একদিনে তিন আগুনের ঘটনা

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৪, ২০:২৯

সাহস প্রতিবেদক
ছবি: সংগৃহীত

গতকাল ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের তিনটি স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকায় একটি, নারায়ণগঞ্জে একটি ও মুন্সিগঞ্জে একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা রয়েছে। রোববার রাতে এ প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার অগ্নিকাণ্ড ছাড়া বাকি দুইটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এখনো পর্যন্ত প্রাণহানির কোনো খবর না পেলেও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শত শত পরিবার।  
রাজধানীর কড়াইলের গোডাউন বস্তিতে লাগা আগুনে দুই শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বস্তিবাসী। এ আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন বস্তির অনেকে। গতকাল বিকাল ৫টা ৩৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস। ৪টা ৫ মিনিটে কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
এর আগে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সে সময় ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাউছিয়া কাঁচাবাজারে আগুন লাগে গতকাল ভোরে। পরে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট কাজ করে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার উপজেলায় টি কে গ্রুপের মালিকানাধীন সুপার বোর্ড কারখানার আগুন ছয় ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। গতকাল দুপুর সোয়া ১টার দিকে উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের জামালদি এলাকায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। 
সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত ফায়ার ফাইটার আনিসুর রহমান বলেন, গজারিয়ার সুপার বোর্ড কারখানার আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। 
গজারিয়া ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ রিফাত মল্লিক বলেন, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। প্রথমে গজারিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দুটি ইউনিট অগ্নি নির্বাপনে কাজ শুরু করি। পরে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে আরো আটটি ইউনিট অগ্নিনির্বাপণে যোগ দেয়। ভেতরে দাহ্য পদার্থ থাকায় অগ্নিনির্বাপণে সমস্যা হচ্ছে। 
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকে ওই কারখানা কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। দুপুর সোয়া ১টার দিকে কারখানায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। কারখানার শ্রমিক ও স্থানীয়রা স্থানীয়ভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে আগুনের তীব্রতা বেশি হওয়ায় ব্যর্থ হন তারা। কারখানার পাশেই নদীতে পাটখড়ি বোঝাই তিনটি ট্রলার অবস্থান করছিল। একপর্যায়ে কারখানার আগুনের ফুলকি বাতাসের মাধ্যমে ওই ট্রলারগুলোতে পড়লে মালামালসহ ট্রলারও আগুনে পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়।
কারখানার শ্রমিক আবুল কাসেম বলেন, কারখানার ভেতরে প্রচুর পরিমাণে পাটখড়ির মজুদ ছিল। রোববার আমরা যথারীতি কাজ করছিলাম। কারখানার এক পাশে সামান্য আগুনের ফুলকি দেখা যায়। সে সময় অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। পাটখড়িতে লাগা আগুন মুহূর্তেই সম্পূর্ণ কারখানায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পরে ভেতরে আমরা যারা ছিলাম, তারা নিরাপদে বেরিয়ে আসি। 
আরেক শ্রমিক তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের কারখানার পাশে একটি ওয়েল্ডিং করার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েল্ডিং করার সময় আগুনের ফুলকি আমাদের গোডাউনের পাটখড়িতে এসে পড়েছিল। সেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। 
এদিকে কারখানার আগুন নেভাতে গিয়ে মাহিম (৩৫), শরিফুল ইসলাম (৩০) ও মো. হিরণসহ কারখানার ৫ শ্রমিক এবং স্থানীয় ৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন। এখন আগুন কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে।
গতকাল সবচেয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাউছিয়া কাঁচাবাজারে অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। এতে শতাধিক দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট সাড়ে ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
গতকাল তিন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের প্রথমটি ঘটে নায়ারণগঞ্জের রূপগঞ্জের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা এলাকায় গাউছিয়া কাঁচাবাজারে। শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সেখানে আগুন লাগে। পরে সকাল সাড়ে ৬ টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।
ফায়ার সার্ভিসের ইনসিডেন্ট কমান্ডার ও উপপরিচালক ছালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আগুনের খবর পেয়ে কাঞ্চন, পূর্বাচল, আড়াইহাজার ও ডেমরার ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করে। প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই আমরা। তবে মধ্যরাতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটায় হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।’
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁচাবাজারের একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। এরপর তা দ্রুতই আশপাশে ছড়িয়ে যায়। কাঁচাবাজার হলেও এখানে ফার্মেসি, মুদি দোকান, গাড়ির পার্টস এমনকি কেমিক্যালের দোকানও রয়েছে। আগুনের খবর পেয়ে সড়কের সাথের দোকানিরা মালামাল বের করতে পারলেও ভেতরের দোকানগুলো সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তারা। 
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন বলেন, পুড়ে যাওয়া মার্কেটে এখন ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে তা এখনো জানা যায়নি। আমরা আগেই অনুমান করে কিছু বলতে পারছি না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত