মোদির আগমনের প্রতিবাদ জানানো ন্যায়সঙ্গত অধিকার: প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২১, ১৮:৩৫

সাহস ডেস্ক

"একটি ভয়াবহ দুঃসময়ের মধ্যে আমরা আছি। শুধুমাত্র সরকারের সমালোচনা করে লেখার কারণে লেখক মোশতাককে কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। কার্টুন আঁকার কারণে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছে কার্টুনিস্ট কিশোরকে। শ্রমিক নেতা রুহুলসহ এখনো অনেকে কারাবন্দী। মানুষের সমস্ত ধরনের কথার বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী শাসকগোষ্ঠী ঢাক ঢোল পিটিয়ে পালন করছে। অথচ জনগণের স্বাধীনতা নেই।"

বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বেলা ১২ টায় প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ সংবাদ সম্মেলনে এই বক্তব্য দেন। 

ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তারা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিবেকবান মানুষ ও রাজনৈতিক দলসমূহ। প্রতিবাদ ঠেকাতে ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলসমূহকে কর্মসূচি না করার আহ্বান জানিয়েছেন একইসাথে অনুরোধ উপেক্ষা করে যারা কর্মসূচি পালন করবে তাদের রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করে কঠোর হস্তে দমন করার হুশিয়ারী দিয়েছেন।

তারা বলেন, ভারপ্রাপ্ত ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। স্পষ্ট করে বলতে চাই, দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়ে জনগণের কন্ঠকে স্তব্ধ করা যাবে না। বাংলাদেশকে পুলিশী রাষ্ট্র বানানোর আয়োজন ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। মতপ্রকাশের অধিকার, মিছিল-সমাবেশ করার অধিকার আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কোনো অজুহাতেই সেই অধিকার খর্ব করা চলবে না। ফলে ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনারের জনগণের অধিকার বিরোধী নির্দেশনা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।

মোদির আগমনের প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলেন, মোদির আগমনের প্রতিবাদ জানানো ন্যায়সঙ্গত অধিকার। বরং ভারতের দাঙ্গাবাজ, সাম্প্রদায়িক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমন্ত্রণ জানানো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী। এই নরেন্দ্র মোদির হাতে এখনো গুজরাটের হাজার হাজার মানুষের রক্তের দাগ লেগে আছে। গতবছর দিল্লী কিলিংয়ের ঘটনা মোদি সরকারের নির্দেশে ঘটেছে। মানবতাবিরোধী নাগরিকত্ব আইন করে আসাম ও পশ্চিম বাঙলা থেকে কয়েক লক্ষ বাঙালী জনগণকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার আয়োজন করেছে মোদি সরকার। প্রবলভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছে। ভারতের জনগণের ন্যায়সঙ্গত সমস্ত আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করছে। সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনে আমরা মোদি সরকারের ফ্যাস্টিট  রুপ দেখেছি।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে তারা বলেন, আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠী কথায় কথায় ভারতকে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করে। অথচ বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে প্রায়শই ভারতের বিএসএফ গুলি করে বাংলাদেশের জনগণকে হত্যা করছে। কিন্তু এসব হত্যার কোনো বিচার হচ্ছে না। তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশ পাই নি। তিস্তা চুক্তির কথা থাকলেও দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হলেও  তা বাস্তবায়িত হয় নি। নদী,বন্দর,সুন্দরবন সমস্ত কিছু ভারতীয় আগ্রাসনের শিকার। এমনকি বাংলাদেশের রাজনীতির অভ্যন্তরীণ ব্যাপারেও হস্তক্ষেপ করছে। ফলে, মুক্তিযুদ্ধে গণমানুষের যে আকাঙ্খা দাঙ্গাবাজ, সাম্প্রদায়িক মোদির অংশগ্রহণ গৌরবোজ্জ্বল সে ইতিহাসের সাথে সাংঘর্ষিক। আমরা তা হতে দিতে পারি না।

আমরা আর একটি কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ভারতের শাসকগোষ্ঠীর বিরোধীতা করা, আগ্রাসনের বিরোধীতা করা মানে ভারতের জনগণের সাথে বিরোধীতা নয়। ভারতের জনগণ আমাদের বন্ধু। ভারতের জনগণ মোদি সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আমরাও আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠীর জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। ফলে, ভারতের জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে আমাদের নিরঙ্কুশ সমর্থন থাকবে।

আওয়ামী সরকারের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আহবান জানায় তারা। 

প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহের কর্মসূচিঃ
১. ১৯ মার্চ বিকাল ৩ টায় রাজু ভাস্কর্যে মোদি বিরোধী সমাবেশ ও মিছিল।
২. ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় মশাল মিছিল।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত