সুরমা এখন খেলার মাঠ!

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০১৯, ১১:৫২

নুর উদ্দিন

নাব্যতা সংকটে এক সময়ের খরস্রোতা পুরাতন সুরমা নদী দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নারায়নপুর গ্রাম থেকে পাথারিয়া-শরিফপুর পর্যন্ত ভরাট হয়ে গেছে। এক সময় এ নদীতে সারা বছর লঞ্চ ও কার্গো চলাচল করত। কিন্তু ২০বছর ধরে নদীতে পানিই থাকে না। রূপ-যৌবন হারানো সুরমা ভরাট হওয়ায় খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে।

হেমন্তে পানি সংকটের কারণে নদীর তীরবর্তী জমিতে চাষাবাদে সমস্যা হচ্ছে। নদীর গতি ফেরাতে নানা পরামর্শ ও মতামত দিয়েছেন, নদী সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন উপচার্য অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত।

পুরাতন সুরমা নদী ঘুরে দেখা যায়, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার নারায়নপুর, গাগলী, বোগলাকাড়া, দেবগ্রাম, নোয়াখালী, জামলাবাজ, হাসনাবাজ, হাসারচর, নগর, আন্দাবাজ, গনীগঞ্জ, কান্দিগাঁও, পাথারিয়া-শরিফপুর পর্যন্ত নদী ভরাটের ফলে গ্রামের লোকজন চরম পানি সংকটে ভুগছেন। নদীর ১০-১২ কিলোমিটার অংশের অধিকাংশ শুকনো। ভরাট হওয়া নদীর তলদেশে গরু-ছাগল চড়ছে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পৈন্দা থেকে শুরু হয়ে মরা সুরমা দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই, শাল্লা ও নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরি উপজেলার কৃষ্ণপুরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার ধনপুরে মিশেছে। এই নদীর দৈর্ঘ্য ১১৬ কিলোমিটার। তবে নদীর প্রায় ৭০-৮০ কিলোমিটার জায়গা ভরাট হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর পওর বিভাগ -১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, পুরাতন সুরমা নদী সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার ধনপুরে গিয়ে মিশেছে। ১১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পুরাতন সুরমা নদীর অনেক জায়গায় পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় শাল্লা অংশে ৪০ কিলোমিটার খনন কাজ বাস্তবায়ন চলছে। অধিকাংশ জায়গা খনন হয়ে গেছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ২৮ কিলোমিটার ও দিরাই উপজেলায় ৩ কিলোমিটারসহ ৩১ কিলোমিটার খননের জন্য পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

নদী সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন উপচার্য অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, নদীগুলোতে পানির সাথে পলিও প্রবাহিত হয়। পানি প্রবাহের জন্য একটি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রয়োজন। যে শক্তির সাহায্যে পানি প্রবাহিত হয়ে থাকে সেই শক্তিই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। সেই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কমে গেলে পানি ও পলি অনেক দূর একে বেঁকে চলে। নদীর তল দিয়ে সেলিম্যান্টও প্রবাহিত হয়। বর্ষার পর শীতকালে নদীর পানি ও স্রোত কমে গেলে পলি পড়ে নদী ভরাট হতে থাকে। নিয়মিত পলি খনন না হওয়াই নদী ভরাটের অন্যতম কারণ।

প্রাচীন বাংলার ইতিহাস অনুযায়ী অতীতে বর্ষার পরে স্থানীয় জমিদারের নেতৃত্বে নদীগুলোকে কেটে নদী গভীর করা হত। যাতে পরের বর্ষায় পানি প্রবাহিত হতে পারে। তখন সুনামগঞ্জেও এই ব্যবস্থা চালু ছিল। কিন্তু ৫০-৬০ বছর ধরে অযত্নের কারণেই নদীগুলো ভরাট হয়েছে। নদীর ভরাট অংশ কেটে দিতে হবে।

নদী সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ভরাটকৃত নদী কেটে পানি প্রবাহ তৈরি করতে হবে। ঢালু তীর রেখে নদী থেকে মাটি কেটে তুলতে হবে। যাতে তীর ভেঙে নদীতে না পড়ে। নদীর পলি মাটি কাটতে হবে পরিকল্পিতভাবে, যাতে নদী থেকে কেটে তোলা মাটি আবার নদীতে না পড়ে। প্রয়োজনে নদীর তীরে কোথাও কিছু জায়গা ভরাট করে বসতবাড়ি ও কোন স্থাপনা তৈরির জন্য প্লাটফর্ম করা যেতে পারে। এতে কেটে তোলা মাটি নদীতে পড়ার সম্ভাবনা কমবে এবং মানুষের উপকারে আসবে।

তিনি বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় নদী খননের পাশাপাশি নদীর সাথে সংযুক্ত সকল খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রয়োজনে রাস্তা কেটে খাল উদ্ধার করে সেখানে কালভার্ট তৈরির জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। আমরা আশা করি সরকারের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে নদীগুলো পূর্বের গতি ফিরে পাবে।

সাহস২৪.কম/রিয়াজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত