বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, পতঙ্গ নস্ট করবে ৫০% খাদ্যশস্য

প্রকাশ : ২৬ মে ২০১৯, ০২:০৩

ভূমন্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধি বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিশেষ ঘটনা। যা সময় বা কারণ নিরপেক্ষ হলেও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলতে বর্তমান সময়ে উষ্ণতা বৃদ্ধিকেই বুঝায়, যা মানুষের কার্যক্রমেই ঘটেছে। জলবায়ুর পরিবর্তন বিশেষ করে ভূমন্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে অন্তত ১০-২৫% বেশি গম, চাল এবং ভুট্টা নস্ট করবে কীট, গবেষকদের হিসেব তাই বলছে।

উষ্ণতা এসব ফসল নাশক পতঙ্গকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে এবং সে গুলোর খাবার গ্রহণের পরিমান যাবে বেড়ে। সেই সাথে হবে তাদের বংশবৃদ্ধি। আর তার প্রভাব পরবে বিশ্বের প্রধান প্রধান খাদ্যশস্যে। মার্কিন একটি গবেষণা এমন ইঙ্গিত দিয়েছে। গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক কার্টিস ডয়েচ এমন মন্তব্য করেছেন। যদি বর্তমান হারে সামগ্রিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে তবে এই শতাব্দীর শেষে ফসলভুক কীটের খাবার গ্রহণের মাত্রা দ্বিগুণ হবে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষকরা এই তথ্য জানান।

গবেষকদের দলটি ৩৮ প্রজাতির ক্ষতিকর পোকার তথ্য তাদের গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। তারা দেখতে চেয়েছেন যে কিভাবে তাপমাত্রা এসব কীটের বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে, সেই সাথে খাদ্য শস্যের ওপর তাদের প্রভাব পরে। ভবিষ্যৎ ফসল হানির ফলাফল বুঝতে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে দেখা গেছে তাপমাত্রা প্রতি ডিগ্রী বৃদ্ধিতে ফলসের ক্ষতি হয়ে থাকে শতকরা ৫ ভাগ। আর সেখানে কীটপতঙ্গের প্রভাব যোগ হলে সে ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ৫০%। প্রফেসর টিউকসবারির মতে “যত তাপমাত্রা বাড়বে তত পোকামাকড়ের বংশবৃদ্ধি হবে এবং তত দ্রুত তারা ফসল খেতে শুরু করবে”।তিনি আরো বলেন “খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে, ফসলের অভিযোজনে জোর দিতে হবে”।

উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব বেসি পরবে বিশ্বের অন্যতম ফসল উৎপাদনকারী অঞ্চলে। এই আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে, যেমন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং চীন। যখন ভূট্টা, ধান এবং গম ক্ষতিগ্রস্ত হবে তখন আসলেই সেটা হবে একটি মহা বিপর্যয়, কেননা শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালরির ৪২% আমরা পাই এসব শস্য থেকে।

জলবায়ু মডেল বলছে যে ২১০০ সাল নাগাদ বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ২-৫ ডিগ্রী বৃদ্ধি পাবে। আর সেক্ষেত্রে এই শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদই অন্তত ২ ডিগ্রী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পোকামাকড় দ্বারা ফসলের ক্ষতির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা সে সময়ের মধ্যেই ঘটতে শুরু করবে বলে গবেষকরা মনে করছেন।

বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণায়, তারা পুরো বিশ্ব থেকে সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে একটি গাণিতিক গণনা করেন। যা ইঙ্গিত দেয় যে, তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে ফসলের ক্ষতি বেশি করে কীটপতঙ্গ।

ইউরোপে বিশেষ করে ব্রিটেনে ফসলের ক্ষেতে কীটনাশকের ব্যবহার খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, উষ্ণ জলবায়ু কীটপতঙ্গকে আরও বেশি কীটনাশক প্রতিরোধী করে তুলতে পারে।

এছাড়া হতে পারে ফসল বপনের সময়ে পরিবর্তন এনে কিংবা কীট-প্রতিরোধী ফসলের জাত চাষ করে। এ সংক্রান্ত গবেষকদের মতে সবগুলোর পদ্ধতির সমন্বিত ব্যবহার অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে । তাই কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে অনেক বেশী জৈবিক পদ্ধতি ব্যবহারে জোর দেন প্রফেসর পপি। তার মতে লেডিবার্ড জাতীয় পোকা ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

(তথ্যসূত্র-বিবিসি)

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত