আমির হতে চাইনি, সিনিয়ররা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন: বাবুনগরী

প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২০, ১৬:২৯

সাহস ডেস্ক

হেফাজতে ইসলামের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, আমি আমির হতে চাইনি, সিনিয়ররা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি আমার দায়িত্ব অবশ্যই নিষ্ঠার সাথে পালন করার চেষ্টা করবো।

রবিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ১৫১ সদস্যর কমিটি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি। এতে, মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির ঘোষণা করা হয়েছে। আর সংগঠনটির নতুন মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন বিগত কমিটির ঢাকার আমির মাওলানা নূর হোসেন কাসেমী।

বাবুনগরী বলেন, যারা ইসলাম বিরোধী, যারা কাদিয়ানী তাদের বিরুদ্ধে হেফাজতের যে আন্দোলন- সেই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ইসলামের বিরোধীতাকারীদের যেকোনভাবেই রুখে দেয়া হবে। একইসাথে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে সবাইকে পাশে থাকার আহ্বানও জানান তিনি।

সকাল সাড়ে ১০টা ৩৫ মিনিটে হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় এ সম্মেলন শুরু হয়। শেষ হয় দুপুর সাড়ে ৩টায়। দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার (বেফাক) মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বাবুনগরীর নাম ঘোষণা করেন।

মাদ্রাসা শিক্ষা ভবনের তৃতীয় তলায় সারা দেশ থেকে সংগঠনটির প্রায় ৪০০ প্রতিনিধি এতে অংশ নেন। সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আসা ৪০০ কাউন্সিলর আমিরসহ হেফাজতে ইসলামের অন্যান্য পদে নেতা নির্বাচন করেন।

হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জী সকালে বলেছিলেন, আজকের সম্মেলনে আমিরসহ দলের অন্যান্য পদে নেতা নির্বাচন করবেন সারা দেশ থেকে আসা ৪০০ কাউন্সিলর। প্রয়াত আমির আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী ও তার অনুসারীদের সম্মেলনে কেন দেখা যাচ্ছে না, এ প্রশ্নের জবাবে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফয়জুল্লাহ এই কাউন্সিলের ব্যাপারে কিছু জানেন না৷ তিনি বলেন, ‘আমাকে কিছুই জানানো হয়নি৷ দাওয়াতও দেয়া হয়নি৷ কোনো কাউন্সিল হবে বলে আমার জানা নেই৷ যদি কেউ কাউন্সিল ডেকে থাকেন তার কোনো বৈধতা নেই৷

তিনি আরো বলেন, যিনি কাউন্সিল ডেকেছেন তারই বৈধতা নাই৷ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী মাওলানা আহমদ শফী বেঁচে থাকতেই পদত্যাগ করেছেন৷ তিনি আবার কাউন্সিল ডাকেন কীভাবে?

মঈনুদ্দীন রুহি হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব৷ তিনিও দাওয়াত পাননি৷ মাওলানা শফীর ছেলে আনাস মদানি প্রচার সম্পাদক৷ তাকেও কিছু জানানো হয়নি৷ এরকম আরো অনেকে যারা জুনাইদ বাবুনগরীবিরোধী, তারা অনেকেই দাওয়াত পাননি৷ কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫১ জন থাকলেও দাওয়াত দেয়া হয়েছে ৫০০ জনকে৷

এদিকে, নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য প্রতিনিধি সম্মেলন আহবানকে কেন্দ্র করে আবারও অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে হেফাজতে ইসলামে। সংগঠনটির প্রয়াত আমীর আহমদ শফীর অনুসারীরা এই সম্মেলনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, হেফাজতের নেতৃত্ব দ্বিখণ্ডিত ও কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা। অন্যদিকে, সম্মেলন আয়োজকদের দাবি, প্রতিনিধি সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা আরও ঐক্যবদ্ধ হবে।

গত শনিবার সম্মেলনের বিরোধিতা করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলন করেছে শফিপন্থীরা। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে দ্বিখণ্ডিত ও কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র চলছে। কিছু চরমপন্থী ও উগ্রবাদী এর নেতৃত্বে রয়েছে। তারা আলাম্মা শাহ আহমদ শফিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিচার করতে হবে। এজন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আল্লামা আহমদ শফীর সন্তান মাওলানা আনাস মাদানীসহ শফিপন্থী নেতারা। তারা বলেন, চরমপন্থীরা এখন হেফাজতে ইসলাম দখলের চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই চেষ্টা প্রতিহত করা হবে। একতরফা কাউন্সিলের মাধ্যেম হেফাজতের কমিটি গঠনের চেষ্টা চলছে। এটা মানা হবে না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত