ঘোর কৃষ্ণ অন্ধকার ধেয়ে আসছে এ বাংলায়

প্রকাশ : ১৭ মে ২০১৬, ০০:০২

জনাব শ্যামল কান্তি ভক্ত আপনি ভুল সময়ে ভুল সমাজে শিক্ষকতার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। গত ২৩টি বছর যাবত আপনি কিছু গরু ছাগলকে মানুষ বানানোর চেষ্টা করে গেছেন রোদ-বৃষ্টি-ঝড় মাথায় ফেলে।

দিনাবসানের খেরো খাতায় আজ আপনার সঞ্চয় কিছু নেই। আপনার প্রিয় স্কুলটির সামনে করজোড়ে আপনাকে দাঁড়াতে হয়েছে। যে স্কুলটিতে আপনি প্রায় ২৩ বছর নিজের মেধা ও শ্রম দিয়েছেন। 

আপনার কি আত্মহত্যার কথা মনে হয়েছিল? আমি জানিনা আপনার অনুভূতির কথা জিজ্ঞাসা করা যায় কিনা আদৌ? আপনার কালিমা মাখা মুখটি দেখার পড়ে কোন প্রশ্ন করা যায় কিনা? নিজের কাছেই নিজের অসহায় আত্মসমর্পন।

চন্ডাল ও খেয়োখেয়ির উচ্ছন্নে যাওয়া রাজনীতির কারণে বাকরুব্ধ করা আপনার অসহায় আর্তির ভিডিওটুকু দেখতে হয়েছে। আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন। এ দৃশ্য দেখার মত না, তবুও দেখেছি।

আপনার শ্রম ও ঘামে যে ক’জনকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেছেন, তাদের কয়জন আলোকিত হয়েছে?

আমি সন্দিহান। আলোকের দরজায় আপনি কাউকেই কড়া নাড়তে দেখবেন না। যে সমস্ত ছাত্রদের আপনি পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন তারা আপনার মুখ উজ্বল করেছে। আজ দিনাবসানে তাদের একটিও আপনার পাশে নাই। অন্ধকারের কালো ছায়ায় মুখোশ পড়ে সবগুলো আপনার পাশে হাজির হয়েছিল, একটি সার্টিফিকেটের প্রত্যাশায়। আপনার শ্রমের বিনিময়ে আপনি তাদের জীবনের সিঁড়ি ভাঙতে সহায়তা করেছেন। 

সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাওয়া সে সব কুলাঙ্গাররা এখন ব্যস্ত আপনি ধর্মের কতটা বারোটা বাজিয়েছেন তা জানতে। আপনার আর্তিমাখা মুখটি দেখে সে সব পাষন্ডরা আদিম উল্লাসে মেতেছে এ বাংলায়।

আপনি শিক্ষকতার মহান পেশায় নামটি লিখিয়ে অপরাধ করেছেন জনাব শ্যামল কান্তি ভক্ত। এখন এটি আর মহান পেশা নয় এ পেশার পাইক, পেয়াদা, বরকান্দজরা সকাল-বিকেলে রাজনীতির রাজাধিরাজদের তৈল মর্দন করে চলে। আপনার তৈল দেয়ার অভ্যাস মোটেই ছিল না জনাব ভক্ত। আমরা যা পড়েছি আপনার বয়ানে, আপনার স্কুলের কমিটি নিয়ে ঝামেলা ছিল। অনুমান করি কমিটি হাত বাড়ায় টাকা কড়ির দিকে। 

আপনি জনাব শ্যামল কান্তি ভক্ত টাকার ভক্ত না, কিন্তু অন্যরা? আপনি বড় বেমানান জনাব ভক্ত নিজে টাকা নেননি অন্যকেও দেননি। আপনি অচল মাল জনাব ভক্ত। এ সমাজে কান ধরাটাই আপনার জন্য নির্ধারিত ছিল। আপনার পৈত্রিক প্রাণটি রক্ষায় এর কোন বিকল্প ছিল না আপনার কাছে।

আপনি মৃত হয়ে যাননি একারণেই আপনি প্রার্থনায় বসতে পারেন। পৈত্রিক প্রাণটি আপনার রক্ষা হয়েছে মহামান্য এমপির বদান্যতায়। তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে আশীর্বাদ চাইতে পারেন। আপনি গা ঝাড়া দিয়ে উঠুন জনাব ভক্ত। মহামান্য এমপি জনাব সেলিম ওসমানের দরবারে গিয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে পারেন।

এরকম মহৎ চিত্তের অধিকারী এমপি না থাকলে আপনার মত শিক্ষকগণ ধরাধাম ত্যাগ করতে পারেন। প্রাণ রক্ষায় কুর্ণিশ করতে পারেন, আমরা কিছু মনে করবো না। আর সমাজ ওটি পঁচে গিয়েছে জনাব ভক্ত। 

আপনি টের পাননি শিক্ষকতা করেন বলে। আপনি বড়ই বেমানান জনাব শ্যামল কান্তি ভক্ত।

এই বাংলার শ্যামলীমা আপনার জন্য নয় একজন শ্যামল কান্তি ভক্ত, ঘোর কৃষ্ণ অন্ধকার ধেয়ে আসছে এ বাংলায়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত