বাঁধ মেরামত: জনগণের তাড়া খেয়ে ট্রলার নিয়ে পালালেন সাংসদ

প্রকাশ : ০১ জুন ২০২১, ১৭:২৩

সাহস ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে খুলনার কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে বিক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের তোপের মুখে পড়েছেন খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামতে করছিলেন কয়েক শ মানুষ।

মঙ্গলবার (১ জুন) সকালে উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় একটি ট্রলার নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন সাংসদ মো. আক্তারুজ্জামান। বাঁধে কাজ করা উত্তেজিত জনতা সাংসদকে দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কাঁদা ছুড়ে মারতে থাকেন ট্রলারের দিকে। বাধ্য হয়ে সেখান থেকে ট্রলার নিয়ে চলে যান সাংসদ।

আকস্মিক পরিস্থিতিতে সংসদ সদস্য ট্রলার নিয়ে ফিরে গেলেও পরে তিনি ফিরে এসে দশহালিয়াবাসীর সঙ্গে বাঁধ মেরামত কাজে যোগ দেন।

স্থানীয়রা জানান, ইয়াসের পর ওই এলাকার বাঁধ ভেঙে মহারাজপুর ও পাশের বাগালী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে সাগরের লোনাপানিতে। ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে গত বুধবার ভেঙে যাওয়া ওই বাঁধ এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে চার দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করছেন এলাকার মানুষ।

স্থানীয়রা বলেন, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংসদ একটি ট্রলারে করে ওই ভাঙা বাঁধের স্থানে যান। যখনই তার ট্রলারটি ঘাটে ভিড়তে যায়, তখনই কাঁদা ছুড়তে শুরু করেন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা মানুষগুলো। বারবার মাইকে ঘোষণা করেও তাদের নিবৃত্ত করা যায়নি। প্রায় ১০ মিনিট বৃষ্টির মতো কাঁদা ছুড়ে মারার একপর্যায়ে ট্রলারটি পিছু হটে নদীর অপর পাড়ে চলে যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর কাজ করতে থাকা মানুষকে শান্ত করা হলে আবার সাংসদ সেই ভাঙা বাঁধের কাছে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, মানুষের মধ্যে ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। তাদের পেটে খাবার নেই। ঘরে পানি উঠে গেছে। যন্ত্রণা থাকলে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করবেই। আমি তাদের বুঝিয়েছি, করোনার কারণে গত এক বছর কোনো ধরনের উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হয়নি। এসব কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে হয়। প্রকল্প অনুমোদন পেলে এই কষ্ট দূর হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, তাদের ওই দাবি যৌক্তিক। বারবার বাঁধ ভাঙে আর বারবার স্বেচ্ছাশ্রমে তাদের কাজ করতে হয়। এ কারণে সাংসদের ওপর তাদের ক্ষোভও বেশি। পরে ওই এলাকায় নেমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধের কাজ করা হয়েছে। আমি পালিয়ে গেছি কথাটা একদমই ঠিক না। আমি তাদের সঙ্গে থেকে কাজ করেছি।

এদিকে সাংসদ মাইকে স্থায়ী বাঁধ না করতে পারায় নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধ মেরামতের কাজে লেগে পড়েন। কিন্তু সেটিও পছন্দ হয়নি কাজ করতে থাকা সাধারণ মানুষের। সাংসদ কাজে নামার পর অধিকাংশ মানুষ কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যান।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গেই তারা কাজ করছিলেন, এমন সময় সাংসদ এসেছেন শুনেই দেখতে পান সাধারণ মানুষ কাঁদা ছুড়ে মারছে। প্রায় এক ঘণ্টা পর মানুষ একটু শান্ত হলে সাংসদ আবার বাঁধের কাছে আসে। তবে এরপর বাঁধের কাজ আর হয়নি। এ কারণে আজ বাঁধ পুরোপুরি মেরামত করা যায়নি। তবে ওই ঘটনা না ঘটলে বাঁধ পুরোপুরি মেরামত হয়ে যেত।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত