আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে বক্তারা নদী জীবন্ত সত্তা, রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২৪, ২২:০৩

সাহস প্রতিবেদক
ছবি: শাহীনুর ইসলাম

ঢাকার চারপাশে ৮টি নদী থাকলেও এখন ৫টি চোখে পড়ে। এই নদীগুলো দূষণে প্রধান হচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। তবে দেশের সব নদীর সমস্যা এক নয়।

যেখানে ইন্ডাস্ট্রি হয়নি সেখানে নদী খনন করা দরকার। আগে নদীর ভেতরে চর পড়ত, এখন চরের ভেতর দিয়ে নদী বয়ে যায়। এই নদীগুলোর নাব্য রক্ষায় খনন করা দরকার। নদী জীবন্ত সত্তা, এগুলো রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, বলেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার।

জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রকৃতি ও জীবন ফাইন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ভাওয়াল বদরে আলম কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক অসীম বিভাকর, চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক নেক্সাস টেলিভিশনের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, এডিটর আমিন আল রশিদসহ অনেকে। 

অনুষ্ঠানে ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান কবির বিন আনোয়ার বলেন, ঢাকার নদীগুলো দূষণের প্রধান কারণ ঢাকা ওয়াসা। যদিও ওয়াসা এটা স্বীকার করে না। এটা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। অন্যদিকে ঢাকার তিনটি মেডিকেল ছাড়া অন্যগুলোর মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে না। যা ওয়াসার মাধ্যমে নদীগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রকৃতি ও জীবন ফাইন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর সভাপতিত্বে তিনি বলেন, দেশের ৫ থেকে ৭শ’ ব্যবসায়ীর কারণে ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। তারা মাটি, পানি, নদী ও প্রকৃতির ক্ষতি করছে। দখল ও দূষণ রোধ করে নদীর নাব্য ফিরিয়ে দেয়া দরকার। 

আলোচনা ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে কবির বিন আনোয়ার বলেন, নদী রক্ষায় এখন সেমিনার প্রোগ্রামের বাইরে যেতে হবে। হাজার হাজার মানুষ মিলে রাস্তায় নামতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। গুটিকয়েক ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষায় আমরা দেশের ক্ষতি হতে দিতে পারি না। ভবিষ্যতে আন্দোলনের প্রস্তুতির কথাও জানান তিনি। 

বেলার নির্বাহী পরিচালক প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নদী রক্ষায় ক্ষমতা দেখলে মনে হয়Ñ সরকারের ক্ষমতা কত কম। আমাদের প্রশাসন কত অসহায়। পরিবেশ রক্ষায় ৮৭ ট্যানারি মালিককে এখনো বশে আনা যাচ্ছে না। তাদের টাকা দেয়া হলো, ব্যবসা করবেন। তারা ইটিপি পেল, জমি পেল, তবু সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। নদী রক্ষার কথা বলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প করার সময় কোহেলিয়া নদীভরাট করে রাস্তা হলো।

তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত দেশের কোনো ডিসিকে বলা হয়নিÑ যদি নদীকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করো তবে শ্রেষ্ঠ ডিসির পদক দেয়া হবে। বলা হয়নি, কাজেই প্রাণ, প্রকৃতি, দর্শন মার খেয়ে যাচ্ছে। তবে আশার কথাÑ জেলায় জেলায় নদী রক্ষা কমিশন গড়ে উঠেছে। এখন আর ভালো নদী দেখা যায় না। তবে আমরা ভালো নদী চাই; এখান থেকে আমাদের উঠে আসতে হবে।

বিচারক অসীম কুমার বাবু বলেন, আমাদের সেই নদী নেই, যেমন নদী চাই। নদী যত নষ্ট ও দূষণ হচ্ছে, আমাদের সমাজ জীবন তত বেশি নষ্ট হচ্ছে।  পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর পলিথিন, তবুও আমরা ব্যবহার করি। আমাদের সচেতনভাবে এসব এড়িয়ে চলতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রকৃতি ও জীবন ফাইন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, আমরাই এই দুরবস্থার সৃষ্টি করেছি। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যবস্থাপনার অভাবে আমরা দেশটাকে রুগ্ণ করে ফেলেছি। আমাদের সবার হাত এক হলে দখল ও দূষণ থেকে নদী রক্ষা পাবে। 

২০০৬ সালে মোনাজাত উদ্দিন পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক আমিন আল রশিদ অনুষ্ঠানে বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রজেক্টের কারণে নদী নষ্ট হচ্ছে। নদী রক্ষায় তাদের বিশেষ দৃষ্টি নেই, সম্ভাব্যতা যাচাইপত্র নেই। প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় সম্পর্কে নেই তাদের কোনো ধারণা। নতুন নতুন প্রজেক্টে নদী দূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কাজে এটাকে রোধ করতে হবে বলেন তিনি। 

অনুষ্ঠানের শেষে আলোচনা ও রচনা প্রতিযোগিতায় তিন বিজয়ীকে পুরস্কার ও সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত