জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

স্যামসন এইচ চৌধুরী

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:৩৭

১.
বাংলাদেশের শিল্প বাণিজ্য ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের কীর্তিমান পুরুষ ছিলেন স্যামসন এইচ চৌধুরী। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী, স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা, কর্ণধার স্যামসন এইচ চৌধুরীর আজ জন্মদিন। ১৯২৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। এদেশের অন্যতম শীর্ষ এই শিল্পোদ্যোক্তার স্মৃতির প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি ৮৬ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে পরলোক গমন করেন। তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে, তিনি দেখিয়েছেন সাধারণ একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও কীভাবে অসাধারণ হয়ে ওঠা যায়। সচেতন মনোভাব নিয়ে ধীরে চলার পরিচ্ছন্ন নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন বলেই তিনি দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যক্ষেত্রে বিন্দু থেকে সিন্ধুতে পরিণত হয়েছিলেন। অসাধারণ এই মানুষের জীবন ও কর্ম আমাদের পথের দিশা হোক। আস্থাহীনতার অন্ধকার সময়ে আশার আলো ছড়াতে থাকুক তাঁর জীবনদর্শন অন্ধকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে। 

২.
সততা, নিষ্ঠা, শ্রম, মেধা ও শৃঙ্খলা একজন মানুষকে কত ওপরে নিয়ে যেতে পারে তার উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত স্কয়ার গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরী (জন্ম: ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯২৫ - মৃত্যু: ৫ জানুয়ারি, ২০১২)। যিনি প্রচণ্ড আস্থা ও মনোবলকে পুঁজি করে শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছেছিলেন। এ দেশের শিল্প ও ব্যবসায় যার অবদান প্রশংসনীয়। প্রতিকূল অবস্থাকে পাশ কাটিয়ে শূন্য থেকে স্কয়ার গ্রুপ যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশের মধ্যে শীর্ষে উঠে এসেছেন তিনি। বিশিষ্ট শিল্পপতি ও স্কয়ার গ্রুপের কর্ণধার স্যামসন এইচ চৌধুরী ভারত থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে পাবনার আতাইকুলা গ্রামে একটি ফার্মেসির দোকান দিয়ে তাঁর ব্যবসায়িক জীবন শুরু করেন। এ দোকানের অভিজ্ঞতা থেকে ১৯৫৮ সালে চার বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে খুব স্বল্প পরিসরে শুরু করেন একটি ওষুধ কারখানা। সেই কারখানাই আজ পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্ ওষুধ শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে। চার বন্ধু হাতে হাত ধরে শুরু করার ফলে এ প্রতিষ্ঠানের নামকরণ হয়েছিল ‘স্কয়ার’। ওষুধ শিল্পের এ অগ্রনায়ক কেবল ফার্মেসি ব্যবসাতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তাঁর ব্যবসায়িক প্রজ্ঞাকে ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রসাধন সামগ্রী, টেক্সটাইল, কৃষিপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও গণমাধ্যমে। দেশের অন্যতম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙার তিনি ছিলেন চেয়ারম্যান। প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মী স্কয়ার গ্রুপে কাজ করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তার অসামান্য অবদান ছিল। তিনি ছিলেন দানবীর। অসংখ্য ছাত্র, দরিদ্র, অনাথ তার সহানুভূতি পেয়ে নতুন জীবন পেয়েছে।

৩.
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর নিজের, পরিবারের এবং তাঁর তিন ছেলের অবদান অনস্বীকার্য। বড় ছেলে স্যামুয়েল স্বপন ভারতের আশ্রয়কেন্দ্রে কাজ করেছেন। দ্বিতীয় ছেলে তপন দেশের অভ্যন্তরে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য সাহায্য জুগিয়েছেন। ছোট ছেলে অঞ্জন রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করেছেন। জীবন রক্ষার জন্য স্যামসন এইচ চৌধুরী আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। পরে পাকিস্তানি বাহিনীর চাপে স্কয়ার কারখানা চালু করতে হয়েছে। ইপিসিসি ছিল ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেসের (ডব্লিউসিসি) আঞ্চলিক সংগঠন। ডব্লিউসিসি তাঁকে জানাল, তারা এক জাহাজভর্তি খাদ্য ও ওষুধ পূর্ব পাকিস্তানের জেনোসাইড ভিকটিমদের জন্য পাঠাচ্ছে। মি. চৌধুরী বুঝেছিলেন, এ খাদ্য ও ওষুধ পাকিস্তানি বাহিনী নিজেরাই ব্যবহার করবে। তাই তিনি ডব্লিউসিসিকে জানালেন, যেন এই শিপমেন্ট ভারতের শরণার্থী ক্যাম্পে পাঠানো হয়। হয়েছিলও তাই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেছেন। পাবনার সুজানগরে তিনিই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এই অভিজ্ঞতাকে তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন।

৪.
শিল্পোদ্যোক্তা এবং মানব সম্পদ উন্নয়নে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব স্যামসন এইচ চৌধুরী দেশের শিল্প জগতের শীর্ষ শিখরে পৌছুলেও ভুলে যাননি অতীত। তিনি নিজের জেলা পাবনাকে খুব ভাল বাসতেন। তিনি পাবনার অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরীর আধুনিকায়ন করেন। বনমালি ইন্সটিটিউটসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে তিনি সহায়তা করেন। তিনি ছিলেন পাবনা প্রেসক্লাবের সম্মানিত আজীবন সদস্য। এ ছাড়াও পাবনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রয়েছে তাঁর অবদান। তিনি পরলোকে চলে গেলেও এ সব প্রতিষ্ঠান তাকে স্মরণ করবে চীরকাল।

৫.
নতুন প্রজন্মের কাছে তার জীবনী রূপকথার মতোই মনে হবে। আমরা জানি, স্যামসন এইচ চৌধুরী ১৯২৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এখনকার গোপালগঞ্জ জেলার অরুয়াকান্দিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ড. ই এইচ চৌধুরী (ইয়াকুব হোসাইন চৌধুরী), মায়ের নাম লতিকা চৌধুরী। ১৯৩০ সালে চাঁদপুরের মিশন স্কুলে তার শিক্ষাজীবন সূচিত হয়। তাঁর পিতা সেখানে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৩২ সালে পিতা বদলি হলে পাবনার আতাইকুলায় একটি গ্রামের স্কুলে কিছুদিন পড়াশোনা করেন। পরে ভালো পড়াশোনার জন্য পিতা তাকে পাঠিয়ে দেন ময়মনসিংহের ভিক্টোরিয়া মিশন স্কুলে। সেখানে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়ার পর পশ্চিমবঙ্গের বিষ্ণুপুরে শিক্ষা সংঘ হাইস্কুলে গিয়ে ভর্তি হন ১৯৩৫ সালে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ১৯৪২ সালে ফিরে আসেন পাবনায়। সেখানকার আতাইকুলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন ১৯৪৩ সালে। সে বছরই পরিবারের কাউকে না জানিয়ে ইন্ডিয়ান রয়েল নেভিতে যোগ দেন। তবে সেখানে বেশি দিন চাকরি করতে পারেননি। ১৯৪৭ সালে ডাক বিভাগে যোগ দেন এবং ওই বছরই বিয়ে করেন অনিতা চৌধুরীকে। তাঁর ৩ সুযোগ্য পুত্র স্যামুয়েল এস চৌধুরী (স্বপন চৌধুরী), তপন চৌধুরী ও অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু নিজ নিজ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন। আর এখনও তাদের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন মা অনিতা চৌধুরী।

৬.
বিয়ের পরই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। সরকারি চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন। তবে সেটা শুরু করেছিলেন খুব স্বল্প পরিসরে। ১৯৫২ সালে বাবার প্রতিষ্ঠিত ‘হোসেন ফার্মেসী’ দেখভাল শুরু করেন প্রথমে। বাবার পেশার সুবাদে ছোটবেলা থেকেই ওষুধ নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন। বড় হয়ে ওষুধশিল্পে মনোনিবেশ এবং ক্রমে মহীরুহ হয়ে ওঠার বীজ হয়তো সেকালেই বোনা হয়েছিল। স্কয়ার বাংলাদেশে আজ এক আস্থার প্রতীক। এটি আজ বাংলাদেশে শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ। আর এর স্বপ্নদ্রষ্টা স্যামসন এইচ চৌধুরী। স্যামসন এইচ চৌধুরীর নেতৃত্বে চার বন্ধু মিলে পাবনা শহরে শালগাড়িয়া এলাকায় যে ছোট্ট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেটি আজ মহীরুহ। ১৯৫৮ সালে যে প্রতিষ্ঠান দিয়ে স্কয়ারের যাত্রা শুরু হয়েছিল তার নাম ছিল স্কয়ার ফার্মা।
 
৭.
ছোটবেলায় গাছগাছালি, লতাপাতা নিয়ে খেলা ছিল যার অভ্যাস। হামানদিস্তায় লতাপাতা পিষে খেলার ছলে ওষুধ বানিয়ে মজা পেত। মানুষের হাত-পা কেটে গেলে গাছের পাতা ছেচে লাগিয়ে দিত। বাবা ছিলেন চিকিৎসক। সে সুবাদেই ওষুধ তৈরির প্রতি তার আগ্রহ ছিল প্রচুর। লেখাপড়া শেষ করে কিছুদিন চাকরি করেছেন। ভালো লাগল না। বাবাকে বললেন টাকা দাও, ব্যবসা করব। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে একটি ফার্মেসি খুললেন। চিকিৎসায় বাবার খুব সুনাম ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসত। এক সময় দেখলেন এমবিবিএস ডাক্তারের প্রতি রোগীরা বেশি ঝুঁকছে। তার এক বন্ধু ডাক্তার ছিল। তখন ওই ডাক্তারকে গিয়ে বলা হলো হাটবারের দিন ফার্মেসিতে বসতে হবে। ফার্মেসি ব্যবসা বেশ জমে উঠল। এভাবে ওষুধ বিক্রি করতে করতেই হঠাৎ একদিন মাথায় চিন্তা এলো। আমরা তো ওষুধ তৈরি করতে পারি। যে কথা সেই কাজ। চার বন্ধু এক সঙ্গে মিলে শুরু করল ওষুধ তৈরির কাজ। ২০-২৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ওষুধ তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। দেড় বছরে তাদের পুঁজি বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ হাজার টাকা। আর চার বছর পর মুনাফা করতে শুরু করেন। এই সফল ও স্বপ্নের গল্প স্কয়ার গ্রুপের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর। 

৮.
১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ধীরেন দত্তের কাছে গেলেন উদ্যমী যুবক স্যামসন এইচ চৌধুরী। ওষুধ কারখানা স্থাপনের একটা লাইসেন্স চাইলেন। পেলেনও। প্রথমে নিজে বাবার নামের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করেন 'ই-সনস' নামক ওষুধ তৈরির কারখানা। পরে বাবার কাছ থেকে পুঁজি নিয়ে নেমে পড়েন ফার্মেসি ব্যবসায়। চার বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস নামে প্রথম ওষুধ কারখানা। চারজন অংশীদারের সমান মালিকানা আর প্রচেষ্টায় চলবে এ শিল্প- এ প্রেরণা থেকেই এমন নাম। স্কয়ারের নামকরণ প্রসঙ্গে স্যামসন এইচ চৌধুরী একবার একটি দৈনিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এটি চার বন্ধুর প্রতিষ্ঠান। তা ছাড়া আমাদের চার হাত সমান। এর লোগোও তাই বর্গাকৃতির।’

৯.
স্যামসন এইচ চৌধুরী শুরুতে স্কয়ার ফার্মাসিটিউক্যাল (১৯৫৮) প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৯১১ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়। তিনি তাঁর স্কয়ার ফার্মাসিটিউক্যালকে ভিত্তি করেই পরবর্তী ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত করেন। স্যামসন চৌধুরীর অপরাপর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হলো: স্কয়ার টয়লেট্রিজ লি., স্কয়ার টেক্সটাইল লি., স্কয়ার স্পিনিং লি., স্কয়ার নিট ফ্যাব্রিক্স লি., স্কয়ার ফ্যাশন লি., স্কয়ার হসপিটাল লি., স্কয়ার অ্যাগ্রো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড প্রোসেসিং লি., স্কয়ার ইনফরম্যাটিক্স লি., স্কয়ার হেলথ প্রোডাক্টস লি., স্কয়ার হারবাল অ্যান্ড নিউট্রাসিটিক্যালস লি., স্কয়ার কনজিউমার প্রোডাক্টস লি., ফার্মা প্যাকেজ প্রাইভেট লি., অ্যাসট্রাটস লি., বর্ণালি প্রিন্টার্স লি., অ্যাইজেস সার্ভিসেস লি., স্কয়ার সিকিউরিটিস ম্যানেজমেন্ট লি. প্রভৃতি। স্যামসন চৌধুরী শাহবাজপুর টি এ্যাস্টেটসহ চা শিল্পেও অর্থ বিনিয়োগ করেন। এসব শিল্প-কারখানাতে তিনি কয়েক হাজার মিলিয়ন অর্থ বিনিয়োগ করেন যা দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। স্কয়ার আর্মাসিটিক্যালস লিমিটেড বাংলাদেশের বৃহৎ ফার্মাসিটিউক্যাল কোম্পানিগুলির অন্যতম। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১০.
স্যামসন এইচ চৌধুরী তাঁর বিশেষ কর্মকাণ্ডের জন্য স্বীকৃতি লাভ করেন। ২০০৫ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাঁকে শ্রেষ্ঠ রাজস্ব প্রদানকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। তিনি রাষ্ট্রের ভি আই পি (অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) খেতাবে ভূষিত হন। উদ্যোক্তা সমাজে স্যামসন চৌধুরী ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচিত। তিনি বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (সাবেক ফোর্ড ফাউন্ডেশন), মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, বাংলাদেশ হারবাল প্রোডাক্টস ম্যানুফেকচারিং অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ, বাংলাদেশ ফার্মাসিটিউক্যাল অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (বাংলাদেশ) এবং মেট্রোপলিটান চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালন করেন। দেশের শিল্প সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ব্যবসায়ী সম্প্রদায় থেকে যেসব সম্মাননা লাভ করেন তম্মধ্যে রয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক সম্মাননা (২০০৩), অনন্য ব্যবসায়ী নীতির জন্য ব্যাংকার্স ফোরাম অ্যাওয়ার্ড (২০০৫), ম্যানুফেকচারিং Best Published Accounts and Reports (২০০৬) এর জন্য আইসিএবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড। 

১১.
তিনি ছিলেন ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’-এর সভাপতি। তিনি কখনোই কর্মচারীদের বঞ্চিত করেননি। তাঁর কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কখনো ধর্মঘট হয়নি। কর প্রদান সম্পর্কে তিনি যিশুর নির্দেশ অনুসরণ করতেন। তিনি ছিলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ করদাতা এবং কর ফাঁকিকে ঘৃণা করতেন। তিনি ঋণখেলাপি ছিলেন না, পুঁজিবাজারে নয়ছয় করেননি। 

১২.
খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী স্যামসন এইচ চৌধুরী ছিলেন উদার মানবতাবাদী। তাঁর বদান্যতা ছিল ধর্ম ও আঞ্চলিকতার ঊর্ধ্বে। শাহবাজপুর টি এস্টেটর মুসলিম চাকুরিজীবীদের অনুরোধে তিনি সুজাউল মাদ্রাসা নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর শিল্প-কারখানায় কর্মরত সকল ধর্মের শ্রমিক ও দরিদ্র লোকদের নিকট স্যামসন চৌধুরী ছিলেন একজন উদার, জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব। পারিবারিক শৃঙ্খলা ধরে রাখতে ‘পরিচ্ছন্নতা’ শব্দটিকে তিনি বারবার ব্যবহার করতেন। স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্র, পিতা-কন্যা, জীবনের বিভিন্ন অভিব্যক্তিতে তিনি শব্দটির যথার্থ ব্যবহার করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একজন প্রবল ধর্মবিশ্বাসী ছিলেন। প্রাতঃকালীন প্রার্থনা না করে তিনি বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রাতরাশ গ্রহণ করতেন না। প্রাতঃকালীন প্রার্থনায় অনুপস্থিত হলে তাঁর নির্দেশ ছিল—নো বাইবেল নো ব্রেকফাস্ট। তিনি তাঁর আত্মীয়স্বজনকে অবহেলা করেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন, নীতিবোধ ও মূল্যবোধ একমাত্র ধর্মাচরণের মাধ্যমেই সম্ভব। 

১৩.
মৃত্যুঞ্জয়ী স্যামসন এইচ চৌধুরী ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। একালের কিংবদন্তি স্যামসন এইচ চৌধুরীকে বাঙালি স্মরণ করবে তাঁর কাজের জন্য। অবিচল আশার প্রতীক, প্রবল আস্থা আর অটুট বিশ্বাসের কীর্তিমান পুরুষ স্যামসন এইচ চৌধুরীর মহাপ্রয়াণ দিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি আবারো জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

(তথ্যসূত্র : বাংলাপিডিয়া, উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেট)

লেখক: আবদুল্লাহ আল মোহন 
সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ভাসানটেক সরকারি কলেজ, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত