অতি বিরল বামুন শালিকের দেখা মিলবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:৪১

সাহস ডেস্ক

বামুন শালিক। দেখতে নাদুস-নুদুস এই পাখিটির দৈর্ঘ্য ২৩ সেন্টিমিটার। ওজন হয়ে থাকে গড়ে ৪০ গ্রাম। কপাল থেকে মাথা হয়ে গলা পর্যন্ত কালো, যা ঝুঁটিতে রূপ নেয়। ছেলেপাখির মাথার ঝুঁটি ঘাড়ের পেছনে ঝুলে থাকে। শরীরের পালক ফোলালে ঝুঁটিটি স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। চোখের নিচ থেকে ঘাড়ের পাশ এবং থুতনি থেকে সম্পূর্ণ নিচের অংশ লালচে-কমলা। কিন্তু গানের পাখি হিসেবে খ্যাত অতি দুর্লভ পাখিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাড়া বাংলাদেশ আর কোথাও দেখা মেলে না।

বাংলাদেশে প্রায় ১১ প্রজাতির শালিকের বিচরণ সংরক্ষণ (রেকর্ড) করা হয়েছে। আমাদের চারপাশে যে শালিক সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, তার নাম ভাত শালিক। আর যেটি সবচেয়ে কম দেখা যায় বা অনেক ক্ষেত্রে দেখাই যায় না, তার নাম বামন শালিক। শালিক পরিবারের বেঁটে আকৃতির এ প্রজাতিকে কেউ কেউ বামুনি কাঠশালিক বলেও উল্লেখ করে থাকে। পরিচিতি আছে শঙ্খ শালিক নামেও। পাখিটির ইংরেজি নাম Brahminy Starling; বৈজ্ঞানিক নাম Sturnus pagodarum।

বামুন শালিক সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় থাকে। কোনো পাহাড়ি অঞ্চলে এ পর্যন্ত এদের দেখা যায়নি। এরা তৃণভূমি, আবাদি জমি, সমতল মাটিতে হেঁটে হেঁটে খাবার খোঁজে। মাটিতে থেকে সব খাবার জোগাড় করে খায়। খাদ্য তালিকায় রয়েছে পোকামাকড় ও রসালো ফল। প্রজনন মৌসুমে ছেলেপাখিদের মধ্যে এই রঙ অধিক গাঢ় দেখায়। দেহের ওপরের দিকটা সম্পূর্ণ ধূসরাভ। ফেব্রুয়ারি-সেপ্টেম্বর মাস এদের প্রজনন মৌসুম। এ সময় এরা গাছের গর্তে ঘাস বা আবর্জনা দিয়ে বাসা বানিয়ে তিন-চারটি ডিম পাড়ে।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত বন্য প্রাণী গবেষক, লেখক এবং দুবাই চিড়িয়াখানার বন্য প্রাণী ও চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. আনিসুজ্জামান মো. সালেহ রেজা খান বলেন, বামুন শালিক এখন বিলুপ্তির পথে। বলা যায়, বিরল থেকে অতি বিরল। এখন আর চোখেই পড়ে না। আমাদের দেশে এদের অত্যন্ত কম সংখ্যায় দেখা যায়। আমি অনেক দিন আগে ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেনে একজোড়া বামুন শালিক দেখেছিলাম। এরপর দু-একটা জায়গায় লোকজন দেখেছে বলে আমাকে জানিয়েছে। তবে খুব বেশি জায়গায় কেউ দেখেনি এটিকে। রাজশাহী অঞ্চলে এদের অল্পবিস্তর দেখা মেলে।

তবে পাখিদের অঘোষিত অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দিন দিন তার চিরচেনা রুপ হারিয়ে ফেলছে বলে মত সংশ্লিষ্টজনের। এর পেছনে তাঁরা ক্যাম্পাসে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল সুউচ্চ বৃক্ষ নিধন, জলাশয় ভরাটসহ প্রশাসনের ভুল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে দায়ী করছেন। ক্যাম্পাসে পাখিদের কলোনি হিসেবে খ্যাত এমন কয়েকটি আবাসস্থল সম্প্রতি ভরাট করে চলছে বিশ্ববিদ্যালয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। এছাড়া ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত হবিবুর রহমান হলের সামনের জলাশয় ও বিশ্ববিদ্যালয় জিমনেশিয়ামের পেছনের বড় জলাশয়টি ভরাট করার ফলে গত বছর থেকে ক্যাম্পাসে পরিযায়ী পাখিদেরও চোখে পড়ছে না।

তবে ক্যাম্পাসে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করছে বলে দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের বলেন, ক্যাম্পাসে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুধাবন করেছি। ইতোমধ্যে আমি এ বিষয়ে পাখি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটনিক্যাল গার্ডেনসহ ক্যাম্পাসের আরও কয়েকটি অঞ্চলকে পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য করে দেওয়ার চেষ্টা করছি বলে জানান তিনি।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.
 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত