৩৪ মাসের সূচক সর্বনিম্ন শেয়ারবাজারে চরম আস্থার সংকট

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪, ২২:০৬

সাহস প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। এদিন রীতিমতো বাজারে ধস নেমেছে। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৩৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে গেছে। ডিএসই’র মতো গতকাল অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে।
দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল দশা দেশের শেয়ারবাজারে। মাঝে কিছুদিন ঘুরে দাঁড়ালেও ফের শেয়ারবাজারে চলছে অব্যাহত দরপতন। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত বিনিয়োগকারী পুঁজি হারাচ্ছেন। বাজারের পতন ঠেকানোর কোনো উপায় যেন মিলছে না। বরং দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে রয়েছে কারসাজি চক্রের দৌরাত্ম্য- সবমিলিয়ে শেয়ারবাজারের এমন দশা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে সাড়ে ১১ শতাংশ হয়েছে। বাজারে সাপোর্ট দেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) টাকার অভাবে পড়েছে। ব্যাংক, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো শেয়ার কেনার বদলে বিক্রির চাপ বাড়াচ্ছে। আবার কিছু খাতের প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। সবকিছু মিলিয়েই শেয়ারবাজারে টানা দরপতন চলছে।
বিশ্লেষকদের মতে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ারবাজার নিয়ে ছড়ানো হচ্ছে নানান গুজব। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দায়িত্বশীলদের নিয়ে নানান কটু কথা বলা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বাজারে এখন চরম আস্থার সংকট।
ডিএসই’র মতো গতকাল অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা আট কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আর শেষ ২৪ কার্যদিবসের মধ্যে ২১ কার্যদিবসেই দরপতন দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এতে একই সপ্তাহেই ডিএসই’র বাজার মূলধন ৪৯ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে যায়। আর টানা চার সপ্তাহের পতনে বাজার মূলধন কমে ৭০ হাজার কোটি টাকার ওপরে এবং ডিএসই’র প্রধান সূচক কমে ৫০০ পয়েন্টের ওপরে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে গতকাল দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৪১টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১৯টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স ৮৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮১৪ পয়েন্টে নেমেছে। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের ২৩ মে’র পর সূচকটি সর্বনিম্ন অবস্থানে অবস্থান করছে। ২০২১ সালের ২৩ মে ডিএসই’র প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৭৮৭ পয়েন্ট। এরপর সূচকটি আর এত নিচে নামেনি।
অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ২০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৬৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৮৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ২১ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফু-ওয়াং সিরামিকের ১৬ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গোল্ডেন সন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, রেনেটা লিমিটেড, বেস্ট হোল্ডিং, এস এস স্টিল, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো এবং লাভেলো আইসক্রিম।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৭৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ২১৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭০টির এবং ১২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত