মেঘনা নদীর তীর রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ

একনেকের সু-দৃষ্টি কামনায় রামগতি-কমলনগরের অবহেলিত মানুষের পাশে আ'লীগ নেতা সাজু

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২১, ২৩:০০

লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৩১ কিলোমিটার মেঘনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভার অপেক্ষায় রয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইতোমধ্যে তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দের ফাইল তৈরি করা হয়েছে।

গত ১৭ মে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ফাইলটিতে স্বাক্ষর করেন। আগামী মঙ্গলবার সকালে একনেক সভায় ফাইলটি উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এর অনুমোদন হলে নদী তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ।

এদিকে একনেকে উপস্থাপনের পর ফাইলটিতে প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর করলে অর্থ ছাড় পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। একনেক সভায় উপস্থাপন এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের দিকে রামগতি-কমলনগরের প্রায় সাড়ে সাত লাখ নদীভাঙা মানুষ তাকিয়ে আছে। তাদের আশা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপকূলীয় এ জনপদের মানুষের স্বপ্ন পূরণ করবেন। এজন্য তারা আশায় বুক বেধে আছেন, কখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেঘনার অব্যাহত ভাঙন থেকে রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার বাজার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রক্ষায় ২০১৪ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এতে আলেকজান্ডার বাজার রক্ষায় প্রায় তিন কিলোমিটার কাজ করে সেনাবাহিনী। একই বরাদ্দের অংশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি কমলনগরের মাতাব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করে। মাতাব্বরহাটের এক কিলোমিটার বাঁধে অনিয়ম হওয়ায় এক বছরে অন্তত ১০ বার ধস নামে। সবমিলিয়ে দুই উপজেলায় ছয় কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। কিন্তু নদীর পরিধি প্রায় ৫০ কিলোমিটার। বাকি ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিনিয়তই চলছে ভাঙন খেলা। তিন যুগ ধরে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ বহু বসতবাড়ি ও বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

পাউবো সূত্র জানায়, ভাঙন কবলিত এলাকা বিস্তীর্ণ হওয়া এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্প্রতি একাধিকবার সার্ভে করা হয়েছে। এতে রামগতির বয়ারচর থেকে কমলনগরের মতিরহাট পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা বাঁধের জন্য একটি প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এতে তিন হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পাউবোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রামগতি-কমলনগর উপজেলার বড়খেরী, লুধুয়া বাজার ও কাদিরপন্ডিতের হাট এলাকা রক্ষা বাঁধ প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তাব করেছে। ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বাস্তবায়নের নিমিত্তে একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য (পতাকা-ক) খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। খসড়ায় পরিকল্পনামন্ত্রীর সইয়ের মাধ্যমে একনেক সভায় উপস্থাপনের জন্য চূড়ান্ত করা হয়।

স্থানীয়রা বলেন, প্রতিদিনই ভাঙনে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, হারাচ্ছে বাপ-দাদার ঘর-বাড়ি। ভাঙন রোধ প্রকল্পের জন্য দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুজ্জাহের সাজু ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ফাইলটিতে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের মাধ্যমে এ অঞ্চলের অবহেলিত মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে এটাই প্রত্যাশা।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্য আবদুজ্জাহের সাজু বলেন, সর্বনাশা মেঘনা নদী ভাঙন রোধ এ অঞ্চলে নদীভাঙা মানুষের প্রাণের দাবি। জন্মভূমি রক্ষা ও এ অঞ্চলের অবহেলিত জনগোষ্ঠির মুখে হাসি ফোটাতে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য আমি বিভিন্ন কার্যালয়ে যোগাযোগ রেখেছি। ফাইল নিয়ে ৬ বার চেষ্টার পর এবার প্রত্যাশা রাখছি, শিগগিরই অবহেলিত জনগোষ্ঠী কাঙ্ক্ষিত সুখবর পাবেন।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, ৩১ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধের একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। চূড়ান্ত বাস্তবায়ন ও বরাদ্দ ছাড় পেলেই তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কাজ শুরু করা হবে।

প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর উপজেলা মেঘনা নদী ভাঙন কবলিত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রামগতি ও কমলনগর উপজেলা। ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিভিন্নসময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ অন্তত ২০ কিলোমিটার জুড়ে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত