দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের স্কোর নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই: টিআইবি

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২১, ০৩:০৩

সাহস ডেস্ক

বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) প্রকাশিত ২০২০ সালের দুর্নীতির ধারণা সূচকে (সিপিআই) বাংলাদেশের স্কোর (২৬) অপরিবর্তিত থাকলেও এ নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

গতবারের মতোই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর ও অবস্থানে থাকায় দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা এখনো উদ্বেগজনক উল্লেখ করে টিআইবি বলছে, কোভিড-১৯ অতিমারির প্রেক্ষাপটে দেশে দুর্নীতির ভয়াবহতা ও বিস্তৃতি প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শুধুই প্রতিশ্রুতি’ কিংবা ‘অস্বীকারের সংস্কৃতি’ আর ‘স্বল্প পরিসরের অভিযানের’ বাইরে গিয়ে বিস্তৃত, কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার সকালে সিপিআই ২০২০ এর বৈশ্বিক প্রকাশ উপলক্ষে অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সূচকে বাংলাদেশের স্কোর তৃতীয়বারের মতো অপরিবর্তিত রয়েছে, আপাতত এটি স্বস্তিকর মনে হলেও নিম্নক্রম অনুসারে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে থাকা সোমালিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম অবস্থানে থাকা আফগানিস্তানের মতো দেশের স্কোরও তিন পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে; তাই বাংলাদেশের অপরিবর্তিত স্কোর নিয়ে আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই।

তিনি জানান, ২০২০ সালে ০-১০০ স্কেলে গত দুই বছরের মতোই ২৬ স্কোর পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৮০টি দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন থেকে গণনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের তুলনায় দুই ধাপ অবনতি হয়ে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১২তম। তবে সর্বোচ্চ থেকে গণনা অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান অপরিবর্তিত ১৪৬তম। এবার একই স্কোর পেয়ে নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে ১২তম অবস্থানে আছে উজবেকিস্তান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক।

ড. জামান বলেন, বাংলাদেশের স্কোর অপরিবর্তিত থাকলেও তা বৈশ্বিক গড় ৪৩ এর চেয়ে অনেক কম এবং দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখনও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন আর এশিয়া প্যাসিফিকের ৩১টি দেশের মধ্যে অবস্থান চতুর্থ সর্বনিম্ন, যা বিব্রতকর ও হতাশাব্যাঞ্জক।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের মাধ্যমে যদি সুশাসন নিশ্চিত করা যেত এবং ক্ষেত্রবিশেষে দুর্নীতির ঘটনা অস্বীকার কিংবা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা না করে অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে আইনের কঠোর প্রয়োগ হত তাহলে আমাদের স্কোর ও অবস্থানে আরও উন্নতি হতে পারতো।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, কোভিড-১৯ অতিমারির সংকটময় মুহূর্তে দেশের স্বাস্থ্যখাতে প্রকটভাবে প্রকাশিত দুর্নীতিও আমাদের অবস্থানের আরও উন্নতিতে অন্তরায় হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহশীলতা’র ঘোষণা সর্বোচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক স্বদিচ্ছার প্রকাশ হলেও, এর প্রয়োগে ঘাটতি আছে এবং বাস্তবে তা ঘোষণাতেই আটকে আছে।

বাংলাদেশের স্কোর আরও ভালো আশা করা স্বাভাবিক ছিল উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অপরাধের সাথে রাজনৈতিক যোগসূত্রতা, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের অবস্থান এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়া, আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ, জালিয়াতি এবং সরকারি কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হয়নি।

আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মঞ্জুর-ই-আলমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিপিআই সম্পর্কে যথাযথ ধারণার অভাবে অনেক সময় ‘বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত বা বাংলাদেশের অধিবাসীরা সবাই দুর্নীতি করে’- এ ধরনের ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। যদিও দুর্নীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ-সর্বোপরি, টেকসই উন্নয়ন অর্জনের পথে কঠিনতম অন্তরায়, তবে বাস্তবে দেশের আপামর জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়। তারা ক্ষমতাবানদের দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র।  

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের সিপিআই অনুযায়ী ৮৮ স্কোর পেয়ে এবারও যৌথভাবে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ডেনমার্ক ও নিউজিল্যান্ড। ৮৫ স্কোর পেয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড এবং ৮৪ স্কোর পেয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে নরওয়ে।

এছাড়া এবারের সিপিআই অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৬৮ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ ভুটান এবং এ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মালদ্বীপ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত