তু হয়নি তা হলো পাকিস্তানি মনোভাবের। সেই মনোভাব ৪৫ বছরে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোব-সক্ষম হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের ঘাড়ে চেপে থাকা দুর্দশা বাঙলাদেশে আসতে শুরু করেছে, দেশও এগুচ্ছে সে পথেই।

দেশে অনেক সরকারি কর্মকর্তা আছেন যারা মুখে বাঙলাদেশ কিন্তু অন্তরে পাকিস্তান ধারণ করেন, তারাই আজকের অবস্থার জন্য দায়ী। সাম্প্রতিক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার ঘটনায় কতটা টনক নড়েছে সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ। ইতোমধ্যে সামাজিক মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, বাবুল আক্তার যে সকল জায়গায় হানা দিয়ে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করেছে সেখানে অনেক হোমরাচোমড়ার যুক্ততার প্রমাণও মিলেছে, যাদের মধ্য থেকে জঙ্গি দমনে তাকে নিরুৎসাহিতও করা হয়েছে! এ সবই প্রমাণ করে উগ্রবাদকে আশ্রয়-প্রশয় দিয়ে হৃষ্টপুষ্ট করার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের যুক্ততা। কাজেই যত বক্তৃতা-বিবৃতিই হোক এই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। এই দায় আজ রাজনীতির, এই দায় অতীতের অনেক সরকারের মতো বর্তমান সরকারকেও নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে অনেক সময়ই অপরিণত ব্যক্তি-রাজনীতিক-সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্যের প্রতিধ্বনিত হতে দেখি। কিন্তু এ ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি উগ্রবাদের মূলে আঘাত না করে, বরং প্রশ্রয় দিচ্ছে-এটা স্পষ্ট। ২০১৩ সাল থেকে উগ্রবাদের বিস্তার বেড়েই চলছে, একে স্বমূলে বিনাশ করে একটি বাসযোগ্য বাঙলাদেশ তৈরির কথা ভাবনায় নিতে হবে। সারাদেশ যেভাবে শ্মশানে পরিণত হচ্ছে তা রুখে দিতে হবে। তা না হলে হয়তো বর্তমান সরকারের আমলেই মুক্তিযুদ্ধের সেই শ্লোগান ফিরে আসবে- ‘‘সোনার বাঙলা শ্মশান কেন-আওয়ামী লীগ জবাব চাই’’।

জীবনানন্দ জয়ন্ত এর ফেসবুক থেকে 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত