‘প্রধানমন্ত্রীর স্নেহে খেলাফত কায়েম করছে ওসমান পরিবার’

প্রকাশ : ১৯ মে ২০১৬, ১১:৪৪

শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত বিদ্যালয় কমিটির কূটচালে পড়েছিলেন। নিজের শ্রম ও মেধায় যে বিদ্যালয়টি তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন, তাসের ঘরের মত সেটি ধ্বসে গেছে।

নিজের গোছানো সাজানো বাগানে আজ তিনি আজ বিষাক্ত সাপ। যে সাপকে মারার জন্য বিনা ভোটে নির্বাচিত পার্লামেন্ট মেম্বারের ধর্মের জজবা লাগে।

পার্লামেন্ট মেম্বার সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত। তাঁর বাবা নাম এ কে এম শামসুজ্জোহা, দাদার নাম খান সাহেব ওসমান আলী। 

এই পরিবারটির প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক ধরণের প্রশ্রয় আছে। কারণ খান সাহেব ওসমান আলী আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। আওয়ামী লীগের আপদে বিপদে খান সাহেব ওসমান আলী সাহেবের অবদান আছে। খান সাহেব অকাতরে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুকে টাকা দিয়ে গেছেন। তৎকালীন রাজনীতির বন্ধুর পথে একত্রে হেঁটেছেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে আগলে রেখেছেন পুরো পরিবারটিকে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতজ্ঞতাও এ জায়গাটিতে। তিনি অতীতের দায়ভার শোধ করার জন্যই এ পরিবারটির পাশে আছেন।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তাঁর ভালবাসা অপাত্রে পড়েছে কিনা?

ইতোমধ্যেই আমরা যা দেখছি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের কার্যকলাপে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গায়ে যথেষ্ট কালিমা লেগেছে। 
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের সাথে শামীম ওসমানের নাম জড়িয়ে গেছে, যদিও শামীম ওসমান আসামী নন। নারায়ণগঞ্জের পরিচিত মুখ রফিউর রাব্বির ছেলে হত্যার সাথে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের আরেক ভাই নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের নাম এসেছে। 

ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জের মেয়র নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। নির্বাচনে রফিউর রাব্বি বর্তমান মেয়র আইভী রহমানের পক্ষ নেন। মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শামীম ওসমানকে মনোনয়ন দেয়। আইভী রহমান স্বতন্ত্র নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। পুরো পরিবারটিকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। 

এ কারণেই মেধাবী ছাত্র ত্বকী খুন হয়ে যায় আজমেরী ওসমানদের হাতে। ত্বকীর বাবা ছেলে হত্যার দায়ে আঙুল তুলেছেন শামীম ওসমানের দিকে। এ খুনের কোন নিষ্পত্তি হয়নি। মামলাটির চার্জশীটও দেয়া হয়নি। ঠিক এ সময়েই প্রধানমন্ত্রী পক্ষ নিয়েছিলেন, সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন তিনি ওসমান পরিবারের সাথে আছেন।

ত্বকী হত্যা মামলা হিমঘরে। ১৫৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়ার পরেও আসামি গ্রেপ্তার হয় না। জামিন মেলে যায় কারও কারও। রাজনীতি ও ক্ষমতার এই আনুকূল্য এ পরিবারটিকে দূর্বিনীত করেছে। ত্বকী হত্যার বিচার করতে না পারার কারণেই নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনা ঘটেছে। এক খুন অন্য খুন টেনে এনেছে। পুরোনো এ শহরটিকে এ পরিবারটি মৌরসী পাট্টা বানিয়ে ফেলেছে। যেখনে টাকা তোলা যায় পরিবহন থেকে জায়গা জমি নানা শিল্প কারখানা সব জায়গায় এ পরিবারটির নাম জড়িয়ে যায়। শহরের প্রবেশ মুখ চাষাড়া মোড়ে নামলেই এ পরিবারটির নাম কানে আসতে থাকে, এর একটিও প্রশংসাসূচক নয়।

এখন সবার মুখে মুখে নারায়ণগঞ্জের অপর নাম ওসমানীয়া সাম্রাজ্য। যেখানে খেলাফত কায়েম করেছে ওসমান পরিবার প্রধানমন্ত্রীর স্বস্নেহে।

রাজনীতির যে বলয়ে ওসমান পরিবার বিচরণ করছে, সেখানে কোন জবাবদিহিতা নেই, প্রশ্নাতীত আনুগত্যই একমাত্র মাপকাঠি।
এদেশের নানান জায়গাই এখন ইতিহাসের বারো ভুঁইয়াদের মত দখলে নিয়েছে কোন না কোন ভুঁইয়া। নানান কিসিমের নতুন ভুঁইয়াদের দখলে চলে যাচ্ছে স্বদেশ।

কোন ভুঁইয়ারা শিশুদের পায়ে গুলি করে দেন, কোন ভুঁইয়া দলের কর্মীকে গুলি করে মেরে ফেলেন, কোন ভুঁইয়ারা আন্দোলনকারীকে না পেয়ে, তাঁর বাবাকে থানা হাজতে চালান করে দেন, মামলা না থাকার পরেও।

রাজনীতির কোন পর্যায়ে জবাবদিহিতা না থাকলে, শিক্ষক শ্যামল কান্তিদের আরও নিগৃহিত হতে হবে।

অসুখটি রাজনীতির, এ রাজনীতির খোল নলচে পাল্টাতে না পারলে কেবল প্রধানমন্ত্রীর পানে চেয়ে কোন লাভ হবে না। দু’ একটি ঘটনার প্রতিকার পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ জনগণ নিগৃহিত হতে থাকবে।

নেতা যখন নির্বাচিত করা লাগে না দলীয় ফোরামে, নির্বাচিত করা লাগেনা ভোটে, তখন রাজনীতির ঘর কোন না কোন পর্যায়ে তাসের ঘরের মতই ভেঙে পড়বে।

একজন শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত এ ক্ষয়িষ্ণু রাজনীতির শিকার। রাজনীতিতে শিকারীর সংখ্যা বাড়ছে, প্রতিরোধ করতে না পারলে স্রেফ খবর আছে। কারণ মসজিদে মাইক আছে। অপাত্রে শব্দযন্ত্র ভয়ংকর। 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত