রিফাত হত্যা মামলা

উচ্চ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২২, ২১:০৯

সাহস ডেস্ক

বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছেন মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। কয়েক দিনের মধ্যে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে বলে মিন্নির আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় মিন্নির পক্ষে এই জামিন আবেদন করা হয়। তার আইনজীবী শাহীনুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, শুনানির জন্য আদালতে ‘মেনশন স্লিপ’ জমা দিয়েছেন তিনি। যখন সিরিয়ালে আসবে, এ বিষয়ে শুনানি করার সুযোগ হবে বলেও জানান তিনি।

এ হত্যা মামলার রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী মিন্নিসহ ছয় আসামির ডেথ রেফারেন্সের জন্য নথি আসে উচ্চ আদালতে। এরপর একই বছরের ৬ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আদালতে আপিল করেন মিন্নি। সে সময় হাই কোর্ট তার আপিল গ্রহণ করে। তবে বিচারিক আদালতের রায়ে ৫০ হাজার টাকার অর্থদণ্ড আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করে। বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে ২০১৯ সালের ২৬ জুন দুপুরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। ওই ঘটনার একটি রোমহর্ষক ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হলে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা। সেই ভিডিওতে দেখায়, রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছে দুই যুবক। তার স্ত্রী মিন্নি স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। ওই ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় রিফাতের স্ত্রী বরগুনার সরকারি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্রী মিন্নিকে ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়।

রিফাত হত্যা ঘটনায় বরগুনা শহরে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্মের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এইসব কিশোর তরুণের গ্যাং করার পেছনে রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষকতার খবর গণমাধ্যমে এলে হত্যার কারণ নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলতে থাকে। মিন্নি সে সময় হামলাকারী সবাইকে চিনতে না পারার কথা জানালেও নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজীর নাম বলেন। ২ জুলাই মামলার প্রধান সন্দেহভাজন সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এদিকে মিন্নির শ্বশুরই পরে হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুললে আলোচনা নতুন মোড় নেয়। ওই বছরের ১৬ জুলাই বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মিন্নিকে। সেদিন রাতেই তাকে রিফাত হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পরদিন আদালতে হাজির করা হলে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান বিচারক। রিমান্ডের তৃতীয় দিনেই আদালতে হাজির করা হয় তাকে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, হাকিমের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ওই তরুণী। মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর অভিযোগ করেন, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও দাবি করেন তিনি। পরে ২৯ অগাস্ট হাই কোর্ট মিন্নির জামিন মঞ্জুর করে।

হত্যাকাণ্ডের দুই মাসের মাথায় বরগুনার আদালতে মিন্নিসহ ২৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির। ওই অভিযোগপত্রের এক অংশে মোট ১০ জনকে আসামি করা হয়। অন্য অংশে রাখা হয় অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের নাম। ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জনের বিচারের রায় ঘোষণা করেন। রায়ে রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়, বাকি চার আসামি বেকসুর খালাস পান। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্য পাঁচ আসামি হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি (২৩), আল কাইউম ওরফে রাব্বি আঁকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান ওরফে টিকটক হৃদয় (২২) ও মো. হাসান (১৯)। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ছয় আসামির সবাইকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

সাহস২৪.কম/এসটি/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত