‘চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেই বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে’

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২২, ২২:১৩

সাহস ডেস্ক

আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমরা এটা করেছি। বিদেশি সাহায্যে নয় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু হবে, যেটা আজ করা সম্ভব হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, আমরা ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করব।’ বুধবার (১ জুন) বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় একথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যখন দুর্নীতির প্রশ্ন তোলে তখন তিনি সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। যা তারা প্রমাণ করতে পারেনি এবং যেটি কানাডা’র আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে- এই সংক্রান্ত সমস্ত অভিযোগ ভুয়া এবং মিথ্যা। কিন্তু, সে সময় একটি প্রচণ্ড চাপের মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে এবং দেশের ভাবমূর্তি নিয়েও নানা ধরনের কথাবার্তা দেশের অনেকে বলেছে।’ বাংলাদেশ সম্পর্কে কেউ কোনো বিরূপ মন্তব্য করলে তার নিজের কষ্ট হয় সেজন্যই বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগটিকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই কষ্ট লাগাটা স্বাভাবিক কারণ এদেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতা তার সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।’

সন্তান হিসেবে বাবাকে তারা খুব একটা কাছে পাননি। তাই, এই স্বাধীন দেশে আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে তখন প্রধান কাজই হচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করা। তিনি বলেন, নিজের ভাগ্য গড়তে নয় দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তেই তার এই ক্ষমতায় আসা। কিন্তু ‘অপবাদ’ দিতে চেয়েছিল আর সততার শক্তি ছিল বলেই এই চ্যালেঞ্জ নিতে পেরেছিলেন তিনি। ‘যাতে দেশের মানুষের অফুরন্ত সহযোগিতা পেয়েছেন তাই আজকে পদ্মা সেতুটা আমরা করতে পেরেছি’, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে বাংলাদেশ পরনির্ভরশীল নয়, নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে পারে। আজকে দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের শতকরা ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে।’

এ সময় পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরুতে একটি ভূয়া দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এর অর্থায়ন বন্ধে বিশ্ব ব্যাংককের পদক্ষেপের পেছনে ঘরের শত্রু ‘বিভীষণকে’ দায়ী করেন শেখ হাসিনা, ‘বিশ্ব ব্যাংককে দোষ দেব না, কারণ ঘরের শত্রু বিভীষণই হয়। আপনারা জানেন যে ড. ইউনুসই এই কাণ্ডটা ঘটিয়েছিলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদটার জন্য। যে পদ তিনি বয়সের কারণে হারিয়েছিলেন। পরে তিনি সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরসহ সকলের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করেও সেখানে পরাজিত হন।’

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ব্যাংকের আইন অনুযায়ী তিনি সে ব্যাংকের এমডি থাকতে না পারাতেই প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্র ধরে হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে অর্থাৎ আমেরিকার সরকারকে দিয়ে সে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে বাধ্য করে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিতে। সুপরিকল্পিতভাবেই তার সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘এই ব-দ্বীপ অঞ্চলকে জলবায়ুর অভিঘাত থেকে মুক্ত রেখে আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত বিনির্মাণে তাঁর সরকার শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি, যেসব এলাকা অবহেলিত ছিল সেসব এলাকায় নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেগুলোকে উন্নত করে চলেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই তার সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার সরকার তৃণমূল পর্যায় থেকে মানুষের উন্নয়ন করেছে বলেই দেশের সার্বিক উন্নয়নটা করা সম্ভবপর হয়েছে এবং দারিদ্রের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই তারা একে একে সব জায়গায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে এবং উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করে এর সুফল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আজকে অন্তত এটুকু বলতে পারি যে বাংলাদেশটা বদলে গেছে। দেশে আজ মঙ্গা নেই দু’বেলা খাবারের নিশ্চয়তা বিধানের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টি নিশ্চয়তা বিধানে তার সরকার কাজ করছে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি করে চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বৈঠকে উপদেষ্টাদের দলের ‘থিংক ট্যাংক’ আখ্যায়িত করে দলের তৃণমূল থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য সম্মেলন করার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও জানান। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ জাতীয় সম্মেলনও আয়োজন সম্ভব বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত