২০০ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে রামসিদ্ধিবাসী

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২২, ১৭:০০

নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠা একটি গ্রাম ‘রামসিদ্ধি’। পাখির ডাকে ভোরেই ঘুম ভাঙ্গে গ্রামবাসীর। গ্রামটি ‘পাখি গ্রাম’ হিসেবেও পরিচিত। পাখির ডাকে ঘুম ভাঙ্গার পর গ্রামবাসী হয়ে পড়েন কর্মব্যস্ত। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে কাঠের নৌকা তৈরি ও বেচাকেনার ধুম পড়ে যায় গ্রামটিতে।

গ্রামবাসী জানান, বাবা-দাদার হাত ধরে বংশ পরম্পরায় ২০০ বছরের নৌকা তৈরির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তারা। পাখি গ্রামের পাশাপাশি ‘নৌকার গ্রাম’ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে রামসিদ্ধি। এখানে যেমন নৌকা তৈরি হয়, আবার খুচরা ও পাইকারি দরেও বিক্রি হয়। প্রতি বুধবার গ্রামটিতে নৌকার হাট বসে। ভোর থেকে শুরু করে সকাল ১০টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। প্রতি হাটে গড়ে ১০০টি নৌকা বেচাকেনা হয়। ধরণ ভেদে প্রতিটি নৌকা চার থেকে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া বিভিন্ন নকশাখচিত ও উন্নতমানের কাঠের তৈরি স্পেশাল নৌকা বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। নড়াইলসহ যশোর ও খুলনা এবং পাশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসেন নৌকা কিনতে।

রামসিদ্ধি গ্রামের নৌকা কারিগর বিএ ডিগ্রিধারী প্রসেনজিত বিশ্বাস বলেন, বাবা-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে শিক্ষিত হয়েও এ পেশা বেছে নিয়েছি। এখানে ১৫টি পরিবার নৌকা তৈরির সঙ্গে জড়িত। এ পেশাকে ঘিরে প্রায় একশ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। জনপ্রতি কারিগরকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হয়। একটি নৌকা তৈরি করতে চার থেকে পাঁচদিন সময় লাগে। প্রতি বুধবার নৌকার হাটকে কেন্দ্র করে অস্থায়ী খাবার দোকানও বসে এখানে। বংশ পরম্পরায় ২০০ বছরের নৌকা তৈরির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন রামসিদ্ধি গ্রামবাসী। নৌকা তৈরির ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মেহগনি ও উড়িআম কাঠ ব্যবহৃত হয়। তবে এবার বর্ষা কম হওয়ায় বেচাকেনা একটু কমেছে। আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাসে বেশি বেচাকেনা হলেও বছরে প্রায় ছয় মাস ধরে নৌকার চাহিদা থাকে। বিলের চেয়ে মাছের ঘেরগুলোতে নৌকার চাহিদা বেশি। তবে এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি।

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বুড়িখালি গ্রামের পাইকারি নৌকা ব্যবসায়ী সৈয়দ আলী বলেন, রামসিদ্ধির প্রতি হাট থেকে আট-দশটি নৌকা কিনে বিভিন্ন হাটে বিক্রি করি। প্রতিটি নৌকায় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা লাভ হয়। ১০ বছর ধরে নৌকা কেনাবেচা করছি। যশোরের বাঘারপাড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে রামসিদ্ধি থেকে নৌকা কিনে অন্য হাটে বিক্রি করি। ভালো লাভ হচ্ছে।

খুচরা ক্রেতা অহিদ শেখ জানান, আগের থেকে নৌকার দাম অনেক বেশি। যে নৌকা আগে তিন থেকে চার হাজার টাকায় কেনা যেত, সেটি এখন প্রায় ছয় হাজার টাকা লাগছে। প্রায় তিন বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নড়াইলের উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সোলায়মান হোসেন বলেন, রামসিদ্ধি নৌকার গ্রামটি অনেক সুন্দর। এখানকার কারিগরেরা ভালো নৌকা তৈরি করেন। এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে তাদের সহযোগিতা করা হবে।

সাহস২৪.কম/এএম/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত