রাবির অবৈধ দোকান সরাতে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম

দোকানীদের নীরব প্রতিবাদ

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২২, ২০:৫১

রাবি প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের ভিতরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট ৭২ ঘন্টার মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে প্রশাসনের হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে দোকান ও হোটেল বন্ধ রেখেছেন সকল দোকানীরা। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দোকান ও হোটেল বন্ধের এমন চিত্র দেখা যায়।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অনেক দোকানপাট গড়ে উঠেছে। যার অধিকাংশ দোকানই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমোদনের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম মার্কেটের আশেপাশে, বিজ্ঞান ভবনগুলোর পাশে, মেয়েদের হলের সামনে, টুকিটাকি চত্বরে, ইসমাইল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবনের সামনে, মমতাজ উদ্দিন কলা ভবনের সামনে, শহীদুল্লাহ্ কলা ভবনের সামনে, ইবলিশ চত্ত্বরের পাশে, ডিনস কমপ্লেক্সের সামনে, কাজী নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়ামের সামনে, আমতলাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ৯৮টি অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, অবৈধভাবে অসংখ্য দোকানপাট গড়ে ওঠায় শিক্ষার পরিবেশকে যেমন ব্যহত করছে তেমনি পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ আগস্ট ক্যাম্পাসের অস্থায়ী দোকানপাট সরিয়ে ফেলার নোটিশ জারি করা হয়েছে। 

নোটিশে বলা হয়েছে, যারা রাবি কর্তৃপক্ষের অনুমতিবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দোকানপাট পরিচালনা করছেন তাদের বৃহস্পতিবারের মধ্যে নিজ দায়িত্বে দোকান সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হলো। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদের ব্যবস্থা করবে বলে জানানো হয়। 

দোকানীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমাদেরকে মাত্র ২-৩ দিন সময় দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের তো সব খাবার আইটেম, এ সময়ের মধ্যে আমরা এসব জিনিস কীভাবে কী করবো? প্রশ্ন রাখেন তারা। দোকানীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থায়ী শেডে নিয়ে যাবার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে আমাদের উঠিয়ে দিচ্ছে। আমরা বছরের পর বছর ধরে এখানে ব্যবসা করেছি, আমাদের সাথে কোন ধরনের আলোচনা না করেই এ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাই তারা দোকানপাট বন্ধ রেখে নিরব প্রতিবাদ পালন করছে।

আনোয়ার হোসেন নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি’র এক দোকান মালিক বলেন, আজকে বন্ধ রেখেছি স্যারের (রেজিস্ট্রার) কাছে যাওয়ার জন্য। আমরা গরীব মানুষ আমরা কী করে খাবো। কাকে দোকান দিবে আর কাকে দিবে না সেটা প্রশাসন জানে।  অন্য এক হোটেল মালিক বলেন, আমরা অনেকদিন যাবত এখানে ব্যবসা করছি। এভাবে আমাদেরকে তুলে দিলে আমরা না খেয়ে মরবো। আমাদের পরিবার আছে। আমাদের স্থায়ীকরণ করে হলেও ব্যবসার অনুমতি দেওয়া হোক ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাম্পাসের দোকান দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা স্টেট দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. জাহিদ আলি বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে ব্যাঙের ছাতার মতো দোকান গড়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞান আহরণ ও গবেষণা করার জায়গা। অতিরিক্ত দোকানপাটের ফলে পলিথিন, ময়লা আবর্জনা ও দোকানের সামনে বেঞ্চের সারি যা ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট করছে। এক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে ছাত্র উপদেষ্টাকে আহ্বায়ক ও আমাকে সদস্য সচিব করে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমরা ক্যাম্পাসের অতিরিক্ত দোকানপাট সরিয়ে বিভিন্ন পয়েন্ট দোকান রাখার পরিকল্পনা প্রশাসনের।

ক্যাম্পাস থেকে অবৈধ দোকান সরিয়ে ফেলার জন্য মাইকিং করা হয়েছে এবং রোববার (২৮ আগস্ট) অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান। অবৈধ দোকান উচ্ছেদ কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম. তারে নূর বলেন, অতিরিক্ত দোকানপাটের ফলে ক্যাম্পাসে এলোমেলো পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা চেষ্টা করছি একটি গঠনের মধ্যে নিয়ে আসতে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে পয়েন্টে পয়েন্ট স্টল নির্মাণ করা হবে এবং স্টলগুলোকে একই আইটিমে নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত