চুরির উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদার উপর হামলা

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২২:৩০

সাহস ডেস্ক

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা ওমর আলীর ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বিকার করেছেন হামলাকারীরা এবং ‘চুরির অভিপ্রায়’ থেকেই নৃশংস এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১৩।

শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় র‌্যাব-১৩ এর সদর দফতরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত মূল আসামি আসাদুলের জবানবন্দির পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা জানান র‌্যাব-১৩ এর অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস।

সংবাদ সম্মেলনে রেজা আহমেদ ফেরদৌস বলেন, ‘এই ঘটনায় শুরু থেকেই ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে র‌্যাব। একপর্যায়ে আসাদুলকে শুক্রবার ভোরে হিলির কালীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দিনভর অভিযান চালিয়ে নবিরুল ও সান্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে তাঁরা চুরির উদ্দেশ্যে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাসায় যান বলে জানিয়েছেন। এদের মধ্যে নবিরুল ইউএনও ওয়াহিদা খানমের মাথায় আঘাত করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে।’

আসামিরা হলেন- দিনাজপুর ঘোড়াঘাটের সাগরপুর এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে আসাদুল হক (৩৫) উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।, নবীরুল ইসলাম (৩৪) মৃত ফরাজ উদ্দিনের ছেলে ও সান্টু (২৮) ঘোড়াঘাট থানার চক বাবুনিয়া বিশ্বনাথপুর এলাকার খোকা চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে।

র‌্যাব-১৩ অধিনায়ক বলেন, ‘আসাদুল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন নবীরুল এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। তাঁকে ঘোড়াঘাট উপজেলা সংলগ্ন চক বামনদিয়া বিশ্বনাথপুর গ্রাম থেকে আটক করা হয়। নবীরুল ও সান্টু কুমার দুজনেই পেশায় রংমিস্ত্রি। আসাদুল ও নবীরুলের বিরুদ্ধে ঘোড়াঘাট থানায় চুরি মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে লাল টিশার্ট পড়ে হালকা-পাতলা গড়নের যে ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছিল তিনিই নবীরুল। জিজ্ঞাসাবাদে নবীরুল এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।’

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীরের বিষয়ে র‌্যাব অধিনায়ক বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে আনা হয়েছিল। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বাড়ি গেছেন। তবে প্রয়োজনে আবারও যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তাঁরা ইউএনওর বাসায় হামলার ঘটনার ছায়া তদন্ত করছেন। এখানে কারও রাজনৈতিক পরিচয় তাঁদের বিবেচনার বিষয় নয়।’

হামলার কারণ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-১৩ অধিনায়ক বলেন, ‘আমাদের সফলতা হলো প্রধান আসামিকে আটক করতে পেরেছি। সন্দেহজনকভাবে তাঁদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তাঁরা জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। আসাদুল দাবি করেছে চুরির অভিপ্রায় থেকে ঘটেছে। প্রকৃত ঘটনা আরও থাকাতে পারে, এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়, সময়সাপেক্ষ। তবে আসাদুলের দাবি অনুযায়ী মূল পরিকল্পনা নবীরুল।’

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে দুর্বৃত্তরা ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর কেটে দুর্বৃত্তরা তাঁর শয়নকক্ষে ঢুকে পড়েন। পরে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁরা ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা ওমর আলীকে কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। এর আগে দুর্বৃত্তরা ওই বাসভবনের নিরাপত্তা প্রহরীকে বেঁধে প্রহরীকক্ষে তালা দিয়ে আটকে রাখেন।

পরে সকালে আহত বাবা-মেয়েকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে ইউএনও ওয়াহিদাকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়। তিনি এখন ঢাকার আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর বাবা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত