নড়াইলে নির্বাচন ঘিরে আতংকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়

প্রকাশ : ১৭ মে ২০১৬, ১৮:৩২

উজ্জ্বল রায়

নড়াইলের ৫নং সালামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে ২৮ মে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই শতাধিক হিন্দু পরিবার সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।

দলীয় প্রতিপক্ষদের হুমকিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক পরিবারগুলো। অপরাধ একটাই, নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা। হিন্দু পরিবারগুলোর পাশাপাশি ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী এস,এম নাজমুল হক প্রিন্সও প্রতিপক্ষদের নানা ধরনের হুমকিতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে শেষমেষ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। 

ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কালিয়া উপজেলার ৫নং সালামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এস.এম নাজমুল হক প্রিন্সকে (মোটরসাইকেল প্রতীক) সমর্থন করায় দেবীপুর গ্রামের দুই শতাধিক হিন্দু পরিবারকে ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) শামীম আহম্মেদের সমর্থকরা জীবণনাশের হুমকি দিয়েছে। এ ঘটনায় ভূক্তভোগীরা কালিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন।  

সোমবার (১৬ মে) দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নিখিল চন্দ্র দাস অভিযোগ করে বলেন, ১১ মে (বুধবার) রাত আড়াইটায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম আহম্মেদের সমর্থক ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বর প্রার্থী নন্দ কুমার দাস এবং তার ভাই অসিম কুমার দাস অখিল, দিপক কুমার দাসসহ ১০/১২ জনে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার চাচাত ভাই গোবিন্দ দাস ও নিরাপদ দাসসহ আমার বাড়িতে আক্রমন করে, সবাইকেই গালিগালাজ করে এবং জীবণনাশের হুমকি দেয়। তারা প্রকাশ্যে হুমকিদেয় যে, নৌকা প্রতিকে ভোট না দিলে তোদের গ্রামছাড়া করা হবে। তোদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে। 

দেবীপুর গ্রামের গোবিন্দ দাস, অনিতা দাস, হরসিদ কুমার দাস অভিযোগ করে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি। আমরাও বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার লোক। আজ আমাদের বাড়িতে সন্ত্রাসীরা রাম দা, লাঠি, ছুরি নিয়ে এসে আমাদের  হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমাদের অপরাধ, আমরা পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন করেছি। 

নিখিল দাসের স্ত্রী সাবিত্রি দাস বলেন, আমার স্বামী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি অথচ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন বাড়ি এসে হত্যাসহ নানা হুমকি দিচ্ছে। আমরা বঙ্গবন্ধুর লোক, আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিন্দুদের নিরাপত্তা দেবেন অথচ আজ আমরা নৌকা মার্কার লোকজনের হুমকিতে গ্রামে বসবাস করতে পারছি না। জীবন আজ মৃত্যুর মুখোমুখি। 

গোবিন্দ দাসের স্ত্রী হারতি রাণী বলেন, আওয়ামী লীগ করেই বিপদে পড়িছি। রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ভয় করছে কখন, নৌকার লোকজন বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিয়ে আমাগে হত্যা করে।

দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা গনপদি দাস, রিপন দাস বলেন, নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেব। কিন্তু আজ হুমকি দেয়া হচ্ছে। এই এলাকার হিন্দু পরিবারগুলো শেষমেষ ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

সালামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এস.এম নাজমুল হক প্রিন্সকে কয়েকদফায় নির্বাচন বর্জন ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচনে টাকা জমা দেওয়ার পর থেকে আমাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। গত ১১ মে বেলা সাড়ে ১১টার পর ০১৭১৯৩৭৭৫৫৭ নাম্বার থেকে আমার ফোনে ফোন করে আমাকে আসন্ন নির্বাচন থেকে সরে যেতে হুমকি দিচ্ছে। অন্যথায় হত্যা করা হবে বলে জানিয়েছে। এ ঘটনায় আমি কালিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। যার নং-৩৫২। 

অপরদিকে, ধুশাহাটি গ্রামের আঃ সালাম শেখের ছেলে আঃ সোবহান শেখ অভিযোগ করে গত ১২মে বিকালে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামীম আহম্মেদ তাকে ফোনে হুমকি দিয়েছে যে, হয় আমার কাজ করবি, না হয় পঙ্গু করে দেবো।

হুমকির বিষয়ে শামীম আহম্মেদ বলেন, সোবহান হিন্দুদের নৌকার বিপক্ষে ভোট দেবার জন্য প্রচারনা চালাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। অথচ তারাতো নৌকার সমর্থক। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। 

কালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ গণি মিয়া বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হক প্রিন্সকে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম চলছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত